জুয়েল সাহা বিকাশ, ভোলা
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:৩১ এএম
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ভোলার মনপুরায় একসময় ঘর থেকে বের হলেই দেখা মিলত মায়াবী হরিণের। প্রাণীটির টানে সেখানে ভিড় জমত পর্যটকের। কিন্তু শিকারিদের দৌরাত্ম্যে হরিণ হারিয়ে যাওয়ায় এখন আর পর্যটক তেমন আসে না। সম্প্রতি উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের আলম বাজার সংলগ্ন বনে। প্রবা ফটো
হরিণের রাজ্য খ্যাত ভোলার মনপুরা উপজেলায় বেড়েছে শিকারির দৌরাত্ম্য। এতে দিন দিন হরিণের সংখ্যা কমে প্রাণীটি এ উপজেলায় এখন বিলুপ্তির পথে। হরিণ কমে যাওয়ায় কমছে পর্যটকও। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হলে হরিণ শিকার কমে মনপুরা আবারও হরিণে ভরে উঠবে বলে মনে করছে স্থানীয়রা।
সম্প্রতি মনপুরার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা ভোলার বিচ্ছিন্ন উপজেলায় মনপুরা উপজেলা। এর মধ্যে মনপুরার সবচেয়ে বেশি সৌন্দর্য বনের বিভিন্ন প্রজাতির মায়াবী হরিণ সারা দেশে প্রচলিত ছিল। এর মধ্যে হাজিরহাট ইউনিয়নের জঙলার খাল, বদনার চর, চর সামছুদ্দিন, লতার চর, উত্তর সাকুচিয়ার আলম বাজার, দক্ষিণ সাকুচিয়ার রহমানপুর ও কলাতলির চরের ঢালচর ও কলাতলি চরসহ বেশ কয়েকটি এলাকার বাগানে দেখা মিলত হরিণের পাল। শুধু বন নয়, রাস্তা ও মানুষের বসতবাড়ির উঠানেও ছুটে আসা হরিণ দেখা যেত। বেশ কয়েক বছর আগেও মনপুরা উপজেলার হরিণ নিজের চোখে একনজর দেখতে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে ছুটে আসতেন বিভিন্ন বয়সি পর্যটক। কিন্তু বর্তমানের হরিণ শিকারিদের দৌরাত্ম্যের কারণে বিলুপ্তির পথে বনের হরিণ। তাই কমে গেছে পর্যটকদের আসাও।
উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নে আলম বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. কামল ও মোসলেউদ্দিন জানান, ছয়-সাত বছর আগেও তাদের বাজারের সামনের বনে প্রচুর হরিণ ছিল। অনেক সময় হরিণ দলবেঁধে সড়কে চলে আসত। রাস্তার এ পাশ থেকে অন্য পাশে হরিণ দৌড়াদৌড়ি করত। বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ আসত হরিণ দেখতে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে ওই বাগানে আর হরিণ দেখা যায় না। এখন হরিণ আছে কি না, জানি না। তবে তাদের দাবি, হরিণ বাগানে থাকলে কোনো কোনো সময় খাবার ও পানির সন্ধানে নদীর তীরে আসত তখন দেখতে পেতাম। মনে হচ্ছে আমাদের এখানের বাগানে এখন আর হরিণ নেই।
ঢাকার মুন্সীগঞ্জ থেকে মনপুরায় ঘুরতে আসা পর্যটক মো. ফারহাদ সর্দার ও ইউসুফ মিয়া জানান, তারা মনপুরার হরিণের অনেক গল্প শুনেছেন লোকমুখে। তাই এবার শীত মৌসুমে পরিবারের সদস্যরা মিলে দুদিনের জন্য মনপুরায় আসছেন। গত দুদিনে তারা মনপুরার বিভিন্ন এলাকা ঘুরেছেন। কিন্তু একটি হরিণেরও দেখতে পাননি। তাই নিরাশ হয়ে আবারও মুন্সীগঞ্জে ফিরে যাচ্ছেন।
মনপুরায় উপজেলার মনপুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. সৈকত মাহমুদ ও দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. লোকমান হোসেন জানান, মনপুরা উপজেলার বনের হরিণ আজ বিলুপ্তির পথে। কারণ মনপুরা উপজেলায় সাত-আট বছর ধরে হরিণ শিকারিদের দৌরাত্ম্য অনেক বেড়ে গেছে। দিন ও রাতে শিকারিরা হরিণ শিকার করার কারণেই আজ হরিণ বন থেকে বিলুপ্তির পথে।
দক্ষিণ সাকুচিয়ার ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকার মো. সবুজ বলেন, মনপুরা থেকে হরিণ বিলুপ্তির পথে। কারণ এখানে হরিণ শিকারির সংখ্যা বেড়েছে। নদী ভাঙনের ফলে হরিণের আবাসনস্থলও কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া বন উজাড় হয়ে যাওয়াও এর পেছনে একটি কারণ।
মনপুরার রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. রাশেদুল হাসান বলেন, বনে তাদের টহল কার্যক্রম চলমান রয়েছে। হরিণ শিকারিদের বিরুদ্ধে তারা কঠোর রয়েছেন। এ ছাড়া হরিণ শিকারিদের আটক করে তাদের বিরুদ্ধে তারা এর আগেও কয়েকটি মামলা দিয়েছেন।
মনপুরা থানার ওসি মো. আহসান কবির বলেন, মনপুরা থানা এলাকার চারদিকে অনেক বন আছে, সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ বাস করে। আর আমরা বনের হরিণ রক্ষায় পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারি ও টহল রেখেছি। এ ছাড়াও হরিণ শিকারিদের ধরতে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছি।