ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা
প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ২১:৫১ পিএম
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ২২:০৯ পিএম
সীমান্তে ভারত-বাংলাদেশিদের মিলনমেলা। ছবি : প্রবা
দেশভাগ হয়েছে, এপারে ওপারে রয়ে গেছে বিচ্ছিন্ন আবেগ, ভালোবাসা। যে ভালোবাসার মিলনে কাঁটাতারের বাধা মানে না মন। বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তে প্রতিবছর স্বজনদের এক নজর দেখতে জমায়েত হয়ে থাকেন হাজারও মানুষ। বলছি তাদের কথা, যাদের স্বজনরা ওপার বাংলা ও এপার বাংলায় ছড়িয়ে আছেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তে বাস করা মানুষদের মিলনমেলায় প্রতি বছর আয়োজন করা হয় পাথরকালি পূজা। শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) হয়ে গেল দুই বাংলার মানুষের এই মিলনমেলা।
ব্রিটিশ শাসনামল থেকে ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় দিন ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার চাপাসার তাজিগাঁও সীমান্তের টেংরিয়া গোবিন্দপুর কুলিক নদীর পাড়ে প্রতি বছর এক দিনের জন্য এ মেলা বসে। দেশ স্বাধীনের পর মেলাটি বাংলাদেশের অংশে পরলেও মেলার দিন সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেয় ভারত। করোনা মহামারি কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালের এই মিলনমেলা হয়নি।
এদিন বিভিন্ন জেলা থেকে আগত হাজারও নারী-পুরুষ ভারতে বসবাসরত স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার জন্য সকাল থেকে ভীড় করতে থাকেন মেলায়। ভোর থেকে রিকশা, ভ্যানসহ বিভিন্ন বাহনে মেলায় উপস্থিত হন হাজারও মানুষ।
পঞ্চগড় থেকে বড় ভাইকে দেখতে এসেছেন নিমাই চন্দ্র সরকার। তিনি বলেন, ‘প্রায় ১১ বছর আগে আমার বড় ভাই পরিবার নিয়ে ভারতে বসবাস শুরু করে। ভাইকে দেখতে আসছি। কোনো প্রকার বাধা ছাড়াই ভারতীয়রা মেলায় আসতে পারেন।’
বড় ছেলে ও তার স্ত্রীর জন্য কাঁটাতারের পাশে অপেক্ষা করছিলেন বিন্দু বালা। তিনি বলেন, ‘গতবছর মেলা হয়নি। এখানে এসে ফিরে গেছি। এবার বড় ছেলে ও তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে অপেক্ষা করছি। তারা সাত বছর ধরে ভারতে বাস করছে। প্রতিবছর এই দিনটার অপেক্ষায় থাকি।’
ভারত সীমান্তের ৩৪৬ ও ৬৮ নম্বর পিলারের কাঁটাতারের বেড়ার পাশে হয় দুই দেশের মানুষের সাক্ষাৎ। নিরাপত্তায় ছিলেন ভারতের মাকড়হাট ও শিমুলতলী ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা। কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁক দিয়ে স্বজনদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন মেলায় আগতরা। করেন খাবার বিনিময়। দীর্ঘ দিন পর স্বজনদের পেয়ে অনেকেই কান্নাই ভেঙ্গে পড়েন।
অনুকুল পালের বড় পরিবার নিয়ে থাকেন ভারতের শিলিগুড়িতে। তাদের এক পলক দেখতে ঠাকুরগাঁও সদর আকচা ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রাম থেকে এসেছেন অনুকুল পাল। তিনি বলেন, ‘আমি গতরাতে এসেছি। মেলার পাশে আমার পিষির বাড়ি। রাত থেকে অপেক্ষা করছি এক নজর বোনকে দেখার জন্য।’
নীলফামারি জেলা থেকে পিষির সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন আখিরানী পাল। তিনি বলেন, ‘ভারতে বসবাসরত স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য আমরা মেলায় আসি। এই দিনটির জন্য প্রতিবছর আমরা অপেক্ষা করি।’
এ বিষয়ে হরিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, ‘২০২০ ও ২০২১ সালে দুই দেশের মিলমেলা হয়নি। এবার হচ্ছে। মেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।’