কালীগঞ্জ পৌরসভা
হাবিব ওসমান, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ)
প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:৩৯ এএম
কালীগঞ্জ পৌরসভা ভবনের প্রাচীর ঘেঁষে সরু সড়ক ও ড্রেনের পাশে ফেলা ময়লার ভাগাড়। প্রবা ফটো
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার নানা জায়গায় ময়লার ভাগাড়। এতে অতিষ্ঠ পৌরবাসী। পৌরসভা কমিউনিটি ভবন সংলগ্ন শিবনগর বোষ্টমপাড়া এলাকায় ময়লা ফেলছে পৌরসভাসহ স্থানীয় বাসিন্দারাও। এতে দুর্গন্ধে পথচারী ও শহরবাসীকে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। এ অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চলে এলেও পৌর কর্তৃপক্ষ রয়েছে উদাসীন। সমস্যা সুরাহায় কোনো উদ্যোগ নেই।
বর্জ্য ও ময়লায় ড্রেনের পানিপ্রবাহ হচ্ছে বাধাগ্রস্ত। দূষিত পানি আটকে গিয়ে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় আর শুকনো মৌসুমে পুরো এলাকায় দুর্গন্ধ প্রকট হয়ে ওঠে। পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে নাগরিকরা বারবার এ নিয়ে অভিযোগ দিলেও ময়লার ভাগাড় সরানোর কথা ভাবেনি পৌর প্রশাসন।
গতকাল রবিবার সরেজমিন দেখা যায়, পৌরসভার প্রাচীরের পাশে সরু সড়ক, তার পাশের ড্রেন এবং ড্রেনের পাশে ময়লা বর্জ্যের স্তূপ। প্রতিদিন সকালে পৌরসভার কর্মচারীরা ভ্যানে করে ময়লা এনে এখানে ফেলে যায়। স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন পৌরসভার সব ওয়ার্ডের বাসাবাড়ির ময়লা ও বর্জ্য এখানে ফেলা হয়। এ ছাড়া স্থানীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও কারখানার বর্জ্যও ফেলা হয় এখানে। এক যুগের বেশি সময় ধরে পৌরবাসীর চলাচলের একমাত্র এই সরু সড়কটির পাশে ময়লা-আবর্জনা স্তূপ করে রাখা হয়। কিন্তু পরিষ্কার করা হয় না। পুরো সড়কটি রূপ নিয়েছে ময়লার পাহাড়ে। পৌর কর্তৃপক্ষ আবাসিক এলাকায় ময়লা ফেলে মানুষকে অসুবিধায় রেখেছে।
কালীগঞ্জ পৌরসভার বাসিন্দা বাচ্চু মিয়া বলেন, ময়লার দুর্গন্ধে এই পথ দিয়ে যাওয়া-আসা করা যায় না। এ ময়লার ভাগাড় ও ড্রেনের জমে থাকা পচা পানির দুর্গন্ধে সবার জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্জ্য ফেলার স্থানের আশপাশের এলাকাজুড়ে মানুষ ও পথচারীদের নাকে-মুখে রুমাল চেপে চলতে হয়।
এই মহল্লার মানুষের চলাচলের একমাত্র সরু সড়ক পাশের ড্রেন এবং ড্রেনের ময়লা ফেলায় দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ স্থানীয় বাসিন্দা শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, এটা আমার বাসার সামনে হওয়ায় প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাচ্ছি। ড্রেনের পচা পানির দুর্গন্ধ আর মশা-মাছির যন্ত্রণায় বাড়িতে থাকা কষ্ট হয়ে পড়ে। শিশুদের অসুখ-বিসুখ লেগেই আছে। ময়লার স্তূপে মুখ ঘষা কুকুর মাঝেমধ্যে আমাদের পোষা প্রাণীদের আক্রমণ করে। এটি তো ময়লা ফেলার জায়গা না। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় অনেক বাসিন্দাও এখানে প্রতিনিয়ত ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। আমরা পৌর প্রশাসনের কাছে অনেক বার অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি। আর এই সড়কের পাশে অনেক আগে পানি নিষ্কাশনের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ একটি ড্রেন খনন করে দিলেও সেটি কোনো দিন পরিষ্কার করতে দেখলাম না। যার কারণে ড্রেনের পচা পানির দুর্গন্ধে চলাচল করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। পৌর প্রশাসনকে অনুরোধ জানাচ্ছি, এই সমস্যা দ্রুত সুরাহা করুন।
আরেক বাসিন্দা শিবে অধিকারী বলেন, দুর্গন্ধে বাড়িতে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। শিশু-বয়স্ক সবাই স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। মশা-মাছির যন্ত্রণায় বাড়িতে খেতে বসা যায় না। পৌর কর্তৃপক্ষের এসব নিয়ে কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। আবাসিক এলাকায় কোন বিবেচনায় ময়লা ফেলছে তারা, তা বোধগম্য হচ্ছে না। আমরা এখান থেকে ময়লার স্তূপের অপসারণ চাই।
কালীগঞ্জ উপজেলা পরিবেশবাদী শিবু পদ বিশ্বাস বলেন, পৌরসভার সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকাটা ব্যর্থতা বলেই ধরে নিতে হবে। পৌরসভার বয়সও কম নয়। শুধু একটা এলাকায় ময়লা ফেলা হচ্ছে তাও তো নয়। পৌরসভার বিভিন্ন মহল্লা ও এলাকায় বর্জ্য ও ময়লা ফেলা হচ্ছে। এ ধরনের কাজ করে পৌর কর্তৃপক্ষ উন্নত নাগরিক সেবা না দিয়ে বরং নিম্নমানের সেবা দেওয়ার নজির স্থাপন করেছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলার মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় কথা বলেছি। আশা করব পৌরসভার দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এ ব্যাপারটি আমলে নিয়ে সুরাহায় এগিয়ে আসবেন। এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ পৌরসভার সচিব আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, আসলে ওখানে শুধু পৌরসভার ময়লা-আবর্জনাই ফেলা হয় না। পৌর বাসিন্দারাও ময়লা ফেলে পরিবেশ দূষিত করছেন।