মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার দক্ষিণ ধল্লা-বিন্নাডাঙ্গী বাজারে ওষুধ কিনতে গিয়ে ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে ১৪ বছরের সপ্তম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রী। এ ঘটনায় সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ১০টার দিকে অভিযুক্ত ফার্মেসি মালিক ও বিএনপির ধল্লা ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মিয়া সাইফুল ইসলামকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে বলে ভুক্তভোগীর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।
অভিযুক্ত মিয়া সাইফুল ইসলাম ওই বাজারের হাজ্বী রুপজান ফার্মেসির মালিক ও ধল্লা মধ্য পাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল মোতালেবের ছেলে।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিন্নাডাঙ্গী বাজার ব্যবসায়ী ও ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ওই স্কুলছাত্রী চর্মরোগের ক্রিম কিনতে রুপজান ফার্মেসিতে যায়। এ সময় ফার্মেসির মালিক সাইফুল ইসলাম তাকে প্রেশার মাপার কথা েবলে ভেতরের কক্ষে নেয়। সেখানে তার স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় চিৎকার করলে আশপাশের দোকানদাররা এগিয়ে আসে। মুহূর্তের মধ্যে লোকজন জড়ো হয়ে অভিযুক্ত সাইফুলকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। একপর্যায়ে জনরোষ থেকে বাঁচতে সে পালিয়ে রক্ষা পায়। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সোশ্যাল মিডিয়াতে ওঠে সমালোচনার ঝড়। অভিযুক্তের পরিবার ধামাচাপা দিতে দ্বারস্থ হন স্থানীয় প্রভাবশালীদের।
সোমবার রাতে ঘরোয়াভাবে ঘটনাটি নিয়ে দক্ষিণ ধল্লা গ্রামের আতাউর রহমানের বাড়িতে গ্রাম্য সালিশ বসে। সেখানে অভিযুক্ত সাইফুলকে ভুক্তভোগী পরিবারের কাছে পা ধরে মাফ চাইয়ে চড়-থাপ্পড় দিয়ে মীমাংসা করে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার ধামাচাপার এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ওই বাজারের কোকারিজ ব্যবসায়ী সোবহান খান বলেন, ‘সাইফুল ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছে। ঘটনার পর অবস্থা বেগতিক দেখে আমি তাকে পালিয়ে যেতে সুযোগ দিয়েছি।’
ভিকটিমের পরিবার মেয়ের মানসম্মান ও ভবিষ্যৎ চিন্তায় থানা-পুলিশ না করলেও অপরাধীকে কঠিন শাস্তির আওতায় না আনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন তারা।
অপরদিকে আজ বিকালে আবার ভুক্তভোগীর পরিবারকে না জানিয়ে তাদের অনুমতি ছাড়াই ধর্ষণ চেষ্টাকারী সাইফুলের বিরুদ্ধে মানববন্ধনের আয়োজন করেছে এলাকাবাসী। ভুক্তভোগী পরিবার এই মানববন্ধনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং পাশাপাশি মানববন্ধন আয়োজনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রাম্য বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধিক ব্যক্তি জানান, অপরাধ অনুযায়ী বিচার না হওয়ায় ভিকটিমের পরিবারসহ আমরা কেউ সন্তুষ্ট না।
অভিযুক্ত মিয়া সাইফুল ইসলাম বলেন, এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আমাকে নিয়ে এমন ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
সিঙ্গাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি এ ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানি না। যদি অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’