ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:৪৪ পিএম
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:৫১ পিএম
ক্রেতারা ভিড় করছেন ফুলের দোকানে। প্রবা ফটো
রাত পোহালেই পহেলা ফাল্গুন। সেই সঙ্গে ভালোবাসা দিবস। একই মাসে পালিত হবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসও। ঋতুরাজ বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসকে রাঙাতে কতই না আয়োজন ফুল দোকানিদের। এর মূল অনুষঙ্গ রং-বেরঙের ফুল। পহেলা ফাল্গুন, ভালবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ তিন দিবসকে কেন্দ্র করে চাঙা হয়ে উঠেছে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের ফুলের দোকানগুলো।
শীতের পর বসন্তের আগমনে ফাল্গুনের শুরু হয় ভালবাসা দিবস দিয়ে। ফাল্গুনকে প্রতি বছর বরণ করে নিতে তরুণ-তরুণী ও নানা বয়সের মানুষসহ প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরাও দিনটি উদযাপন করে থাকে।
মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে- কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের গানের এ লাইন দিয়ে বসন্তকে বরণ করে নেয় দেশ ও বিদেশের তরুণ-তরুণী ও নানা বয়সের মানুষেরা। সব আবেদন, অনুরাগ, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশের বড় মাধ্যম ফুল। বাসন্তী রঙের শাড়িতে সাজবে তরুণীরা। মাথায় গুঁজবে রেং-বেরঙের বাহারি ফুল।
প্রতিবছরই দেশে ফুলের চাহিদা বাড়ে ফেব্রুয়ারি মাসে। এ সময়টাতে ফুলের ব্যাপক চাহিদা থাকে বিভিন্ন উৎসবের কারণে। বছরের অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাসে ফুলের চাহিদা থাকে আকাশচুম্বী, ফুলের ভরা মৌসুমে বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ তিন দিবসের বাজার ধরতে ব্যস্ত সময় পার করে ফুল ব্যবসায়ীরা।
এ সময়ে সারা দেশে প্রায় ৩৫০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়। সেই সুবাদে ভৈরবেও জমে উঠেছে ফুল বেচাকেনা। বিভিন্ন ফুলের দোকান ও নার্সারিগুলোতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বাহারি ফুল। বিশেষ করে শহরের বঙ্গবন্ধু সরণিতে মুক্তিযোদ্ধা চত্বর মোড়ে সাজিয়ে বসেছে বাহারি ফুলের সাজঘর। এ যেন ঢাকার বাহিরে আরেকটি শাহবাগ মোড়। এদিকে শহরের কমলপুর গাছতলাঘাট রয়েছে বেশ কয়েকটি ফুলের দোকান। এছাড়াও বছরজুড়ে বিভিন্ন উৎসব বিশেষ করে জন্মদিন, বিয়ে, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে সারা বছর জুড়েই ফুল বাণিজ্য চলে।
ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছর গড়ে ২০ শতাংশ হারে দেশে ফুল উৎপাদন বাড়ছে। এছাড়া দেশে অনেক ফুল চাষ করা যায়, তবে অর্কিড ফুলসহ বেশকিছু ফুল দেশে চাষ হচ্ছে না। ফলে এমন কয়েক ধরনের ফুল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ভৈরব উপজেলার শিমুলকান্দি মধ্যেরচর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাঠভর্তি বাগানে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন জাতের ফুল। সেই ফুলের বাগানে পরিচর্যা করছেন চাষীরা।
ফুলচাষি জাকির মিয়া বলেন, ‘বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ফুলের চাহিদা থাকে বেশি। মালিক নিজেরই ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেই চাহিদা মেটাতে আমরা দিনরাত পরিশ্রম করছি। দিবসগুলো উপলক্ষে ফুলগাছের পরিচর্যা করছি। ফুলগুলো যেন ভালো থাকে সেই দিকে বিশেষ নজর রাখছি।’
ফুল বাগানের মালিক দুলাল মিয়া বলেন, ‘সারা বছরই আমরা ফুল বিক্রি করে থাকি। তবে প্রতি বছরে বিশেষ দিনগুলোতে ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। আমরা আমাদের বাগান থেকে নিজেদের দোকানের চাহিদা মিটিয়ে যারা মৌসুমি ব্যবসায়ী বা এ বিশেষ দিনগুলোতে অস্থায়ী দোকান নিয়ে বসে, তাদের কাছেও ফুল বিক্রি করছি। ফুলের দামও ভালো পাচ্ছি। তবে বাগানের ফুলে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে আমরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হই। প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ২০০ ফুল সংগ্রহ করা হয়। প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার ফুল বিক্রি করতে পারি।’
এদিকে শহর ঘুরে দেখা যায় বঙ্গবন্ধু সড়কের মুক্তিযোদ্ধা চত্বর মোড়, কমলপুর নিউটাউন এলাকা, বাসস্ট্যান্ডের কলেজ রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ী দোকান সাজানো রয়েছে অর্ধশতাধিক বিভিন্ন বাহারি রঙের ফুল দিয়ে।
এ বিষয়ে ক্রেতারা বলছেন, সারা বছর ফুল কেনা হয় না। বিশেষ দিনে বিশেষ মানুষদের জন্য ফুল কিনতে দোকানে এসেছেন। বিশেষ করে ভালবাসা দিবসে নিজের আপন মানুষদের ফুল উপহার দিতে আনন্দিত হয়।
এ সময় শিক্ষার্থী মায়া ও ঝুমা বলেন, ফাল্গুন মাসেই আমরা বিভিন্ন ধরনের দেশী-বিদেশি ফুল দেখতে পাই। ফুলকে ভালোবাসে না পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ নেই। ফুল আমাদের মনকে উচ্ছ্বসিত ও আকর্ষণ করে। তাই ফুল কিনতে এসেছি।
মৌসমি ফুল ব্যবসায়ী রিমন বলেন, আমি একজন মৌসুমি ফুল ব্যবসায়ী। শহর থেকে পাইকারি দামে ফুল কিনে গ্রামে নিয়ে খুচরা বিক্রি করি। এবার ফুলের দাম কিছুটা বেশি। যার কারণে বেশি দামে ফুল কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। ভালোবাসা দিবসের অন্যতম আকর্ষণ ফুল। প্রিয়জনের জন্য এ সময় ফুল ছাড়া অন্য কোনো উপহার ভাবতে পারে না মানুষ। দাম হলেও ফুল কিনতে আগ্রহী ক্রেতারা।
ময়না ফ্লাওয়ার গার্ডেনের মালিক ময়না মিয়া বলেন, আমাদের ফুল ব্যবসায়ীদের সারা বছরের আয়ের একটা বৃহৎ অংশ ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আসে। এ বছর আমাদের ব্যবসা তেমন ভাল হয়নি। তিনটি দিবসে ফুলের চাহিদা পূরণ হবে কি না জানি না, তবে এখন পর্যন্ত ব্যবসা স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আছে। বছরের অন্য সময় এত পরিমাণ ফুল বিক্রি হয় না। তাই ভরা মৌসুমে যা আয় হবে- তা দিয়েই সারা বছর চলা যাবে। খরচ বাদ দিয়ে এর তিন ভাগের একভাগ মুনাফা থাকবে বলেও জানান এ ফুল ব্যবসায়ী।
ফুল বেশি দামের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাদের বেশি দামে ফুল কিনে আনতে হচ্ছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার বিদেশি ফুল আমদানিতে খরচ বেশি হচ্ছে। যে কারণে ফুলের দাম কিছুটা বাড়তির দিকে। তবে ফেব্রুয়ারির বিশেষ দিবসগুলোতে ক্রেতারাও এ দাম নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছেন না।
ভৈরবে বিভিন্ন ফুলের দোকানগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, লাল গোলাপ বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ৩০-৫০ টাকা, গোলাপ ও রজনীগন্ধা কাগজে মোড়াতে লাগছে ১২০-১৫০ টাকা, অন্য রঙের গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা, রঙিন গ্লাডিওলাস ৩০-৪০ টাকা, রজনীগন্ধার স্টিক ১৫-২০ টাকা, গাঁদা ৫০ টাকা থেকে ১০০, ফুলের তোড়া নরমাল সর্বনিম্ন সাড়ে ৪০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা, জারবেরা ৪০ থেকে ২০০ টাকা। এর মধ্যে তরুণদের পছন্দের শীর্ষে লাল গোলাপ ও জারবেরা রয়েছে।