× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ভেজাল কীটনাশকে পেঁয়াজ চারায় পচন

রেজাউল করিম লিটন, চুয়াডাঙ্গা

প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:২১ পিএম

আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:৩০ পিএম

ভেজাল কীটনাশকে পেঁয়াজ চারায় পচন

ছত্রাকের আক্রমণ থেকে পেঁয়াজ গাছ ভালো রাখতে চাষিরা ছিটিয়ে ছিলেন ছত্রাকনাশক। কিন্তু এতে তাদের সর্বনাশ হয়েছে। পেঁয়াজ গাছ ভালো থাকার বদলে নষ্ট হয়ে গেছে। চাষিদের এখন মাথায় হাত। ছত্রাকনাশক পেঁয়াজ চাষিদের কোটি টাকা ক্ষতির মুখে ফেলেছে। 

স্থানীয় সুশীল ব্যক্তিরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে কৃষি কর্মকর্তারা কী করেছেন। য়োকরাল কীটনাশকের ব্যাপারে পেঁয়াজ চাষিদের কেন সতর্ক করা হয়নি। এখন নিজেদের দোষ আড়াল করতে চাষিদের অভিযোগ দিতে কেন বলছেন। 

খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, উপজেলার জাহাজপোঁতা, হুদাপাড়া, হরিরামপুর ও মুন্সীপুর মাঠে ২০ কৃষকের প্রায় ২০ বিঘা জমির পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। এর জন্য দায়ী মার্শাল কোম্পানির য়োকরাল কীটনাশক। এটি ছিটানোর ফলে পেঁয়াজ গাছে পচন ধরেছে। হুদাপাড়া গ্রামের এক কীটনাশক বিক্রেতার কাছ থেকে য়োকরাল নামের কীটনাশক কিনে ক্ষেতে স্প্রে করায় কৃষকরা এই বিপদে পড়েছেন।

সরেজমিন উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের চারটি গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, ২০ চাষি তাদের প্রায় ৩০ বিঘা পেঁয়াজ ক্ষেতে য়োকরাল ছত্রাকনাশক স্প্রে করেছিলেন। এতে ফল হয়েছে উল্টো। পচনের কবলে পড়েছে পুরো পেঁয়াজের জমি। কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়ায় চাষিরা দিশাহারা। তারা বলছেন, ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকা। বিঘাপ্রতি পেঁয়াজ চাষে তাদের খরচ হয়েছে ৫০-৫৫ হাজার টাকা। অপরদিকে তাদের ফলন হওয়ার কথা প্রতি বিঘায় প্রায় ১৬০ মণ। গড়ে ২ লাখ টাকার ওপরে তাদের লাভ হতো। আর মাত্র এক মাস পরেই পেঁয়াজ ওঠার কথা। পচন ধরায় তারা পথে বসেছে। তার ওপরে আছে বিভিন্ন এনজিও এবং মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে নেওয়া ঋণের বোঝা।

জাহাজপোঁতা গ্রামের পেঁয়াজ চাষি কৃষক সেলিম বলেন, ‘আড়াই লাখ টাকায় গরু বেচে পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম। যে ক্ষতি হয়েছে তাতে পথে বসে গেলাম। ৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সাড়ে ৩ বিঘা পেঁয়াজের জমিতে য়োকরাল ছিটিয়েছি। আমি এখন ঋণের টাকা কীভাবে শোধ করব, এ ভেবে রাতে ঘুম হচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘পাশের হরিরামপুর গ্রামের আরিফুলের দোকান থেকে কীটনাশক কিনে ব্যবহার করেছি। কোম্পানির লোক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বললেও সময়ক্ষেপণ করছে। 

জাহাজপোঁতা গ্রামের ফয়সালের স্ত্রী রেবেকা রুনা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি আড়াই লাখ টাকায় গরু বেচে দেড় বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম। হুদাপাড়া গ্রামের সারের দোকানদার ইমরানের কাছ থেকে কেনা য়োকরাল কীটনাশক স্প্রে করায় আমার জমির পুরো পেঁয়াজ পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। আমি এখন পথে বসে গেছি। আমার কী হবে? আমি এর বিচার চাই।’

জাহাজপোঁতা গ্রামের কৃষক সেলিম উদ্দিন তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছেন। এই চাষে লাখ টাকা খরচ জোগাতে নিজের পোষা গরু বেচে দেন। আশা করেছিলেন পেঁয়াজের ফলন ও দামে বেশ লাভবান হবেন। কিন্তু তার এই স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে য়োকরাল কীটনাশক। এটি ছিটানোর কারণে পেঁয়াজ গাছে পচন লেগেছে।

তার মতো একই অবস্থা কিষানি রেবেকা আক্তার রুনার। পেঁয়াজের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে চাষ করা কচু, কলাগাছও মরে গেছে।

এ ব্যাপারে য়োকরাল কীটনাশক বিক্রেতা আরিফুল বলেন, ‘আমার এ বিষের ডিলার কার্পাসডাঙ্গা বাজারের ব্রিজ মোড়ের কীটনাশক দোকানি হাসিবুর। আপনি তার সঙ্গে কথা বলুন।’ 

য়োকরালের ডিলার হাসিবুর বলেন, ‘আমি কিছু জানি না। কোম্পানির লোক সব বলতে পারবে। কোম্পানির বড় বড় অফিসার এটা দেখছে। আপনি এই কোম্পানিতে কর্মরত লোকনাথপুর গ্রামের আরিফের সঙ্গে কথা বলুন।

কোম্পানির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা আরিফুল বলেন, ‘আমরা মাঠে তদন্ত করে ক্ষতিগ্রস্ত পেঁয়াজ চাষিদের একটা তালিকা করেছি। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’ হুদাপাড়া গ্রামের য়োকরাল ছত্রাকনাশক বিক্রেতা ইমরান আলী বলেন, ‘আমার কাছ থেকে দুজন চাষি য়োকরাল বিষ কিনেছেন। শুনেছি এই বিষ কীটনাশক স্প্রে করায় ক্ষতি হয়েছে।’ 

কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মামুন বলেন, আমরা মাঠ তদন্ত করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত পেঁয়াজ চাষিদের বলেছি, কোম্পানি ক্ষতিপূরণ না দিলে উপজেলা কৃষি দপ্তরে যেন লিখিত অভিযোগ করা হয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, ‘আমরা শোনার পর সরেজমিন ক্ষতিগ্রস্ত মাঠ দেখতে গিয়েছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত কীটনাশক কোম্পানির কর্মকর্তাদের ডেকে কথা বলেছি। তারা ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’ 

উল্লেখ্য, চলতি বছরে দামুড়হুদা উপজেলায় ৭ হাজার ৩৩৫ বিঘা জমিতে সুখসাগর ও তাহেরপুরী জাতের পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। এর থেকে ৩০ হাজার ৭৭০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

 


শব্দ: ৪০০


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা