মাতৃভাষা বাংলার জন্য অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দেওয়া বীর শহিদদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মানুষ। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত ১২টা ১ মিনিটে নবনির্মিত কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের পুষ্পস্তবকে অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
এর মধ্য দিয়ে চার বছর পর ফের সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত হলো চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার।
রাতের মতো শুক্রবার সকালেও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন। এ সময় নানা আনুষ্ঠানিকতা, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রভাতফেরিতে মুখর ছিল শহীদ মিনার এলাকা। দিনের বেলায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ১১টার পর থেকেই শহিদ মিনারের আশপাশে সমাগম শুরু হয়। শ্রদ্ধা জানাতে বিভিন্ন সংগঠন, নানা শ্রেণিপেশার মানুষ ফুল হাতে ভিড় করতে থাকেন। পরে পুলিশের সশস্ত্র অভিবাদনের মধ্য দিয়ে রাত ১২টা ১ মিনিটে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন, সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ, পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম এবং জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এরপর শহিদ মিনার সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। বিপুল সংখ্যক মানুষ দলে দলে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), জেলা পরিষদ, আনসার-ভিডিপি জেলা কমান্ড্যাট কার্যালয়, বন বিভাগ, ফায়ার সার্ভিসসহ আরও বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে চসিক মেয়র শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বাংলা ভাষার চর্চাটা সীমিত হয়ে যাচ্ছে। এটা দুঃখজনক। আমরা সিটি করপোরেশন থেকে চেষ্টা করছি, আমরা যাদের ট্রেড লাইসেন্স দিচ্ছি, তারা যেন সাইনবোর্ডে বাংলা ব্যবহার করে, সেটা নিশ্চিত করতে।
জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, চব্বিশের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা এক নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। আমরা সবাই মিলে যেন ন্যায়ভিত্তিক সমাজ, ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে পারি, এটাই প্রত্যাশা।
মধ্য রাতের পর শুক্রবার সকালে পুনরায় নানা আনুষ্ঠানিকতা, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রভাতফেরিতে মুখর ছিল শহিদ মিনার এলাকা। সকাল থেকে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, মহিলা দল, বাসদ (মার্কসবাদী), জাতীয় নাগরিক কমিটি, সিপিবি, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্ট, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এছাড়া সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যে বোধন আবৃত্তি পরিষদ, প্রমা আবৃত্তি সংগঠন, জাসাসসহ বিভিন্ন সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসে নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।