শামসুল আলম, পাবনা
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৩:৪৯ পিএম
চাটমোহরের জার্জিস মোড় থেকে মান্নানগরের আঞ্চলিক মহাসড়কের সংস্কার কাজ ফেলে গত ৫ আগস্ট উধাও হয়ে যান ঠিকাদার। এরপর থেকে দেখা নেই তার। নিমাইচড়া ইউনিয়নের চর সেনগ্রাম বাজার এলাকায়। প্রবা ফটো
চাটমোহরের জার্জিস মোড় থেকে মান্নানগরের আঞ্চলিক মহাসড়কের সংস্কার কাজ বন্ধ করে উধাও হয়েছেন ঠিকাদার। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে সড়কটি দিয়ে চলাচলকারীরা। কবে সড়কের সংস্কারকাজ শেষ হবে, তা জানা নেই কারও। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানায়, মহাসড়কটি নিয়ে কয়েক বছর ধরেই চরম ভোগান্তিতে মানুষ। অবশেষে ভোগান্তি থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য শুরু হয় সংস্কারকাজ। এতে জনমনে স্বস্তি দেখা দেয়। কিন্তু সেই স্বস্তি বেশি দিন টেকেনি। বরং দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষের। সংস্কারকাজ এখন পরিণত হয়েছে অভিশাপে। চাটমোহরের জার্জিস মোড় থেকে মান্নানগরের আঞ্চলিক মহাসড়কটির সংস্কারকাজ করছিল যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান, সেটির মালিক গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে উধাও। ফলে বন্ধ রয়েছে সংস্কারকাজ। আর দিন দিন বাড়িয়ে তুলেছে দুর্ভোগ।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১১ জুন তূর্ণা এন্টারপ্রাইজ নামের সিরাজগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ১৮ কিলোমিটারের এই সড়ক সংস্কারের ব্যয় ধরা হয় ১৬ কোটি ৪২ লাখ ৬১ হাজার টাকা। কাজ শেষ করার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয় চলতি ফেব্রুয়ারির মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত। কিন্তু ঠিকাদার সড়কে ১২ কিলোমিটার পাথর ফেলেই উধাও। ঠিকাদার আজাদুর রহমানের বিরুদ্ধে এমন কাজ শেষ না করার অনেক নজির রয়েছে। কাজ শেষ না করেই যোগসাজশের মাধ্যমে তিনি কোটি কোটি টাকার বিল তুলে নেন।
সম্প্রতি সরেজমিনে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ১৮ কিলোমিটার সড়কের ১২ কিলোমিটারের পুরোনো কার্পেটিং উঠিয়ে নতুন করে পাথর ফেলা হয়েছে। সেই পাথর উঠে যাওয়ায় চলাচলকারীদের অবর্ণনীয় ভোগান্তি বয়ে নিয়ে এসেছে। বাকি ৬ কিলোমিটার ব্যস্ততম এই সড়কে হাঁটুসমান বালু রয়েছে। এতে গাড়ি নিয়ে চলাচল করা অসাধ্য ব্যাপার। তারপরেও নিরুপায় হয়ে অনেকে গাড়ি নিয়ে ঢুকছে এ পথে। বালুতে তাদের গাড়ি নিশ্চল হয়ে পড়ছে। যাত্রীবাহী ও মালবাহী গাড়ি বালুতে আটকা পড়ায় যাত্রী ও চালকরা বেহাল দশায় পড়ছে। সড়কের বালুর কারণে পাশের সব গাছপালা বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। ঘরবাড়িগুলো ধুলায় পড়েছে ঢাকা। অন্যদিকে সড়কের বালু ও ধুলার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে এলাবাসী।
সড়ক দিয়ে চলাচলকারী গাড়ির যাত্রী ও চালকরা জানায়, সড়কটি পাবনা জেলার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আঞ্চলিক মহাসড়ক। এটা দিয়ে প্রতিদিন ১০-২০ হাজার গাড়ি চলত, কিন্তু এখন চলে কয়েকশ গাড়ি। সড়কের বেহলা অবস্থার কারণে সড়কে চলাচলকারী গাড়ির সংখ্যা কমে গেছে। এতে চলতে গিয়ে অনেকে আহত হচ্ছে। পরিচ্ছন্ন পোশাকে একবার এই সড়ক দিয়ে গেলে তার পোশাকটি আর ব্যবহার উপযোগী থাকছে না। মাথা ঢেকে আর মুখে মাস্ক পরেও চলাচল করা যায় না। সড়কের যে অবস্থা তাতে বর্ষার সময় কী হবে তা ভেবে আতঙ্কিত চালক, যাত্রীসহ সবাই।
ঠিকাদারের গাফিলতির কথা স্বীকার করেছেন পাবনার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুর আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এখানে ঠিকাদারের গাফিলতি আছে। আমরা ইতোমধ্যেই একাধিকবার তাকে সতর্ক করেছি। নোটিস দিয়েছি। ইতোমধ্যেই তার চুক্তি বাতিলের জন্য বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছি। দেখা যাক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে
কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়।’ সড়কের দুরবস্থার ব্যাপারে কথা বলার জন্য উধাও হওয়া ঠিকাদার আজাদুর রহমানের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে স্থানীয়রা মনে করে, নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করে মহাসড়কটিতে চলাচলকারীদের ত্রাহী অবস্থা থেকে মুক্তির উদ্যোগ নিতে হবে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের।