ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:৩০ এএম
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:৩৫ পিএম
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে দোকান ভাড়া কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। প্রবা ফটো
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে দোকান ভাড়া কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে দোকানপাট ও বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে নারী-পুরুষসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সিলেট বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রমজান মিয়ার বাড়ি ও আড়াই ব্যাপারী বাড়ির যুবকদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ভৈরব ক্যাম্পের সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
আহতদের মধ্যে শফিক মিয়া (৫০), অনীক মিয়া (২১), মানিক মিয়া (৪৫), ভু্ট্টু মিয়া (৩৫), আবদুর রহিম (১৬), রোকেয়া বেগম (৪৫), সুজন (৩৪), অনীক মিয়া (১৬), দিনার (২৭), শ্রাবণ (২১), সোহাগ (৪০) ও নাদিম মিয়া (৩০) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে শফিক মিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ ছাড়া আলমগির মিয়া (৪০), কামাল মিয়া (৪৮), বিল্লাল মিয়া (৫০) ও মেহেদি (২৮) আহত হয়েছেন। মেহেদীকে গুরুতর অবস্থায় বাজিতপুর ভাগলপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বাকি অন্য আহতরা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভৈরবপুর উত্তরপাড়ার আড়াই ব্যাপারী বাড়ির শফিক মিয়া সিলেট বাসস্ট্যান্ড এলাকার রমজান মিয়ার বাড়ির সজীব মিয়ার দোকান ভাড়ায় পরিচালনা করেন। ভাড়ার চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে সজীব মিয়ার চাচা ও ভাই নাদিম মিয়া দোকান ভাড়া দিতে সজীব মিয়াকে বাধা দেন। এ ঘটনায় রাত ৮টার দিকে দোকানে সজীব মিয়ার সঙ্গে তার ভাই ও চাচার বাগ্বিতণ্ডা হয়। এ সময় শফিক মিয়া তাদের ঝগড়া করতে বাধা দিলে তার সঙ্গেও বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান সজীব মিয়ার চাচা বিল্লাল মিয়া ও ভাই নাদিম মিয়া। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে মারামারি হয়। তৎক্ষণিক স্থানীয়রা বিষয়টি মীমাংসা করতে সালিশি দরবারে গেলে রমজান মিয়ার বাড়ির লোকজন শফিক মিয়াকে সালিশে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করেন। পরক্ষণেই রাত ৯টার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ সময় উভয় পক্ষ দা-বল্লম, ইটপাটকেল, লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে সিলেট বাসস্ট্যান্ডে থাকা একটি সিএনজি পাম্প, দুটি খাবার হোটেলসহ বেশ কয়েকটি দোকানপাট ও বাড়িঘর ভাঙচুর করে লুটপাট করা হয়। এতে উভয় পক্ষের নারী-পুরুষসহ ২০ জন আহত হয়েছে।
এ বিষয়ে সিএনজি পাম্প ম্যানেজার তুর্জয় মিয়া বলেন, ‘আমরা পাম্পে বসে ছিলাম। হঠাৎ কিছু লোক ইটপাটকেল, লাঠিসোঁটা নিয়ে পাম্পে হামলা করে ভাঙচুর করে। আমি নিজেও ইটের আঘাতে আহত হয়েছি। আমাদের কী অপরাধ? ঝগড়ার বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।’
এ বিষয়ে রমজান মিয়ার বাড়ির বিল্লাল মিয়া বলেন, ‘আমরা চাচা-ভাতিজার মধ্যে দোকান ভাড়া নিয়ে কথা হচ্ছিল। এ সময় শফিক মিয়া ও তার ছেলেরা এসে আমাদের মারধর করে। আমার ভাতিজা সজীবকে ফুসলিয়ে ভাড়া নিয়েছে শফিক মিয়া। আমরা তাদের ভাড়া দিতে রাজি না হওয়ায় তারা এসে আমাদের হামলা করে মারধর ও ভাঙচুর করেছে। আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসা মেহেদী নামে এক জামাইকে গুরুতর আহতসহ বেশ কয়েকজনকে আহত করে তারা। জামাই মেহেদীকে বাজিতপুরের ভাগলপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে আড়াই ব্যাপারী বাড়ির অনীক মিয়া বলেন, ‘আমি আর আমার বাবার তাদের বিষয়ে কথা বলার ইচ্ছে ছিল না। তাদের ভাই ও চাচাদের দরবার। আমাদের দোকানে তাদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হলে বাবা তাদের ঝগড়া থামিয়ে দেন। পরে সালিশি দরবারে গেলে আমার বাবাকে সজীবের চাচা কামাল মিয়া ও তার ছেলে অনীক এবং ধিনার এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে আমাকেও কুপিয়ে জখম করেছে। আমার বাবা আহত হওয়ার পর বিষয়টি সংঘর্ষে রূপ নেয়।‘
ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার ফুয়াদ রুহানী বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। দুই পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’