দিনাজপুর সংবাদদাতা
প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:২৪ পিএম
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:৪৬ পিএম
দিনাজপুরের বিরলে উদ্ধার করা রাসেলস ভাইপার।
দিনাজপুর বিরলের সরিষা ক্ষেত থেকে উদ্ধার করা বিরল প্রজাতির ভয়ংকর বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপটি রাজশাহীতে স্থানান্তর করা হয়েছে।
শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) বিকালে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার কালিয়াগঞ্জ ফরেস্টের বিট অফিস থেকে সাপটি নিয়ে গেছে রাজশাহী বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের স্নেক রেস্কিউর সেন্টার।
প্লাস্টিকের বস্তায় সংরক্ষিত সাপটি সেই সেন্টারের কর্মকর্তা মো. রিপন ইসলামের হাতে তুলে দেন কালিয়াগঞ্জ ফরেস্টের বিট কর্মকর্তা মো. মহসীন আলী।
লালচে হলুদ রঙের প্রায় ৬ ফুট লম্বা রাসেলস ভাইপারটি গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে বিরল উপজেলার ৬ নম্বর ভান্ডারা ইউনিয়নের তুলাই নদীর রেংটার ব্রিজসংলগ্ন একটি সরিষা ক্ষেতের ভেতর থেকে উদ্ধার করেন কালিয়াগঞ্জ ফরেস্টের বিট কর্মকর্তা মো. মহসীন আলী।
দিনাজপুর সামাজিক বন বিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা ও জাতীয় উদ্যান রামসাগর দীঘির তত্ত্বাবধায়ক মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘প্রায় পাঁচ কেজি ওজনের সাপটিকে অজগর ভেবে প্রথমে দিনাজপুরের জাতীয় উদ্যান রামসাগরে রাখার চিন্তা-ভাবনা করা হলেও পরে জানা যায় এটি ভয়ংকর বিষধর রাসেলস ভাইপার অর্থাৎ চন্দ্রবোড়া সাপ। তাই, সাপটিকে জাতীয় উদ্যান রামসাগর দীঘির মিনি চিড়িয়াখানায় না রেখে রাজশাহী বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের স্নেক রেস্কিউর সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়েছে।’
সম্ভবত সাপটি ভারত থেকেই এসেছে। সাপটি উদ্ধারস্থানের এক থেকে দেড় কিলোমিটারের অদূরে ভারতীয় সীমান্ত রয়েছে।
রাজশাহী বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের স্নেক রেস্কিউর সেন্টারের কর্মকর্তা রিপন ইসলাম জানান, বাংলাদেশে যেসব সাপ দেখা যায় সেগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে বিষাক্ত।
নিজে থেকে ছুটে এসে আক্রমণ করে এই বিষধর সাপটি। দাঁত অনেক গভীর ও সুঁচালো। বিষ প্রয়োগে সময় নেয় এক সেকেন্ডেরও কম। এর কোনো এন্টিভেনম নেই।
অন্যান্য সাপ যেখানে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ৩০টি ডিম পাড়ে, সেখানে এই সাপটি ডিম তো পাড়েই না বরং একসঙ্গে ৬০ থেকে ৮০টি বাচ্চা ফুটায়। বিশেষ করে নদীর অববাহিকায় এবং চর এলাকায় এখন এই সাপটির জন্য উপযুক্ত বংশবৃদ্ধির স্থান।
এই প্রজাতির সাপের কামড়ের কিছুক্ষণ পরই দংশিত স্থানে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। ব্যথার পাশাপাশি দংশিত স্থান দ্রুত ফুলে যায় এবং ঘণ্টা খানেকের মধ্যে কামড়ানো স্থানের কাছে শরীরের আরো কয়েকটি অংশ আলাদাভাবে ফুলে যায়।
সাপটির নাম রাসেলস ভাইপার। বাংলাদেশে চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া নামেও পরিচিত। বাংলাদেশে যেসব সাপ দেখা যায় সেগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে বিষাক্ত। বাংলাদেশে শঙ্খিনী সাপ কমে যাওয়ায় রাসেলস ভাইপারের প্রাকৃতিক প্রজনন বেড়ে গেছে। শঙ্খিনী সাপের মূল খাদ্যই ছিল এ রাসেলস ভাইপার সাপটি।
আইইউসিএনের ২০১৫ সালের লাল তালিকা অনুযায়ী রাসেলস ভাইপার বাংলাদেশে সংকটাপন্ন প্রাণীর তালিকায় আছে।
দেশে দীর্ঘদিন দেখা না পাওয়া গেলেও ২০১০-১১ সালের দিকে পদ্মার অববাহিকা ধরে ভারত থেকে রাসেলস ভাইপার বাংলাদেশে এসেছে। প্রথম রাজশাহীতে রাসেলস ভাইপারের দেখা মেলে।
এরপর পাবনা, কুষ্টিয়া, নওগাঁ, দিনাজপুর, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, চাঁদপুরে দেখা মিলেছে।