কাপ্তাই হ্রদ
অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই (রাঙামাটি)
প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:২৮ এএম
কাপ্তাই হ্রদের জেগে ওঠা ছোটবড় চরের জলে ভাসা জমিতে রোপণ করা হয়েছে বোরো ধানের চারা। রাঙামাটির বিলাইছড়ি সরদ এলাকায়। প্রবা ফটো
রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে পানি কমে যায়। বেশ কিছু অংশে জেগে ওঠে ছোটবড় চর। সেখানে স্থানীয়রা চাষাবাদ করেন। এবারও শুষ্ক মৌসুমে হ্রদে পানি কমে যাওয়ায় চাষাবাদ শুরু করেছেন তারা। বাতাসে দোল খাচ্ছে রোপণ করা কচি ধানের পাতা। স্থানীয়দের ভাষায় এ জেগে ওঠা চর ‘জলেভাসা’ জমি নামে পরিচিত।
সরেজমিনে কাপ্তাই
ও বিলাইছড়ি উপজেলা সংলগ্ন হ্রদের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হ্রদের ভেতরে বোরো ধানের
সবুজ আবরণে ছেয়ে গেছে। এ যেন সবুজের সঙ্গে হ্রদ-পাহাড়ের অপূর্ব মিতালি। পাশাপাশি বোরো
ধানের চারা লাগাতেও দেখা গেছে। চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের কেউ কেউ হ্রদের
পাশে জেগে ওঠা ছোটবড় চর চাষের উপযোগী করে তুলছেন, আবার কেউ কেউ বোরো ধানের চারা রোপণ
করছেন।
গত ১৫ বছর যাবৎ
হ্রদে শুষ্ক মৌসুমে জলেভাসা জমিতে চাষাবাদ করে আসছেন কাপ্তাইর বগছাড়া এলাকার রহমান
আলী। তিনি জানান, একসময় কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। শুষ্ক মৌসুমে
হ্রদের পানি শুকিয়ে যায়, তখন মাছ ধরতে না পারায় আয় কমে যায়। তাই শুষ্ক মৌসুমের কয়েক
মাস তাকে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো। এরপর মাছ ধরার পাশাপাশি শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদের
সিদ্ধান্ত দেন। সেই অনুযায়ী কাজও শুরু করে দেন। এভাবে পার হয়েছে এক যুগেরও বেশি সময়।
এতে সংসারেও সচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
শুধু রহমান আলীই
নয় তার মতো হ্রদের জলেভাসা জমিতে চাষাবাদ করেন, মংবাচিং মারমা, সমিরন তঞ্চঙ্গ্যা, সুমি
বেগমসহ অনেকে। তারা জানান, শুষ্ক মৌসুমে জলেভাসা জমিতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ
করে আসছেন। জলেভাসা জমিতে চাষাবাদ করে বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য
হলো, প্রতিবছর জমিতে পলি পড়ায় নরম হয়ে যায়। লাঙ্গল দিয়ে চাষ করা ছাড়াই ধানের চারা
রোপণ করা যায়। এতে পরিশ্রম যেমন কম হয়, তেমনি ফলনও ভালো হয়। আর খরচের সাশ্রয় তো
আছেই।
সুমি বেগম জানান, চাষাবাদে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও কাজ করেন। অবসর সময় তারা এখানে চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার করেন। কৃষি উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের চেয়ে খরচ কিছুটা বেড়েছে। আর শঙ্কার বিষয়, নির্দিষ্ট সময়ের আগে হ্রদের পানি বেড়ে গেলে ফসল তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
হ্রদের জমিতে চাষাবাদে সহযোগিতা করে আসছে কৃষি বিভাগ। প্রণোদনার পাশাপাশি সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান আহমেদ জানান, জলেভাসা জমিতে চাষাবাদে কৃষি বিভাগ থেকে ধানের পাশাপাশি সরিষা, ভুট্টা, সূর্যমুখীর বীজ প্রণোদনা হিসেবে দেওয়া হয়। পাশাপাশি সারসহ বিভিন্ন সরঞ্জামও কৃষকদের দেওয়া হয়। প্রতিবছর বোরো মৌসুমে কাপ্তাই উপজেলায় জলেভাসা ৪০-৪৫ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ হয়ে থাকে। প্রতিবারই ফলন ভালো হয়। এবারও ফলন ভালো হবে বলে প্রত্যাশা।