ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার
প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৫:৪৪ পিএম
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:৪০ পিএম
দার্জিলিং টিলা। প্রবা ফটো
দার্জিলিং হলো ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়ি বিভাগের একটি সৌন্দর্যময় জেলা। জেলাটি মনোরম শৈলশহর ও চায়ের জন্য বিখ্যাত। ঢেউ খেলানো সবুজাভ চা বাগান দার্জিলিংয়ের বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্র। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেই যেকোনো সময় ভারতের দার্জিলিং যাওয়া যায় না বা সবার যাওয়ার সৌভাগ্য হয় না। যাদের ভারতের দার্জিলিং যাওয়ার সৌভাগ্য হয় না তাদের জন্য সুখবর। আমাদের বাংলাদেশেই রয়েছে দার্জিলিং। আর সেই দার্জিলিং হলো দেশের পর্যটন জেলা হিসেবে পরিচিত দেশি-বিদেশি ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে পরিচিতি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত এমআর খান চা বাগানের ৭ নম্বর সেকশনে অবস্থিত ৩০০ ফুট উচ্চতার দার্জিলিং টিলা। পুরো টিলাটি দার্জিলিংয়ের আদলে তৈরি বা পুরো দার্জিলিংয়ের চা-বাগানের মতো দেখতে। মনোমুগ্ধকর এ স্থানটি ইতোমধ্যে দেশের ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে স্বর্গোদ্যান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মোহাজেরাবাদ পশ্চিমপাড়া। আর সেই মোহাজেরাবাদ পশ্চিমপাড়ার পাশেই এমআর খান চা-বাগান। সে বাগানের কারখানার পাশ দিয়ে যে মেঠোপথ দক্ষিণ দিকে ধাবমান সেটি ধরে একটু এগিয়ে গেলেই অপূর্ব সৌন্দর্যময় দার্জিলিং টিলা। পাহাড়ি এই স্থান এতটাই সুন্দর যে আপনি মুহুর্তেই ভারতের দার্জিলিংয়ে রয়েছেন সে কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যাবেন। টিলাটির সৌন্দর্য ছবির মতো। চারদিকে সবুজাভ চা বাগান আর মনোমুগ্ধকর বৃক্ষরাজি। দৃষ্টি যেদিকে যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। চা-বাগানের সর্পিল মেঠোপথ যে কারও মনকে ভরিয়ে দিতে পারে প্রশান্তির ছায়ায়। প্রকৃতির এমন মনোমুগ্ধকর স্থানটি পর্যটকদের কাছে দেশের অন্যতম সৌন্দর্যময় পর্যটন স্পট হিসেবে পছন্দের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দময় উপজেলা শ্রীমঙ্গল ভ্রমণে আসলে পর্যটকেরা ‘দার্জিলিং টিলা’ দেখতে ভুলেন না। টিলাটির বিস্তৃত চা বাগানের সবুজাভ দেখলে তনোমন জুড়িয়ে যায়। সবুজের চাদরে আচ্ছাদিত এ টিলাটিতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন দর্শনার্থী ও পর্যটকরা।
যেভাবে নামকরণ
এমআর খান চা-বাগানের স্বত্বাধিকারী সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী (হারুন) বলেন, ‘আমাদের এমআর খান চা বাগানটির প্রাকৃতিক পরিবেশ অত্যন্ত চমৎকার। এ বাগানের ৭ নম্বর সেকশনটি খুবই মনোমুগ্ধকর। এ সেকশনটিতে কয়েক বছর আগে এসেছিলেন বেশ কয়েকজন পর্যটক। তারা এখানে ভ্রমণে এসে টিলাটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন।
ওই পর্যটকরাই জানান টিলাটি অনেকটা দার্জিলিংয়ের চা বাগানের মতো। তখন থেকেই ৭ নম্বর সেকশনের টিলাটির নাম হয়ে যায় ‘দার্জিলিং টিলা’। বর্তমানে টিলাটি দেখতে প্রতিদিনই হাজার-হাজার প্রকৃতিপ্রেমি এখানে ভিড় জমান। আসেন বিদেশি পর্যটকরাও। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটি, ঈদ-পূজার ছুটিতে এ স্থানটি লোকে-লোকারণ্য হয়ে যায়। এখানে আগত পর্যটকদের সুবিধার্থে বিশ্রাম ও বসার জন্য বাগানের পক্ষ থেকে কিছু স্থাপনা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এখানে আসতে কোনো ধরনের প্রবেশ ফি নেই। আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু সেবা করা সম্ভব সেটি করা হচ্ছে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের।’
কীভাবে যাবেন দার্জিলিং টিলায়?
এমআর খান চা-বাগানের দার্জিলিং টিলায় যেতে হলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে বাস, প্রাইভেট যানবাহন বা ট্রেনে করে আসতে হবে শ্রীমঙ্গলে। শহরের স্টেশন রোডে অবস্থিত পেট্রোল পাম্প এলাকায় পাওয়া যায় মোহাজেরাবাদগামী সিএনজি অটোরিকশা। একই স্থানে পাওয়া যায় জিপগাড়ি। এ গাড়িগুলো ‘চান্দের গাড়ি’ নামে স্থানীয়ভাবে পরিচিত। এসব চান্দের গাড়ি বা সিএনজি অটোরিকশায় চড়ে মোহাজেরাবাদ পশ্চিমপাড়া পেরিয়ে ১৫ মিনিটের মধ্যে পৌছে যাওয়া যাবে এমআর খান চা বাগানের গেইটে। সেখান থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ দিকে যাওয়ার পর পাওয়া যাবে আলোচিত দার্জিলিং টিলা। এছাড়া প্রাইভেট যানবাহন বা মোটরসাইকেলে গেলে বাগান কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে সরাসরি টিলাটির পাদদেশে পৌছে যাওয়া যাবে।
কোথায় থাকবেন?
শ্রীমঙ্গল উপজেলায় প্রায় শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, কটেজ রয়েছে। যার অধিকাংশই দার্জিলিং টিলার পাশেই উপজেলার রাধানগর, বিষামণি এলাকায় অবস্থিত। এসব মোটেল, রিসোর্ট, কটেজগুলোর যেকোনো একটিতে রাত্রিযাপন করতে পারবেন। প্রতি কক্ষের ভাড়া মোটেল, রিসোর্ট, কটেজভেদে দেড় হাজার থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে, সরকারি ছুটির দিনে, ঈদ-পূজার ছুটিতে শ্রীমঙ্গল ভ্রমণে আসলে অবশ্যই মোটেল, রিসোর্ট, কটেজগুলো অগ্রিম বুকিং করে আসতে হবে। নতুবা কক্ষ খালি পাওয়া দুরূহ হয়ে দাঁড়াবে।