রংপুর অফিস ও লালমনিরহাট প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:৫০ পিএম
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:৩৪ পিএম
তিস্তা রেলসেতু লালমনিরহাট পয়েটে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন তারেক রহমান। প্রবা ফটো
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ মনে করে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সব একতরফা, অসম ও অন্যায্য চুক্তি পুনর্বিবেচনা করা দরকার। বিশ্বজুড়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে সমস্যা সমাধান কিংবা পারস্পরিক স্বার্থ জড়িত থাকে। নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষায় প্রতিটা দেশ তাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করে। এটাই কুটনৈতিক নীতি। কিন্তু স্বৈরাচার, পলাতক হাসিনা ক্ষমতার লোভে সব দিয়ে দিয়েছে।’
তিস্তা চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে উত্তরের ৫ জেলার ১১টি পয়েন্টে টানা ৪৮ ঘন্টার কর্মসূচিতে মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সোয়া ৫টায় তিস্তা রেলসেতু লালমনিরহাট পয়েন্টের সমাবেশে অনলাইনে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘স্বৈরাচার হাসিনা জোর করে ক্ষমতা দখলে রাখতে নিজেকে ভারতের সেবাদাসী হিসেবে গড়ে তুলেছিল। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন সম্পূর্ণ অকার্যকর রেখেছিল। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরাজমান ফারাক্কার সমস্যা সমাধান হয় নাই। উত্তরাঞ্চলের জনগণের বহুল প্রত্যাশিত তিস্তা চুক্তিও হয় নাই। অথচ সকল আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ভঙ্গ করে পলাতক স্বৈরাচার প্রতিবশেী দেশকে ট্রানজিট শিপমেন্টের বন্দর ব্যবহারের একতরফা সুবিধা দিয়ে গেছে। এ সকল চুক্তিতে মিনিমাম ন্যায্যতা করা হয় নাই। বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ কাঁটাতারের বেড়ায় আর ফেলানীর ঝুলন্ত লাশ দেখতে চায় না। সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশীদের রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে চায় না।’
তিনি বলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারোর সঙ্গে বৈরিতা নয়- পররাষ্ট্র নীতির এটিই হচ্ছে মূল স্লোগান ও নীতি। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে এই নীতি পুনর্বিবেচনা করা দরকার। বর্তমান বিশ্বে স্থায়ী শত্রু বা স্থায়ী মিত্র বলে কিছু নেই। বরং একটা দেশের সঙ্গে অপর দেশের সম্পর্ক হবে পারষ্পারিক স্বার্থ রক্ষার, ন্যায্যতার ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে। সুতরাং সম্পর্ক রক্ষা করার ক্ষেত্রে নিজ দেশে জনগণের স্বার্থ রক্ষা করাই হবে প্রথম ও প্রধান অগ্রাধিকার।’
তারেক রহমান বলেন, ‘পানি বন্টন নিয়ে প্রতিবেশী দেশ অপ্রতিবেশীমূলক আচরণ করছে। ভারত থেকে আসা ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পেতে আমাদের আন্দোলন করতে হচ্ছে। ৫০ বছর হলো ফারাক্কার অভিশাপ থেকে আমরা রক্ষা পাাই নাই, এখন আবার এই তিস্তার অভিশাপ। তারা হঠাৎ করে পানি ছেড়ে দিচ্ছে ফলে বাড়িঘর, গ্রাম ও ফসলি জমি ভেসে যাচ্ছে। লক্ষ টাকার ফসল নষ্ট হচ্ছে। আন্তর্জাতিক উদ্যোগের পাশাপাশি, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলকে মরুকরণ থেকে বাঁচাতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।’
তিনি বলেন, ‘আপনাদের প্রিয় দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, রাষ্ট্র ও জনগণের সমর্থনে আল্লাহর রহমতে রাষ্ট্র পরিচালনা দায়িত্ব পেলে আগামী দিনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সব ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি বর্ষাসহ অন্য উৎস থেকে পানি সংরক্ষণ করে রাখার জন্য বাংলাদেশের ভেতরে থাকা তিস্তার ডান পাশের ৭টি নদী ও বাঁ পাশের ৫টি শাখা ও উপনদী খনন করা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও পানির বিকল্প উৎস তৈরি ও পানি সংরক্ষণের জন্য নদী ও পানি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন স্থানে জলাধার নির্মাণ ও পুনরায় শহীদ জিয়ার খাল খনন কর্মসূচি চালু করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, “আন্দোলনে অংশ নেওয়া বয়োজ্যোষ্ঠদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনাদের অনেকেরই মনে আছে স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়ার খাল খনন কর্মসূচির কথা। তখন একটি স্লোগান বিখ্যাত ছিল- ‘খাল কাটা হলে সারা, দূর হবে বন্যা খরা’। আমরা ক্ষতায় এলে সে উদ্যোগ আবার গ্রহণ করব। সবার আগে দেশ, সবার আগে দেশের মানুষ।”
বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলুর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেকসহ অন্যরা।