× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আজকের দিনে হানাদারমুক্ত হয় ঠাকুরগাঁও

ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা

প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১৬:০৬ পিএম

আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১৬:২১ পিএম

টাংগন নদীর তীরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাস্কর্য অপরাজেয় ৭১। ছবি : প্রবা

টাংগন নদীর তীরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাস্কর্য অপরাজেয় ৭১। ছবি : প্রবা

আজ শনিবার, ৩ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদারমুক্ত হয়েছিল ঠাকুরগাঁও মহকুমা। পাকিস্তানি সেনাদের পরাজিত করে বিজয়ের হাসি হাসে এই অঞ্চলের মুক্তিবাহিনী। কিন্তু নয় মাসের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে শহীদ হন ঠাকুরগাঁও জেলার ২৫ হাজার যোদ্ধা। একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর তার ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিকামী বাঙালিরা। গড়ে তোলা হয় সংগ্রাম কমিটি, সঙ্গে সৃষ্টি হয় দুর্বার প্রতিরোধ।

৫১ বছর পূর্বে ফিরে গিয়ে এভাবেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করলেন ঠাকুরগাঁও জেলার সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল মান্নান।

শনিবার (৩ ডিসেম্বর) ঠাকুরগাঁও টাংগন নদীর তীরে আর্ট গ্যালারিতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাস্কর্য অপরাজেয় ৭১’এ শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন তিনি। পাশে চায়ের দোকানে বসে সকাল ১০টার দিকে কথা হয় তার সঙ্গে। 

একাত্তরের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাক বাহিনী একাত্তরের ১৫ এপ্রিল ঠাকুরগাঁও প্রবেশ করে। সঙ্গে ছিল ১০টি ট্রাক ও ৮টি জিপভর্তি গোলাবারুদ। এর পর জনপদটি তাদের দখলে চলে যায়। মুহুর্মুহু গোলাবর্ষণ করতে থাকে তারা। শুরু হয় হত্যা, নির্যাতন, লুটপাট ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ। হানাদার বাহিনী ও দোসররা সবচেয়ে বড় গণহত্যা চালায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জাঠিভাঙ্গা গ্রামে। স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় ৪-৫টি গ্রামের প্রায় ৫ হাজার নিরীহ মানুষকে ধরে নিয়ে যায় হানাদার বাহিনী। পরে সবার ওপর গণ গুলি চালায়। পরে তাদের মরদেহ মাটিতে চাপা দেয়। এর মধ্যে অনেকেই জীবিত ছিলেন। হানাদাররা চলে যাওয়ার পর জীবিত চারজন মাটি ঠেলে উঠে আসেন।’

জেলার অন্যন্য এলাকায় পাকিস্তান সেনাদের নির্মমতার বর্ণনায় মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নানের ভাষ্য, ‘জেলার শুকানপুকুর এলাকার কয়েক হাজার মানুষ ভারত অভিমুখে যাত্রা করে। পথে পাথরাজ নদী এলাকায় তাদের আটক করে হানাদার বাহিনী। তাদের অর্থকড়ি লুট করে হত্যার পর তাদের মরদেহ নদীতে ফেলে দেয়া হয়। রামনাথ এলাকায়ও চালানো হয় গণহত্যা।

‘এর পর পীরগঞ্জ থানার আওয়ামী লীগ নেতা ডা. সুজাউদ্দীন, বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা, আতাউর রহমান, আব্দুল জব্বার ও মোজাফ্ফর আলীসহ ৭ জন রাজনৈতিক নেতাকে ধরে নিয়ে যায় পাক বাহিনী। তাদেরকে পীরগঞ্জ-ঠাকুরগাঁও পাকা সড়কের তেঁতুলতলা নামক আখফার্মে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। বিভিন্ন সময়ে এ থানার প্রায় ৩ হাজার নিরীহ মানুষকে স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় ক্যাম্পে ধরে নিয়ে হত্যা করে জগথা রাইস মিল ও সরকারি কলেজের পাশে মাটিচাপা দেয়া হয়। ভমরাদহ ইউনিয়নের দেশিয়াপাড়ায় স্থানীয় শতাধিক হিন্দু ও মুসলিম পরিবারের নারী-পুরুষ ও শিশুদের ধরে নিয়ে গণহত্যা চালায় পাক সেনারা। পরে তাদের মরদেহ একই গর্তে মাটিচাপা দেয়া হয়।’

জেলার রানিশংকৈল উপজেলায় পাক বাহিনীর বর্বরতার চিহ্ন হয়ে গেছে খুনিয়াদিঘি নামে একটি পুকুরপাড়। যে পুকুরের পাড়ে হাজারও বাঙালিকে হত্যা করা হয়। সে দিনের বর্ণনায় জেলার সাবেক কমান্ডার বলেন, ‘রানিশংকৈল ক্যাম্পের শত্রুবাহিনী স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রায় ৫ হাজার লোককে ধরে নিয়ে যায়। তাদেরকে খুনিয়াদিঘি পুকুরপাড়ে সারিবদ্ধ করে ব্রাশফায়ারের মাধ্যমে হত্যা করে।

‘পরে তাদের মরদেহ পুকুরের পানিতে ভাসিয়ে দেয়। গুলি করার আগে পুকুর পাড়ের একটি শিমূল গাছে হাতেপায়ে লোহার পেরেক গেঁথে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন খবর জানতে তাদের ওপর বর্বর নির্যাতন চালায় পাক বাহিনী। এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের কাছে সেদিনের কথা শুনে এখনও মানুষের গা শিউরে উঠে। তখন থেকেই ওই পুকুরটি খুনিয়াদিঘি নামে পরিচিত।’

কথা হয় জেলার আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা রুপ কুমার গুহ ঠাকুরতার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক (বর্তমান সংসদ সদস্য) দবিরুল ইসলামের বাবা আকবর আলীকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে তিরনই নদীতে ফেলে দেয় হানাদার বাহিনী। ঝিকরগাছা গ্রামের ২৫ জন নিরীহ ব্যক্তিকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে বালিয়াডাঙ্গী ক্যাম্পে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।

‘হরিপুর থানার শাইফুদ্দীন, মহিরউদ্দীন, নুরুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, মজিবর রহমান ও তার ভাই এবং হরিপুর মসজিদের ইমামসহ প্রায় শতাধিক ব্যক্তিকে হরিপুর পাক বাহিনীর ক্যাম্পে ধরে আনা হয়। কিন্তু সেখান থেকে কেউ আর ফিরে আসেননি। হরিপুরের ঝিগড়া গ্রাম ও কুসলডাঙ্গীর বহু মানুষকে এক সঙ্গে ডেকে হত্যা করে মাটি চাপা দেয়া হয়। কামারপুকুর এলাকায় প্রায় অর্ধশত হিন্দু-মুসলিমকে এক সঙ্গে গণকবর দেয়া হয়।

ঠাকুরগাঁও জেলার মহকুমার পঞ্চগড় থানা প্রথম শত্রুমুক্ত হয় বলে জানালানেন জেলার সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা বদরুদ্দোজা বদর। বলেন, ‘দিনটি ছিল ২৯ নভেম্বর। পঞ্চগড় হাতছাড়া হওয়ার পর পাক বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে যায়। তারা পিছু হটে ময়দানদিঘি, বোদা, ভুল্লি হয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে ঘাঁটি স্থাপন করে। ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ আক্রমণ চলতে থাকে সেখানে। পাক সেনারা ৩০ নভেম্বর ভুল্লি ব্রিজ উড়িয়ে দেয়।

‘তারা সালন্দর এলাকার সর্বত্র বিশেষ করে আখক্ষেতে মাইন পেতে রাখে। মিত্রবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে ভুল্লি ব্রিজ মেরামত করে ট্যাঙ্ক পারাপারের ব্যবস্থা করে। ১ ডিসেম্বর ভুল্লি ব্রিজ পার হলেও মিত্রবাহিনী যত্রযত্র মাইনের কারণে ঠাকুরগাঁও শহরে ঢুকতে বিলম্ব হয়। ওই সময় শত্রুদের মাইনে দুটি ট্যাংক ধ্বংস হয়। পরে কমান্ডার মাহাবুব আলমের নেতৃত্বে মাইন অপসারণ করে মিত্রবাহিনী ঠাকুরগাঁও শহরের দিকে অগ্রসর হয়। ২ ডিসেম্বর প্রচণ্ড গোলাগুলির পর শত্রুবাহিনী ঠাকুরগাঁও থেকে পিছু হটে। ৩ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী বিজয়ের বেশে ঠাকুরগাঁও প্রবেশ করে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা