× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কৃষিজমির মাটি ইটভাটায়

সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মধ্যাঞ্চল

প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:৪৪ এএম

কিশোরগঞ্জের নিকলী ও বাজিতপুর উপজেলায় কৃষিজমি থেকে দেদার চলছে মাটি বিক্রি। সম্প্রতি বাজিতপুরের দীঘিরপাড় হাওর এলাকায়। প্রবা ফটো

কিশোরগঞ্জের নিকলী ও বাজিতপুর উপজেলায় কৃষিজমি থেকে দেদার চলছে মাটি বিক্রি। সম্প্রতি বাজিতপুরের দীঘিরপাড় হাওর এলাকায়। প্রবা ফটো

কিশোরগঞ্জের উজান-হাওর অধ্যুষিত উপজেলা নিকলী ও বাজিতপুর এলাকার কৃষকদের দুঃসময়কে কাজে লাগিয়ে তাদের কৃষিজমির ওপরের মাটি (টপ সয়েল) কিনে নিয়ে ইটভাটায় ব্যবহার করছেন মালিকরা। এতে ওই এলাকায় কৃষিতে ধস নামার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

সম্প্রতি সরেজমিন নিকলী ও উপজেলার সদর ইউনিয়নের কুর্শা হাওর, জারুইতলা ইউনিয়নের বড় হাওর ও গুরুই ইউনিয়নের ছেত্রা হাওর এবং বাজিতপুরের কৈলাগ, হুমায়ুনপুর হাওর, সরারচর এলাকা, ভাগলপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে জানা যায়, শীত মৌসুমের শুরু থেকেই ফসলি জমির মাটি বিক্রি শুরু হয়। এক্সকাভেটর দিয়ে আবাদি জমির মাটির ওপরের অংশ ১০ থেকে ১৫ ফুট গভীর করে কেটে নেওয়া হচ্ছে। 

নিকলী সদর ইউনিয়নের কুর্শা গ্রামের সাজেদুল ইসলাম (৫৪), বশির মিয়া (৪২), বাজিতপুরের দীঘিরপাড় এলাকার কৃষক হোসেন আলী, কামরুল হাসানসহ একাধিক কৃষক জানান, এক একর বোরো জমিতে ৬০ থেকে ৭০ মণ ধান হয়। ধানের দাম কম থাকায় এবং আগাম বন্যায় ধান হারানোর ভয়ের কারণে কয়েক বছর ধরে তাদের উৎপাদন খরচ উঠছে না। অন্যদিকে, এক একর জমির মাটি বিক্রি করে নগদ পাওয়া যায় ৫০ হাজার টাকা। এজন্য তারা অনেকেই জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। তারা আরও জানান, এক মাস আগে কুর্শার দুটি ইটভাটার কাছে অন্তত ১০ কৃষক তাদের গড়ে এক একর জমির মাটি ৫০ হাজার টাকা করে বিক্রি করেছেন। ইটভাটার মালিকরা জমির ওপর থেকে ১০ ফুট গভীর করে মাটি নেবে। অভাব-অনটনের কারণে মাটি বিক্রি করেছি। স্থানীয়রা আরও জানান, বাজিতপুর নিকলীসহ আশপাশ এলাকায় গত ১৫ বছর ধরে ফসলি জমির মাটি বিক্রি চলছে। তবে এবার মাটি বিক্রি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এখন নিকলী সদর ইউনিয়ন ও জারুইতলা ইউনিয়নের শতকরা ২০ ভাগ কৃষক নগদ টাকার লোভে পড়ে মাটি বিক্রি করছেন।  

একটি ইটভাটার এক্সকাভেটর চালক রুমন শেখা (২৫) বলেন, নিকলীতে তিনটি ইটভাটা রয়েছে। আমরা চারটি এক্সকাভেটর মেশিন দিয়ে তিনটি ইটভাটার ৩০টি ট্রেইলরে মাটি ভরে দিই। প্রতিটি ট্রেইলর রাতে-দিনে ২০ বার মাটি বোঝাই করে নিয়ে যায়। এতে দৈনিক তিনটি ইটভাটায় ৬০০ ট্রেইলর মাটি নেওয়া হয়। নিকলীর মেসার্স ফামিহা ব্রিকস্ মালিক আমজাদ ইমরান খান, মেসার্স আলতাফ ব্রিকসের মালিক জহিরউদ্দিন, বাজিতপুরের মাসুম ব্রিকস ফিল্ডের ব্যবস্থাপক সাজ্জাদুল, বিএসবি ব্রিকসের মালিক আলাউদ্দিন খানসহ ব্রিকস ফিল্ডের সঙ্গে জড়িতরা জানান, তারা কারও জমি থেকে জোর করে জমির মাটি কিনছেন না। টাকার বিনিময়ে মাটি কিনে আনছেন। বাজিতপুর উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, কৃষকদের সচেতন করার পরও তারা কথা শুনছেন না। জমির উর্বরাশক্তি মাটির ওপর থেকে ১৫-২০ ইঞ্চির মধ্যে থাকে। জমির ওপরের অংশের মাটি সরিয়ে ফেলায় ওই জমির উর্বরাশক্তি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। নিকলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, প্রান্তিক কৃষক ও কৃষক পরিবারগুলোকে এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে। কৃষক ও কৃষিকে বাঁচাতে কৃষি বিভাগ বদ্ধপরিকর। তাই স্থানীয় প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে মাটি বিক্রি বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাপিয়া আক্তার বলেন, কোনোভাবেই ফসলি জমির মাটি বিক্রি করা যাবে না। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে ভূমি কর্মকর্তার সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। প্রয়োজনে আমি নিজে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেব। 

বাজিতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারাশিদ বিন এনাম বলেন, কৃষি ও কৃষকসহ সার্বিক স্বার্থে মাটি কাটার বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত। জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের দিয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা