গাইবান্ধা বিএডিসি
গাইবান্ধা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:৩৮ পিএম
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:৪১ পিএম
সেচ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা উপেক্ষা করে সেচ লাইসেন্স প্রদানে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে গাইবান্ধা বিএডিসির সেচ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। নিয়মবহির্ভূতভাবে ৪৫০ ফিটের মধ্যে দুটি সেচ লাইসেন্স দিয়েছে বিএডিসি; যা বিদ্যমান সেচ নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
বিষয়টি নিয়ে গত ৯ ফেব্রুয়ারি উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সদর উপজেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের কাজলঢোপ গ্রামের আলতাফ হোসেন নামের এক কৃষক। এ ছাড়া স্কিমটির বিদ্যুৎ সংযোগ কর্তন করতে গাইবান্ধা পল্লী বিদ্যুতের প্রধান কর্মকর্তার কাছেও আলাদা অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কাজলঢোপ গ্রামের সাদেকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে (লাইসেন্স নং ২৮২১) সেচ লাইসেন্স দেয় গাইবান্ধা বিএডিসির সেচ বিভাগ। তবে তার সেচ পাম্প থেকে অপর একটি সেচ পাম্পের দূরত্ব মাত্র ৪৫০ ফুট। শুধু তাই নয়, সাদেকুল ইসলাম যে দাগে লাইসেন্স পেয়েছেন সেখান থেকে প্রায় ৪০০ ফিট উত্তরে অন্যের জমিতে সেচ বোরিং করে পল্লী বিদ্যুতের (বিদ্যুৎ সংযোগ হিসাব নম্বর ১০৬৫০১১৯০৪৩২০) ঝুলন্ত তারের মাধ্যমে সেচ পাম্প চালাচ্ছেন। ফলে যেকোনো সময় বাঁশের খুঁটিতে ব্যবহৃত ঝুলন্ত বৈদ্যুতিক তারে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, রাস্তাসংলগ্ন শাহাবুল ইসলামের মালিকানাধীন বিএডিসির সেচ পাম্প রয়েছে। এই পাম্প থেকে কিছুটা পশ্চিম-উত্তরে সাদেকুল ইসলামের সেচ পাম্প। এই দুই পাম্পের মধ্যবর্তী দূরত্ব আনুমানিক ৪০০-৪৫০ ফুট।
স্থানীয়রা জানান, সাদেকুল ইসলাম তার মালিকানাধীন জমির ১৫৬৬ দাগ দেখিয়ে বিএডিসির লাইসেন্স নিয়েছেন। নিয়েছেন পল্লী বিদ্যুৎ থেকে বিদ্যুৎ সংযোগের অনুমোদনও। কিন্তু পাম্পটিও ওই নির্ধারিত দাগে নেই। বরং ওই দাগের জমি থেকে প্রায় ৩০০ ফুট উত্তরের স্থানীয় কৃষক অসিজল হাজীর জমি ভাড়া নিয়ে পাম্প বসিয়েছেন।
বিএডিসির সেচ ব্যবস্থাপনা নীতিমালায় দুটি অগভীর নলকূপের মধ্যে সর্বনিম্ন ২৫০ মিটার (৮২০ ফুট) দূরত্ব থাকতে হবে। কিন্তু বাস্তবে এই নিয়ম উপেক্ষা করে লাইসেন্স দিয়েছে বিএডিসির সেচ বিভাগ। যার ফলে কৃষকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, বিএডিসির সেচ বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ছাড়া এত কম দূরত্বে লাইসেন্স সম্ভব নয়। এতে বোঝা যায়, বিএডিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দুর্নীতি করেছেন।
অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলাম বলেন, অনুমতি পাওয়ার পর থেকেই অন্যের জমিতে পাম্পটি চালাচ্ছি। সেখানে একটি বডিং ছিল, তাই সংযোগটি দিয়েছি। তবে আগামী বছরই নিজের জমিতে পাম্পটি স্থাপন করব। অন্য পাম্পের দূরত্বের ব্যপারে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
বিএডিসির সেচ কর্মকর্তা ও সহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্র সেচ) গোলাম রাব্বানী লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে অসংগতির বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
গাইবান্ধা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) রাশেদ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘অভিযোগটি পেয়েছি। সরেজমিন পরিদর্শন করতে একজন কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সদর উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও ইউএনও মাহামুদ আল হাসান বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া তদন্তে কারও এমন অনিয়মের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে