নিয়ন দুলাল, লালমনিরহাট
প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:২২ পিএম
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:৩২ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে গত ১১ দিন ধরে পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। পাথর রপ্তানিমূল্য পুননির্ধারণ করে আমদানি সচল করতে ভারত, ভুটানের ব্যবসায়ীদেরকে চার দফা চিঠি দিয়ে চেষ্টা করেও কোনো কার্যকর সমাধানে আসতে পারেনি বুড়িমারী স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন। এতে করে একদিকে যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার অন্যদিকে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা কোনো কর্ণপাত না করায় স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা পাথর আমদানিকারকরা পড়েছেন ক্ষতির মুখে।
এর আগে পাথরের দাম পুননির্ধারণ করা না হলে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পাথর আমদানি বন্ধ রাখার চিঠি দেয় এ বন্দরের ব্যবসায়ীরা। চিঠি অনুযায়ী গত ১১ দিন ধরে এ বন্দর দিয়ে ভারত ও ভুটানের তোর্শা ও স্টোন বোল্ডার পাথর ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আমদানি বন্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের দাবি, দাম পুননির্ধারণ ও ব্যবসায়ী পরিবেশ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে ভারত, ভুটানের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে কয়েক দফা চিঠি দিয়ে আলোচনা করতে আহ্বান করা হয়। কিন্তু ওই দেশের ব্যবসায়ীরা বুড়িমারী স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী সংগঠনকে কোনো পাত্তা দিচ্ছেন না। বরং উল্টো ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক উত্তম সরকার ও সে দেশের কয়েকজন ব্যবসায়ী বুড়িমারী স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিসহ ব্যবসায়ী পরিবেশ অস্থিতিশীল করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র করছেন। এ বন্দরের ব্যবসায়ী সংগঠনদের দেওয়া চিঠির ভুল ব্যাখ্যা করে দোষারোপ করছেন। এতে দুইপক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উভয় দেশ।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে নির্মাণ কাজ (কনস্ট্রাকশন ওয়ার্ক) কমে যায়। এ সময় তোর্শা ও স্টোন বোল্ডার পাথরের বাজার মূল্য কমে যায়। ওই সময় প্রতি টন পাথর ১০ থেকে ১২ ডলারে রপ্তানি করতো ভারত ও ভুটানের রপ্তানিকারকরা। এই সময় বুড়িমারী স্থলবন্দরের পাথর আমদানিকারকরা ক্ষতির মুখে পড়লে গতবছরের ৪ নভেম্বর ভুটান ও ভারতের পাথর রপ্তানিকারকদেরকে চিঠি দেয় বুড়িমারী স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন। চিঠিতে পাথরের রপ্তানি মূল্য প্রতি টন ভারতের ৭ ডলার এবং ভুটানের ১২ ডলারে নির্ধারণ করে পাঠাতে অনুরোধ করা হয়। এ ব্যাপারে সেদেশের ব্যবসায়ীরা/রপ্তানিকারকরা কোনো উত্তর দেয়নি। পরবর্তীতে ভুটানের স্টোন বোল্ডার তোর্শা পাথর প্রতি টন ১৫ ডলার ও সামসি স্টোন/পাথর ১৪ ডলার এবং ভারতের স্টোন/পাথর বোল্ডার ১০ ডলারে রপ্তানিমূল্য নির্ধারণ করে আবারও ওই দুই দেশের পাথর রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনকে চলতি বছরের ৪ ও ১৬ জানুয়ারি চিঠি দেওয়া হয়। চিঠির কপি ওই দুই দেশের হাইকমিশনেও দেওয়া হয়। এতেও কোনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি সে দেশের ব্যবসায়ীরা।
পরবর্তীতে ১৯ জানুয়ারি বুড়িমারী স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীদেরকে নিয়ে সাধারণ সভা করে অ্যাসোসিয়েশন। এতে পাথরের মূল্য পুননির্ধারণের সিদ্ধান্ত জানিয়ে সর্বশেষ ২১ জানুয়ারিতে আবারও চিঠি দেওয়া হয়। এতেও ভুটান ও ভারতের পাথর রপ্তানিকারকদের পাথরের মূল্য পুননির্ধারণ না করলে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পাথর আমদানি বন্ধ রাখার কথা জানানো হয়। ওই দুই দেশের পাথর রপ্তানিকারকরা কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় বুড়িমারী স্থলবন্দরের পাথর আমদানিকারকেরা তাদের ক্ষতির কথা চিন্তা করে অনির্দিষ্টকালের জন্য আমদানি বন্ধ রেখেছে।
এ বিষয়ে বুড়িমারী স্থলবন্দরে আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি সভাপতি আবু রাইয়ান আশয়ারী রছি জানান, কিছু দিন ধরে আমরা ভুটান থেকে স্টোন বোল্ডার তোর্শা প্রতি টন ১৬ ডলারে আমদানি করে আসছি এবং ভারত থেকে ১০ ডলারে আমদানি করছি। দেখা যাচ্ছে, সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে যে বিক্রয় মূল্য দাঁড়ায় তা আমাদের জন্য ব্যবসা পরিচালনা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে আমদানিমূল্য প্রতি টন ভুটান থেকে স্টোন বোল্ডার তোর্শা ১৫ ডলার এবং সামসি ১৪ ডলারে ও ভারত থেকে স্টোন বোল্ডার তোর্শা ১০ ডলারের বেশি হলে বুড়িমারী স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকতে পাথরের আমদানি মূল্য কমানোর দাবিতে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সকল প্রকার পাথর আমদানি সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ী পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে ভারত, ভুটানের ব্যবসায়ীদেরকে কয়েকবার চিঠি দিয়ে সমস্যা সমাধানের অনুরোধ করি। উনারা তা শুনছেন না। আশা করছি দ্রুত সমাধান হবে।’
বুড়িমারী স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এ এস এম নিয়াজ নাহিদ বলেন, ‘পাথরের দাম কমানোর দাবি যৌক্তিক ও কমানো উচিত। না কমালে বুড়িমারী স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা পাথর আমদানি করে ক্ষতির মুখে পড়ছেন।’