আবু সালেহ মো রায়হান, পঞ্চগড়
প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৭:২৪ পিএম
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:৪২ পিএম
ভিনদেশী ফুল টিউলিপের সৌর্ন্দযে উচ্ছ্বসিত দর্শনার্থীরা। প্রবা ফটো
মাঘের শীতে বাগানজুড়ে ফুটে থাকা বর্ণিল টিউলিপ ফুল জানান দিচ্ছে বসন্তের আগমনী বার্তা। সূর্যের আলো আর তাপ নিয়ন্ত্রণের বিশেষ ছাউনির নিচে সারি সারি টিউলিপ। দর্শনার্থীদের কেউ ফুলগুলো ছুঁয়ে দেখছেন, কেউ ছবি তুলছেন, কেউবা মুঠোফোনে ভিডিও কলে স্বজনদের দেখাচ্ছেন। কেউবা ফেসবুক রিলস তৈরি করছেন। কেউ আবার ফুল কিনে বাড়ি ফিরছেন। এমন চিত্রই দেখা গেছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের দর্জিপাড়া এলাকায়।
টিউলিপ বাগানে গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দর্শনার্থীদের ভিড় বেড়েছে। জনপ্রতি ৫০ টাকার টিকিট কেটে বাগানে ঢুকে উপভোগ করছেন টিউলিপের সৌন্দর্য। তেঁতুলিয়া উপজেলায় এবার চতুর্থবারের মতো ক্ষুদ্র চাষিদের মাধ্যমে প্রায় ৭০ শতক জমিতে ১৩ জন কৃষক-কৃষানীর মাধ্যেমে শীতের দেশের ফুল টিউলিপের চাষ করা হয়েছে। টিউলিপ বাগানের এ উদ্যোগ নিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)। প্রকল্পটিতে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)।
চলতি বছরে অরেঞ্জ ভ্যান আইজেক, প্যারাডি, পিঙ্ক এডোর, ফারডিউক্স, এপেলডর্নস এলিট, ব্লাসিং এপেলডর্নসসহ ৯টি প্রজাতির ২০ হাজার টিউলিপের বাল্ব লাগানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শীতপ্রধান দেশে টিউলিপ ফুল ভালো হয়। টিউলিপ ফুল চাষের ক্ষেত্রে দিনের বেলা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহনশীল ধরা হয়। এর চেয়ে বেশি তাপমাত্রা হলে ফুল যথাযথভাবে নাও ফুটতে পারে। স্বাভাবিকভাবে রোপণের ১৮-২০ দিনের মধ্যে কলি আসতে শুরু করে। ২৫-৬০ দিন পর্যন্ত টিউলিপ ফুল স্থায়ী হয়।
খুলনা থেকে টিউলিপ বাগান দেখতে আসা আবু সাঈদ বলেন, ‘তেঁতুলিয়ায় ঘুরতে এসে শুনি, এখানে টিউলিপ ফুটেছে। পত্রিকা, মুঠোফোন আর টেলিভিশন ছাড়া কখনওই টিউলিপ সরাসরি দেখা হয়নি। সেই কৌতূহল থেকে টিউলিপ বাগানে আসা। এখানে এসে বিদেশি এ ফুল ছুঁয়ে দেখতে পেরে ভালোই লাগছে।’
সানজানা মেরি নামে ঠাকুরগাঁও থেকে আসা এক দর্শনার্থী বলেন, ‘অনেক ভালো লাগল টিউলিপ দেখে। তবে টিউলিপ বাগানে প্রবেশমূল্য যে ৫০ টাকা করা হয়েছে, সেটা আরেকটু কমালে সাধারণ মানুষের জন্য ভালো হতো।’
টিউলিপ চাষি (উদ্যোক্তা) আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘পিকেএসএফ ও ইএসডিওর সহযোগিতায় এবার আমরা ১৩ জন নারী উদ্যোক্তা ৯ প্রজাতির টিউলিপ চাষ করেছি। ফুল ফোটার পর থেকে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখানে ভিড় করছেন। নেদারল্যান্ডস থেকে টিউলিপের একেকটি বাল্ব আনতে আমাদের প্রায় ১০০ টাকা করে খরচ পড়েছে। বর্তমানে বাগান থেকেই একেকটি ফুলের স্টিক ১৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া এসব ফুল ঢাকায়ও পাঠানো হচ্ছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে উৎপাদন করা এ ফুল বিক্রি করতে পারায় আমরা আর্থিকভাবে বেশ উপকৃত হচ্ছি।’
ইএসডিওর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক মুহম্মদ শহীদ উজ জামান বলেন, ‘এবার চতুর্থবারের মতো তেঁতুলিয়ায় নারী উদ্যোক্তারা টিউলিপ ফুল ফুটিয়েছেন। গ্রামীণ নারীদের অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে সাবলম্বী করে তোলার পাশাপাশি তেঁতুলিয়াকে ইকো ট্যুরিজমে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।’
জেলা প্রশাসক সাবেত আলী বলেন, ‘পঞ্চগড়ে পর্যটক আর্কষণে জেলা শহরের করতোয়া নদীর তীরে ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ, মীরগড়ে পার্ক নির্মাণসহ নানামুখী পদক্ষেপ হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে গত কয়েকবছর ধরে ভিনদেশী ফুল টিউলিপ পর্যটকদের আকর্ষণ করছে। আমি এ ফুল উৎপাদনে সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাই। আমরা সকলের সহযোগিতায় পঞ্চগড়কে পর্যটক নগরীতে রূপান্তর করতে পারব বলে আশা করি।’
২০২২ সালে তেঁতুলিয়ায় প্রথমবারের মতো পাইলট প্রকল্প হিসেবে টিউলিপ ফুলের চাষ হয়। ওই বছর উপজেলার শারিয়ালজোত ও দর্জিপাড়া গ্রামের ৮ জন নারী উদ্যোক্তা ৪০ শতাংশ জমিতে ৬ প্রজাতির ৪০ হাজার টিউলিপ ফুল চাষ করেছিলেন।