বড়লেখা পল্লী বিদ্যুৎ
বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:৪২ পিএম
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:৪৫ পিএম
বড়লেখা উপজেলার বার্ণি ইউনিয়নের মুদদপুর গ্রামে একটি বাড়ির ওপর দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ লাইন। প্রবা ফটো
বসতঘর, বাড়ি এবং রাস্তার পাশ ঘেঁষেই হাতে ছোঁয়া দূরত্বে টানানো হয়েছে পল্লী বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন। মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বড়লেখা আঞ্চলিক কার্যালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন এলাকার এ রকম ৪ শতাধিক স্পটে ঝুঁকিপূর্ণ সঞ্চালন লাইন রয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে টানানো এসব সঞ্চালন লাইনে নানা দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে।
সরেজমিনে বড়লেখা উপজেলার বর্ণি, দাসেরবাজার, নিজবাহাদুরপুর, বড়লেখা সদর, তালিমপুর ও দক্ষিণভাগ ইউনিয়ন এলাকা ঘুরে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন ও খুঁটি দেখা গেছে। কার্যালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন এলাকার (বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলার) ৪ শতাধিক স্পটে এমন ঝুঁকিপূর্ণ সঞ্চালন (এলটি ফেজ) লাইন রয়েছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ লাইনের কারণে প্রায়ই হতাহতের ঘটনা ঘটছে।
স্থানীয় ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৫ মার্চ জুড়ী উপজেলার (বড়লেখা আঞ্চলিক কার্যালয়ের আওতাধীন) গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব গোয়ালবাড়ী গ্রামে টিনের চালে বিদ্যুৎ লাইন ছিঁড়ে পড়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে একই পরিবারের ৬ জনের মৃত্যু হয়। একই বছরের ২৩ মে বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নের খলাগাঁও গ্রামে প্রবাসীর বসতঘর ছোঁয়া বিদ্যুতের মেইন লাইনে স্পৃষ্ট হয়ে এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এর আগে ২০২২ সালের মে মাসে পল্লী বিদ্যুতের দাসেরবাজার এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ঝুঁকিপূর্ণ লাইনের বিষয়ে অফিসে জানালে উল্টো নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। এ অফিসে (বড়লেখা আঞ্চলিক কার্যালয়ে) কর্মরত কর্মকর্তা ও একটি দালাল সিন্ডিকেট চক্র গ্রাহক হয়রানিতে জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ সঞ্চালন লাইন ও খুঁটির বিষয়ে মৌখিক ও লিখিতভাবে জানালেও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সাড়া দিচ্ছে না। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেখানে বাস করছেন গ্রাহকেরা। দুর্ঘটনার পর কিংবা গণমাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ লাইনের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে কয়েক দিন কাজ শুরুর তোড়জোড় চলে। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বন্ধ হয়ে যায় কার্যক্রম। স্থানীয়দের দাবি, তোড়জোড় না দেখিয়ে এসব লাইন অপসারণে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হোক।
উপজেলার পকুয়া গ্রামের সত্যেন্দ্র বিশ্বাস বাড়ির সামনের ঝুঁকিপূর্ণ লাইনের বিষয়ে লিখিতভাবে জানিয়েও পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে ঘুরছেন। তিনি বলেন, লাইনগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। হাত দিলে নাগালে চলে আসছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। দুই-তিন দিন আগে অফিসের লোক এসে দেখে গেছেন। কিন্তু তারা যেভাবে লাইন পরিবর্তনের কথা বলছেন এভাবে হলে ঝুঁকি থেকে যাবে। এখন অপেক্ষা করে দেখি কী কাজ হয়।
এ ছাড়া সদর ইউনিয়নের মহদিকোনা গ্রামের মো. শাহাবুদ্দিনের বাড়ির একটি বসতঘরের ছাদের ওপর ঝুলে পড়ে বিদ্যুতের (এলটি ফেজ) তার। একই অবস্থা শংকরপুর গ্রামের মতিন মিয়ার বাড়িতে।
জানতে চাইলে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বড়লেখা আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডিজিএম খায়রুল বাকী খান বলেন, যেসব লাইন ঝুঁকিপূর্ণ আছে, হাতের নাগালে আছে; সেগুলো এই মাসের মধ্যে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এগুলো ডিজাইন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। শিগগিরই কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।