পাঁচ বছরের নির্মাণ কাজ সাত বছরেও শেষ হয়নি
জিয়াউর রহমান, নেত্রকোণা
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:৫৯ পিএম
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:২৫ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
নেত্রকোনার মদন উপজেলার কদমশ্রী দাখিল মাদ্রাসার ভবন নির্মাণের কাজ সাত বছরেও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। বছরের পর বছর ধরে মাদ্রাসার পুরো মাঠসহ শ্রেণিকক্ষ দখলে নিয়ে মালপত্র রেখেছে ঠিকাদারের শ্রমিকরা। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এ নিয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বার বার তাগাদা দিলেও উল্টো ঠিকাদারের লোকজন হুমকি-ধমকি দেয়। এ ছাড়া নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নেত্রকোণা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ও মাদ্রাসা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা কদমশ্রী গ্রামে ১৯৪২ সালে কদশ্রী দাখিল মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। আবাসন ও শ্রেণিকক্ষের সংকট থাকায় ১৯৯৫ সালের দিকে একতলা একটি ভবন নির্মাণ করে সরকার। শিক্ষার্থী বেশি হওয়ায় শ্রেণিকক্ষের সংকট কাটেনি। বর্তমানে মাদ্রাসাটিতে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে।
শিক্ষা প্রকৌশলের অর্থায়নে ২০১৮ সালে কদমশ্রী দাখিল মাদ্রাসায় একটি চারতলা ভবন নির্মাণ করার অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। কাজটি বাস্তবায়ন করছে নেত্রকোণার মামুন সৈকত নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ২০১৮ সালে কাজ শুরু করে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ঠিকাদারের লোকজন মাদ্রাসার কয়েকটি শ্রেণিকক্ষ দখল করে রেখেছেন। এ নিয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ প্রতিবাদ করলেও কোনো রকম প্রতিকার মিলছে না। উল্টো ঠিকাদারের লোকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হুমকি ধমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে করে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যাচ্ছে। এ ছাড়াও নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।
সরজমিনে দেখা যায়, পুরো মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে ইট, পাথর, বালু ও রড ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে পড়ে আছে। দশম শ্রেণির কক্ষে সিমেন্টের বস্তা মজুদ করে রাখা হয়েছে। এক পাশে সিমেন্ট ও অন্য পাশে শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেওয়া হচ্ছে। নবম শ্রেণির কক্ষটিতে ঠিকাদারের লোকজন বিছানা পেতে বসবাস করছেন। এ অবস্থায় একেবারে কমে গেছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারুফা আক্তার, রিয়া মনি, ফারজানা আক্তারের সাথে কথা হলে তারা জানায়, শ্রেণিকক্ষের ভেতরে সিমেন্ট রাখা হয়েছে। কয়েক বছর ধরেই সিমেন্ট দিয়ে শ্রেণিকক্ষ দখল করে রাখা হয়েছে। তাদের ৩০ জন শিক্ষার্থী বসার মতো সুযোগ না থাকায় এখন আর কেউ মাদ্রাসায় আসতে চায় না।
তারা আরও জানায়, যখন ক্লাস চলে তখন শ্রমিকরা হুট করে চলে আসে সিমেন্ট নিতে। ফলে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট হয়। শ্রমিকদের কারণে ঠিকমতো ক্লাস করতে পারছে না তারা। দ্রুত এ অবস্থার প্রতিকার কামনা করে শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার সুপার এটিএম মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৮ সালে কাজ শুরু করার কথা থাকলেও কাজ শুরু করে এক বছর পর ২০১৯ সালে। শেষ করার কথা ২০২৩ সালে কিন্তু এখনো কাজ শেষ হয়নি। শ্রেণিকক্ষে মালপত্র রাখতে বার বার নিষেধ করলেও ঠিকাদারের লোকজন তা মানছেন না। গত কয়েক বছর ধরে মাদ্রাসার পাঠদানের খুবই সমস্যা হচ্ছে।’
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
ঠিকাদারের প্রতিনিধি সুজাত হুসাইন বলেন, ‘কাজ শেষ করার সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমরা কোনো রকম নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করছি না।’
তবে নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রেখে মাদ্রাসা দখল করে রাখার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
নেত্রকোণা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ সহকারী প্রকৌশলী শাহি আলম বলেন, ‘কদশ্রী মাদ্রাসার কাজ নিয়ে একটু অসুবিধায় আছি। ঠিকাদারকে বার বার বলেও কাজ শেষ করাতে পারছি না। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।’
মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অহনা জিন্নাত বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’