খুলনা অফিস
প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪৯ পিএম
শুক্রবার সন্ধ্যায় মিছিল নিয়ে কুয়েট ভিসির বাসভবনের সামনে গিয়ে প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ছবি : প্রবা
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সাধারণ শিক্ষার্থীরা ৯৮তম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ‘রক্তাক্ত কুয়েট’ শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনী শেষে তারা এই ঘোষণা দেন।
পরবর্তীতে মিছিল নিয়ে উপাচার্যের (ভিসি) বাসভবনের সামনে গিয়ে প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন।
এর আগে শিক্ষার্থীরা ১৮ ফেব্রুয়ারির হামলার ঘটনার প্রতিবাদে ‘রক্তাক্ত কুয়েট’ নামে চিত্রপ্রদর্শনী আয়োজন করেন। প্রদর্শনীতে উঠে আসে ওই হামলার বিভিন্ন চিত্র, যেখানে অভিযোগ করা হয় যে কিছু বহিরাগত ব্যক্তি কুয়েটের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সহায়তায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছিলেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের মূলত ছয়টি দাবি ছিল। কিন্তু সিন্ডিকেট বৈঠকে কিছু দাবি উপেক্ষা করে একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তারা জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সিন্ডিকেট মিটিংয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা কার্যকর করা হয়নি। তারা প্রশাসনকে এই বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। এছাড়া হামলার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফলে তারা এই কমিটির প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেছেন।
শুক্রবার রাত ৮টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাছুদের বাসভবনের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। তারা অভিযোগ করেন, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ভিসিকে নির্যাতনের যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তারা দাবি করেন, শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট সম্মানের সঙ্গে ভিসির সঙ্গে আচরণ করেছেন এবং তার প্রতি কোনো ধরনের শারীরিক সহিংসতা করা হয়নি।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশাসন দাবি করেছে যে তারা পাঁচটি দাবি মেনে নিয়েছে; বাস্তবে শিক্ষার্থীদের শুধু আশ্বস্ত করা হয়েছে, কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ছাত্রদল ও বিএনপির দ্বারা সংঘটিত হামলার ভিডিও ও ছবি থাকার পরও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি উপহাসস্বরূপ।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের ফরম বিতরণকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার অভিযোগ ওঠে, যা ক্যাম্পাসে উত্তেজনার সৃষ্টি করে। পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কমিটি জরুরি বৈঠক ডেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
কুয়েট প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি ক্রমশ আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।