মধ্যাঞ্চলীয় ব্যুরো
প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১২:৫৩ পিএম
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১২:৪৯ পিএম
গোবর থেকে তৈরি লাকড়ির মতো এসব জ্বালানিকে স্থানীয় ভাষায় গৈই, মুটিয়া, বৈঢা বলা হয়ে থাকে। প্রবা ফটো
কিশোরগঞ্জর হাওরাঞ্চলসহ বিভিন্ন উপজেলায় রান্নার কাজে গোবর দিয়ে তৈরি জ্বালানির ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়। গরুর বিষ্ঠা তথা গোবর, পাটকাঠি বা গাছের হালকা ডালে লাগিয়ে রোদে শুকিয়ে অতি দরিদ্র থেকে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে খরচ সাশ্রয় করছে।
গোবর থেকে তৈরি লাকড়ির মতো এসব জ্বালানিকে স্থানীয় ভাষায় গৈই, মুটিয়া, বৈঢা বলা হয়ে থাকে। প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করা গোবর ও শলা জাতীয় গাছের চিকন শুকনো ঢাল, পাটখড়ি মিশিয়ে গ্রামের নারীরা এই মুটিয়া তৈরি করে রোদে শুকিয়ে তাদের প্রতিদিনের রান্নার জ্বালানি চাহিদা মেটাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ এসব তৈরি করে প্রতি এক'শ পিস ২৫০ টাকায় বিক্রি করে বাড়তি আয়ের পথকে সুগম করছেন।
সরেজমিনে নিকলী উপজেলার সাইটধার, পূর্বগ্রাম, গোবিন্দপুর, কোর্শা, দামপাড়্, পাচরুখী গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামের নারীরা গরুর গোবরকে কোনোভাবেই নষ্ট হতে দিচ্ছে না। তারা এবারের বোরো মৌসুমের শুরুতেই বিভিন্ন গোয়াল ও রাস্তাঘাট থেকে গোবর সংগ্রহ করে মুটিয়া তৈরি করে রোদে শুকাচ্ছেন। এগুলো জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করবেন তারা। ফলে হাওরের রাস্তাঘাট, নানাবাড়ির আঙ্গিনায় এখন গোবর জ্বালানি তৈরির নানা প্রকার অবয়ব লক্ষ্য করা যায়।
নিকলীর সাইটধার গ্রামে রুমেনা খাতুন, পূর্বপাড়া গ্রামের অণিতা বর্মন ও দামপাড়া গ্রামের রুমা রবিদাসের সঙ্গে কথা হয় প্রতিদিনের বাংলাদেশের এই প্রতিবেদকের। তারা জানান, দৈনন্দিন রান্নাবান্নার কাজে তারা গোবর জ্বালানি ব্যবহার করে লাভবান হচ্ছেন। কারণ, এ জ্বালানিতে তাদের কোনো খরচ নেই। তা ছাড়া এ জ্বালানি পরিবেশের জন্য ভালো। রান্নার পর প্রকৃত খাদ্যের স্বাদ ও গন্ধ পাওয়া যায় বলে যে কোনো খাদ্য মুখরোচক হয়ে যায়।
রুমা রবিদাস বলেন, তিনি বন্যার পানি নেমে যাবার পর মুটিয়া তৈরি করে চার হাজার টাকা জমিয়েছেন।
মিঠামইন সদর উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যান শরীফ কামাল বলেন, হাওরের বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠী এই গোবর জ্বালানি ব্যবহার করে নিত্য দিনের রান্না করছেন। জ্বালানি বাবদ তাদের কোনো ব্যয় নেই বলেই তারা বর্তমান বাজার দরে কোনোভাবে টিকে আছে।
ইটনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুল হাসান বলেন, আমাদের বাপ দাদার আমল থেকে হাওরের অধিকাংশ পরিবার জ্বালানি হিসেবে গোবর জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল ছিল। গ্যাস সিলিন্ডার বাজারে আসায় একশ্রণির মানুষ তা ব্যবহার করছে। কিন্তু এখনও হাওরের দরিদ্র ও অতি দরিদ্রদের প্রতিদিনের প্রধান জ্বালানি হচ্ছে গোবর জ্বালানি। এটা প্রকৃতি থেকে না পেলে তারা জ্বালানি সংকটে পড়তো।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কিশোরগঞ্জর দায়িত্বপ্রাপ্ত কমকর্তা রোকায়েত তাহরিন সৌরভ বলেন, গোবর জ্বালানি হাওরের মানুষের জন্য আর্শীবাদ। পুরো হাওরে জ্বালানি হিসেবে গোবরের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। এই জ্বালানি পরিবেশবান্ধব। তা ছাড়া প্রকৃতি থেকে প্রায় বিনা পয়সায় এই জ্বালানি তৈরি ও সংগ্রহ করে পরিবেশ প্রতিবেশকে ইতিবাচক দিকে নিয়ে যাচ্ছেন হাওরের নারীরা। সংসারে জ্বালানি খরচও সাশ্রয় হচ্ছে এতে।