শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:৩২ পিএম
গাজীপুরের শ্রীপুরে মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও থানা পুলিশের অবহেলায় এক নবজাতককে দাফন করতে পারেনি তার পরিবার। লাশ নিয়ে থানায় গেলেও পুলিশ অভিযোগ না নিয়ে থানা থেকে বের করে দেওয়ারও অভিযোগ ভুক্তভোগীর। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই নবজাতকের মৃত্যু হয়।
স্থানীয়রাসহ ভুক্তভোগী জানান, গত ২৯ জানুয়ারি দুপুরে জমি-সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিপক্ষ রফিক ও তার ৪-৫ সহযোগী আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর বাড়ির উঠানে গিয়ে তাকে লাথি মরালে সে গুরুতর আহত হয়। স্বজনেরা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। ওইদিন রাতেই গৃহবধূ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করলে শ্রীপুর থানার এসআই মোহাম্মদ সুরুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে উল্টো গৃহবধূর স্বজনদের শাসিয়ে আসে। পরে গৃহবধূর অবস্থার অবনতি হলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে স্বজনেরা। ৭ ফেব্রুয়ারি সিজারিয়ানের মাধ্যমে নবজাতকের জন্ম দেয় আহত গৃহবধূ। কিন্তু নবজাতকের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ময়মনসিংহ হাসপাতালের আইসিওতে রাখা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় তার মৃত্যু হয়। ওই রাতেই নবজাতকের লাশ নিয়ে থানায় অভিযোগ দিতে এলে পুলিশ নবজাতকের মা-বাবা, স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে তাদের থানা থেকে বের করে দেয়।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা বিষয়টি জানতে পারলে এসআই সুরুজ্জামান গৃহবধূর স্বামীকে নবজাতকের লাশ নিয়ে আবারও থানায় আসতে বলেন।
বুধবার নবজাতকের ফুপু রিমি আক্তার বলেন, ‘পুলিশ বলছে নবজাতকের লাশ নিয়ে থানায় আসার জন্য, আমরা লাশ নিয়ে থানায় অবস্থান করছি। লাশ রাতে মর্গে রাখা যাবে না বলেছে পুলিশ। আমাদের লাশ নিয়ে থানায় থাকতে বলেছে। কাল সকালে লাশ নিয়ে গাজীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন তারা।’
ভুক্তভোগী মাজাহারুল ইসলাম ও মিম আক্তার দম্পতি শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উত্তর পেলাইদ গ্রামের বাসিন্দা। এটি তাদের দ্বিতীয় সন্তান (ছেলে)।
অভিযুক্তরা হলেনÑ একই গ্রামের আব্দুল আউয়ালের ছেলে রফিক, রফিকের স্ত্রী আফরোজা, তাদের ছেলে আরিফ এবং রফিকের মামাসহ তাদের ৪-৫ সহযোগী।
অভিযুক্ত রফিক বলেন, ‘তাদের সঙ্গে আমাদের জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। আমরা গৃহবধূর পেটে লাথি দিয়নি। উল্টো তারা আমাকে মারধর করেছে।’
শ্রীপুর থানার এসআই মোহাম্মদ সুরুজ্জামান প্রতিপক্ষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভুক্তভোগী স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার কথা অস্বীকার করে সাংবাদিকদের থানায় তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন।
শ্রীপুর থানার ওসি মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, ‘প্রতিপক্ষের কাছ থেকে দারোগার টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। নবজাতকের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে।’