× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

থেমে নেই বন্য প্রাণী শিকার

রহিম শুভ, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১২:৫৮ পিএম

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের বুড়িবাঁধ এলাকায় কয়েকটি বন্য প্রাণী হত্যা করে ব্যাগে ভরছে শিকারিরা। প্রবা ফটো

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের বুড়িবাঁধ এলাকায় কয়েকটি বন্য প্রাণী হত্যা করে ব্যাগে ভরছে শিকারিরা। প্রবা ফটো

দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবাধে বন্য প্রাণী নিধন চললেও তা ঠেকানোর প্রচেষ্টা যৎসামান্য। ঠাকুরগাঁও জেলায় বিভিন্ন ধরনের প্রাণী শিকার হচ্ছে অবলীলায়। এসব প্রাণী হত্যা করে তার মাংস খাচ্ছে শিকারিরা। এতে অনেক বিরল প্রজাতির প্রাণী চিরতরে লুপ্ত যাচ্ছে। 

জেলার সাঁওতালরাই বন্যপ্রাণী শিকার করে আসছে। বংশ পরম্পরায় তারা পশু শিকারকে পেশা হিসেবেও নিয়েছে। তবে সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগে এদেরকে মূল স্রোতোধারায় নিয়ে আসার পরেও থামেনি বন্য প্রাণী শিকার। এরা দলবেঁধে বিভিন্ন এলাকায় পাখি, শেয়াল, বেজি, বাগডাস, বনবিড়ালসহ বিভিন্ন প্রাণী হত্যায় মেতে উঠছে। 

খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, সাঁওতালরা তাদের বিশেষ দিবসে যেন পশু শিকারে বের হয়। পাশাপাশি অন্য দিনেও তারা শিকারে মত্ত হন। যেসব সংস্থা বন্য প্রাণী শিকার থেকে সাঁওতালদের গুটিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করে চলছেন, তাদের কার্যক্রম কিছুটা ফলপ্রসূ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। তবে তাদেরকে পুরোপুরিভাবে মূল স্রোতোধারায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে বন্ধ বন্য প্রাণী শিকার। 

বর্তমানে ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন স্থানে বন্য প্রাণী শিকারের চিত্র চলছে অবাধে। প্রাণী শিকারকে যারা পেশা হিসেবেও নিয়েছেন, তারা নিবৃত্ত হননি। এতে যে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেভাবে বণ্য প্রাণী শিকার চলমান রয়েছে, এভাবে চলতে থাকলে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে। 

সম্প্রতি সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের বুড়িবাঁধ এলাকায় দেখা যায়, একদল সাঁওতাল গম, ভুট্টাক্ষেতে বন্য প্রাণী শিকাররত। এ সময় তারা তীর-ধনুক, বল্লম, লাঠিসোটা দিয়ে কয়েকটি বেজি হত্যা উৎসবে মেতে ওঠে। তাদের শিকার উৎসব দেখতে সেখানে উৎসুক ও কৌতূহলী অনেক মানুষের ভিড় জমে যায়। 

দেখা গেছে, সাঁওতালদের ৪/৫ জনের একটি দল গমের ক্ষেতে লাঠি দিয়ে আঘাত করছে ও মুখ দিয়ে শব্দ করছে। এ সময় বেজিরা প্রাণভয়ে এদিক-ওদিক  ছোটাছুটি করতে থাকে। তখন সাঁওতালেরা তীর ছুড়ে তাদের শিকার করেন। শিকারি ব্রিটিশ সরেন বলেন, ‘বাপ-দাদার আমল থেকে বিভিন্ন পশুপাখি শিকার করে আসছি। এটা আমাদের পেশা। এ কাজে অনেকে বাধা দেন। তবে এসব প্রাণী শিকার করে তার মাংস খেয়ে থাকি আমরা।’ 

আরেক শিকারি মারথন সরেন বলেন, ‘বন্য প্রাণী শিকার করে আমরা খাই। প্রতিদিন শিকার না করলেও মাঝেমধ্যে শিকার করি। অনেকে বাধা দেন। তবে শখের কারণে আমরা এটা করি।’ 

জেলার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ জিন্নাত নাহার বলেন, ‘সবাই না কিছু কিছু আদিবাসী এবং সাঁওতাল সম্প্রদায় অবাধে বিভিন্ন পশু এবং বন্য প্রাণী শিকার করে থাকেন। নতুন প্রজন্ম এইসব প্রাণীর কথা শুধু বইয়ে পড়ে চিনবে। সবার উচিত হবে তারা যেন বন্য প্রাণী শিকার না করেন। এ ব্যাপারে তাদের সচেতন করে তুলতে হবে। তবেই শিকার বন্ধ হবে।’ 

জেলা আদিবাসী পরিষদের উপদেষ্টা আইনজীবী ইমরান হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘সাঁওতালরা যাতে বন্য প্রাণী হত্যা না করে তার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাদেরকে সংগঠন থেকে নিষেধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, শিকার বে-আইনি। আইনসিদ্ধ নয়। ই-এসডিও প্রেমদীপ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের বারবার সতর্ক করা হয়েছে। তারপরেও অনেকে বন্য প্রাণী শিকার করছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। যারাই শিকার করবে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে।’ 

 জেলা বন বিভাগের সহকারী কর্মকর্তা নুরুন্নাহার বেগম বলেন, ‘বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুসারে যেকোনো ধরনের বন্য প্রাণী শিকার করা পুরোপুরি বে-আইনি। বন বিভাগের পক্ষ থেকে সাঁওতালদের শিকার বন্ধে কোনো প্রকল্প চালু নেই। তবে বেসরকারি সংস্থা ইচ্ছা করলে তাদের নিয়ে কাজ করতে পারে। আমরা যেকোনো প্রোগ্রামে গেলে তাদের যথাসাধ্য বোঝানোর চেষ্টা করি।’

জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইসরাত ফারজানা বলেন, ‘বন্য প্রাণী শিকার করা একটি অপরাধ, এটি সাঁওতালদের বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছ। শিকার করলে শাস্তির বিধানও রয়েছে। বণ্য প্রাণী রক্ষা করা হলে কী উপকার হয়, তা তাদের জানাতে হবে। নির্দিষ্ট এলাকার তথ্য থাকলে এবং আমাদের জানালে ওই এলাকায় গণসচেতনতা বাড়াতে কার্যসূচিও নেওয়া হবে। এতে বণ্য প্রাণী হত্যারোধ করা যাবে। 

বণ্য প্রাণী ধরা, মারা, খাওয়া, ক্রয়-বিক্রয়, পাচার, দখলে রাখা বা শিকার করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। বণ্য প্রাণী দেশের সম্পদ, জীবন, জীবিকা ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বণ্য প্রাণী সংক্রান্ত অপরাধ দমনে সবাই এগিয়ে আসবেন এবং এসব জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ভূমিকা রাখবেন এমনটাই প্রত্যাশা সবার।’ 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা