রংপুর অফিস
প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:১৯ পিএম
রংপুরের ১৩৪ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী শ্যামাসুন্দরী খাল পুনরুদ্ধারে কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার দায়ের করা জনস্বার্থমূলক মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এবং বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেন।
বেলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস হাসানুল বান্না জানান, রুল জারির পাশাপাশি আদালত শ্যামাসুন্দরী খালের দখল, সীমানা নির্ধারণসহ আগের অবস্থায় ফেরাতে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নসহ প্রতিবেদন আকারে আদালতে ৩ মাসের মধ্যে জমা দিতে সরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এ মামলায় বিবাদী করা হয়েছে, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, রংপুর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এবং রংপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে।
শ্যামাসুন্দরী খাল দূষণ ও দখল থেকে রক্ষায় বিবাদীদের ব্যর্থতা ও প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন হওয়ায় কেন তা অসাংবিধানিক, বেআইনি এবং বিধিবহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে হাইকোর্ট বিভাগ বিবাদীদের ওপর রুল জারি করেছেন। জারিকৃত রুলে সিএস জরিপ ও মূল প্রবাহ অনুযায়ী খালের সীমানা নির্ধারণ, স্থানীয় বাসিন্দাদের চাষাবাদ ও মৎস্য শিকারের অধিকার সুরক্ষা করা এবং তাদের জীবন-জীবিকার মান উন্নয়নে খাল থেকে দখলদার উচ্ছেদ এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে খালটি পুনরুদ্ধার করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে যথাযথ সংরক্ষণ করার নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
উল্লেখ্য, রংপুর নগরীর বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া প্রায় ১৩৪ বছর পুরোনো ঐতিহ্যবাহী শ্যামাসুন্দরী খাল। ১৮৯০ সালে তৎকালীন পৌরসভার চেয়ারম্যান ও ডিমলার রাজা জানকি বল্লভ সেন তার মা শ্যামাসুন্দরীর স্মরণে নগরবাসীকে ম্যালেরিয়া ও জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষায় এ খাল পুনঃখনন করেছিলেন।
খালটি রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে ১৫ দশমিক ৮০ কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত। এলাকাভেদে এর প্রস্থ ২৩ থেকে ৯০ ফুট। এ খালটি উত্তর পশ্চিমে কেল্লাবন্দ ঘাঘট নদী থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকার বুক চিড়ে মাহিগঞ্জ সাতমাথা রেলগেট এলাকায় কেডি ক্যানেল স্পর্শ করে মিশেছে খোকসা ঘাঘট নদীতে। শ্যামাসুন্দরী দখল করে তৈরি হওয়া বড় বড় অট্টলিকা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রেস্টুরেন্ট ও আবাসিক ভবনের আবর্জনা ফেলা হচ্ছে শ্যামাসুন্দরী খালে। এতে করে খাল ভরাট হয়ে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং দুর্গন্ধ ছড়ানোসহ নগরীতে মশামাছির উপদ্রব বেড়েছে। খাল সংকুচিত হওয়ায় পানি প্রবাহের মূলধারা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।