× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পোড়াদহ মেলা

যেখানে মাছ আর মিষ্টি খোঁজেন সবাই

মোহন আখন্দ, বগুড়া

প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:০১ পিএম

যেখানে মাছ আর মিষ্টি খোঁজেন সবাই

পঁচিশ কেজি ওজনের দুটি কাতলা মাছ নিয়ে শ্বশুরবাড়ি ফিরছিলেন ব্যবসায়ী রাশেদুল ইসলাম। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা থেকে নামার পর আঙিনায় পা দিতেই কলেজপড়ুয়া শ্যালক-শ্যালিকারা খুশিতে নেচে উঠতে শুরু করে।

দুই জামাই আর নাতি-নাতনিদের চমকে দিতে দেলোয়ার হোসেনও এনেছেন মাছ আকৃতির তৈরি সবচেয়ে বড় ছয় কেজি ওজনের মিষ্টি। এমন দৃশ্য বছরে এক দিনই মাঘের শেষ বুধবার চোখে পড়ে বগুড়ার ঘরে ঘরে। দিনটি ঐতিহাসিক পোড়াদহ মেলার।

শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে গাবতলীর গোলাবাড়ী সংলগ্ন পোড়াদহের মেলাটি এক দিনের হলেও আশপাশের গ্রামে জামাই উৎসব চলে তিন দিন। মেলায় ওঠা বড় মাছ আর হরেক মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়নের পাশাপাশি উপহার হিসেবে তাদের জন্য কেনা হয় কাঠের আসবাব।

প্রবীণদের বর্ণনা মতে, প্রায় দেড়শ বছর (অনেকের মতে ৪০০ বছর) আগে পোড়াদহ এলাকায় আশ্রয় নেওয়া এক হিন্দু সন্ন্যাসীর স্মরণে সেখানে প্রতি বছর মেলার আয়োজন চলে আসছে। সনাতন ধর্মের বিশ্বাস মতে, ওই সন্ন্যাসী যে মরা বটগাছের নিচে আশ্রয় নিয়েছিলেন, দীর্ঘ সাধনার পর সেটি আবার জীবিত হয়। এজন্য ওই স্থানটি হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে আজও পূজনীয়।

মেলা উপলক্ষে বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সূর্যোদয়ের পর থেকেই পোড়াদহমুখী সব সড়কে জনস্রোত নামে। অন্য বছরগুলোর মতো এবারও সবার দৃষ্টি ছিল মাছপট্টির দিকে। আগে বড় মাছ বলতে বাগাড়ের প্রতিদ্বন্দ্বী কোনোকিছু ছিল না। কিন্তু মহাবিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় ৩ বছর আগে ২০২২ সালে বণ্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পক্ষ থেকে বাগাড় মাছটি বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণার পর মেলায় আর বাগাড় মাছ চোখে পড়ে না। এবার বাজারে সবচেয়ে বড় মাছটি ছিল ২৫ কেজি ওজনের কাতলা। আল আমিন নামে স্থানীয় এক মৎস্যজীবী পাশের জেলা সিরাজগঞ্জ থেকে ৩টি কাতলা মাছ বিক্রির জন্য মেলায় এনেছেন। অপর দুটি কাতলার ওজন যথাক্রমে ১৫ ও ১৮ কেজি। আকারভেদে কাতলা মাছগুলো ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি হাঁকা হচ্ছিল। মেলায় রুই, পাঙাশ, কালবাউশ, বোয়াল, চিতলসহ নানা জাতের কার্প মাছের আমদানি ছিল প্রচুর।

মাছের পরে ভিড় ছিল মিষ্টির দোকানগুলোতে। মেলায় এবারও মাছ আকৃতির ছয় কেজি ওজনের ‘রুই মিষ্টি’ তৈরি করেন গাবতলীর সৈয়দ আহম্মেদ কলেজ স্টেশন এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক। প্রতি কেজি ৩০০ টাকা হিসাবে বড় ওই মিষ্টির দাম ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮০০ টাকা। 

মা-বাবার সঙ্গে মেলায় এসেছিল আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্কুলের ৯ম শ্রেণির ছাত্র পরাণ হোসেন। একসঙ্গে অনেকগুলো বড় মাছ আর বিশাল সাইজের মিষ্টি দেখে সে দারুণ খুশি। পরাণ বলে ‘এত্ত বড় মাছ আর মিষ্টি আগে কখনও দেখিনি।’ 

জয়পুরহাট থেকে আসা আব্দুল গফুর নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘পোড়াদহের মেলায় আগের মতো জ্যান্ত মাছ আর দেখি না। এখন ফ্রিজে রাখা মাছ আনা হয়।’ 

মেলার পার্শ্ববর্তী গোলাবাড়ী এলাকার আছিয়া সুলতানা জানান, ‘মেলা উপলক্ষে জামাইদের দাওয়াত দেওয়া বাধ্যতামূলক। ঈদে দাওয়াত না করলেও জামাইরা মন খারাপ করে না, কিন্তু মেলায় না ডাকলে তারা কষ্ট পায়।’ 

মেলা সংলগ্ন রাণীরপাড়া এলাকার প্রবীণ ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল মণ্ডল জানান, বুধবার এক দিনের মেলা শেষে আজ বৃহস্পতিবার মেলা প্রাঙ্গণে বসবে বউ মেলা। সেখানে চেয়ার টেবিল ও খাটসহ কাঠের নানা আসবাবপত্র কেনা-বেচা হয়।

বগুড়া লেখক চক্রের সভাপতি ইসলাম রফিক পোড়াদহের মেলাকে এ অঞ্চলের মানুষের ‘প্রাণের মেলা’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, পোড়াদহের মেলার জৌলুস হয়তো আগের মতো নেই কিন্তু তারপরেও এই মেলা ঘিরেই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এ অঞ্চলের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ভেদাভেদ ভুলে উৎসবের রঙে রঙিন হয়ে ওঠে। যা ঈদ কিংবা পূজাতেও দেখা যায় না।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা