× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

তিস্তাপাড়ে লাখো কণ্ঠে পানির ন্যায্য হিস্যার স্লোগান

আকরাম হোসেন, রংপুর থেকে

প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:৩৬ এএম

আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:৫৩ এএম

তিস্তা রেল ও সড়ক সেতু লালমনিরহাট প্রান্তের বালুচরে সোমবার তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির অবস্থান কর্মসূচিতে মানুষের ঢল। প্রবা ফটো

তিস্তা রেল ও সড়ক সেতু লালমনিরহাট প্রান্তের বালুচরে সোমবার তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির অবস্থান কর্মসূচিতে মানুষের ঢল। প্রবা ফটো

শুষ্ক মৌসুমে মরুভূমিতে পরিণত হয় তিস্তা। চারদিকে শুধু বালি আর বালি। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরও নিচে নেমে গেছে। শ্যালো মেশিনেও পানি ওঠে না। কৃষিকাজ করতে পারি না। ভয়াবহ গরম পড়ে। গরমে মানুষজন, গরু-ছাগল হাঁসফাঁস করে। আবার বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি আসে। বন্যা হয়। নদীভাঙন হয়। ভেসে যায় চারপাশ। ঘরবাড়ি ডুবে যায়। এভাবেই চলছে আমাদের জীবন। আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন লালমনিরহাটের গুগুন্ডা ইউনিয়নের ইকলাস আলী।

তিস্তা ব্রিজের পাশে তাঁবু টানিয়ে বসে আছেন ধরেশ চন্দ্র ও নরেশ চন্দ্র রায়। তারা দুজন বাল্যবন্ধু। একসঙ্গে গিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। দেশ স্বাধীন করে ফিরেছেন নিজ ঘরে। বয়সের ছাপ ফুটে উঠেছে শরীরে। চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ। তারাও এসেছেন তিস্তা বাঁচানোর দাবি নিয়ে। তারা বলেন, আমরা আমাদের তিস্তায় আগের মতো ভরা পানি দেখতে চাই। ধু ধু বালুচর দেখতে চাই না। শৈশবের স্মৃতি হাতড়ে তারা বলেন, এই তিস্তায় কত নৌকাবাইচ খেলা হতো। এখন আর হয় না। পানিই নাই নদীতে। চর পড়ে গেছে। শুধু বর্ষাকালে পানির দেখা মেলে। ভারত পানি ছাড়লে সেই স্রোতে বাড়িঘর বিলীন হয়ে যায় তিস্তার গর্ভে। সারা বছর পানিহীন হয়ে থাকে এই নদী। তিস্তার এই অবস্থার জন্য ভারতকে দায়ী করেন এই দুই মুক্তিযোদ্ধা।

গতকাল সোমবার রংপুর ও লালমনিরহাট জেলার তিস্তা রেলওয়ে সেতু সংলগ্ন চর পয়েন্টে তিস্তা রক্ষা ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে সমাবেশ হয়। সমাবেশে যোগ দেয় এ অঞ্চলের সর্বস্তরের লাখো মানুষ। জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ লাখো মানুষের স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে তিস্তার চর। এদিন একই সঙ্গে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার ১১টি পয়েন্টে সমাবেশ, পদযাত্রা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করছে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি’। টানা ৪৮ ঘণ্টার এ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ সমাপনী বক্তব্য দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। একই সঙ্গে ১১টি পয়েন্টে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন তিনি।

গতকাল তিস্তা রক্ষা ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবির কর্মসূচিতে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। শিক্ষার্থী, কৃষক, মৎস্যজীবী, পরিবেশকর্মী, শিক্ষক, চিকিৎসক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যরা এক কাতারে শামিল হন তিস্তা রক্ষার দাবিতে। সমাবেশে আগতদের চোখেমুখে একদিকে আক্ষেপ অন্যদিকে আশা। নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন তারা। তিস্তা ফিরবে আগের রূপে। একদিকে নদী মৃত্যুর প্রহর গুনছে, অন্যদিকে এরই মধ্যে জেগে উঠেছে জনতার অদম্য সংহতি। ব্যান্ডপার্টি, বাঁশি, এক রঙের টি-শার্ট, ক্যাপ মাথায় দিয়ে সমাবেশে এসেছে মানুষ। রাত্রীযাপনের জন্য ছোট বড়ো নানা আকারের তাঁবু টানানো হয়েছে। নারীদের জন্য আলাদা তাঁবু টানানো হয়েছে। খাবার ব্যবস্থাসহ যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে সমাবেস্থলে। আগত মানুষ বিভিন্ন গ্রাম্য খেলায় মেতে উঠেছেন। রাতভর চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

তিস্তা রক্ষার আন্দোলনে আসা একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী কামরুল হাসান বলেন, এ অঞ্চলের মানুষ অসহায় হয়ে আছে। ঠিকমতো আবাদ করতে পারছে না। আমরা চাই নদী খনন করা হোক। নদীতে সারা বছর পানি থাকবে, এমন একটা ব্যবস্থা করা হোক। তিস্তা মোশতাক আহমাদ ফাজিল মাদ্রাসা থেকে এসেছেন কয়েশ শিক্ষার্থী। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক আব্দুর রব মিয়া বলেন, আমরা এই আন্দোলের সঙ্গে শামিল হতে এসেছি। আমাদের শিক্ষার্থীরা সবাই কোনো না কোনোভাবে তিস্তার এই দুর্দশার ভুক্তভোগী। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলের মানুষ উপকৃত হবেন। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবেন। এটা আমাদের এই অঞ্চলের সবার চাওয়া। তিনি বলেন, এর আগে তিস্তা রক্ষায় এমন কর্মসূচি হয়নি। এই প্রথম তিস্তা রক্ষায় এতবড় আন্দোলন। আমরা আশা করছি, তিস্তা আগের রূপে ফিরবে।

হাফিজুর মিয়া জানান, গত কয়েক বছর আমরা নানামুখী সমস্যায় পড়েছি। বর্ষাকালে ভারত পানি ছেড়ে দিলে অতিরিক্ত বর্ষা হয়। সব ভেসে যায়। ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নষ্ট হয়ে যায়। নদীভাঙন হয়। আবার শুকনা মৌসুমে নদীতে পানি থাকে না। ভারত পানি ছাড়ে না। বিস্তৃত শুকনো নদীর দিকে তাকিয়ে আক্ষেপ করে বলেন, এইভাবে খাঁ খাঁ করে চারদিক। পানি নাই। শুধু বালি আর বালি। হেঁটে নদী পার হওয়া যায়। ঠিকমতো কৃষিকাজ করতে পারি না। ফসল হয় না। তিস্তা নিয়ে একটা বিহিত হওয়া দরকার।

মূল সমাবেশ শুরু হয় বেলা ৩টায়। সকাল থেকে নিজ উদ্যোগে আসেন এ অঞ্চলের মানুষ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আসেন শিক্ষার্থীরা। ‘জাগো বাহে-তিস্তা বাঁচাও’ স্লোগান নিয়ে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে এই কর্মসূচিতে অংশ নেন বিএনপি ও তার মিত্ররা। রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলার সর্বস্তরের জনগণ তিস্তা অভিমুখে পদযাত্রা এবং নদীর দুই তীরে ২৩০ কিলোমিটারজুড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে।

এই আন্দোলনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলে তিস্তা নদীর সংকট তুলে ধরা এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই আয়োজকদের অন্যতম লক্ষ্য। তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা গেলে ভারত ন্যায্য হিস্যা দিতে বাধ্য হবে এবং তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথ সুগম হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা