লালমনিরহাট প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:৫২ পিএম
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:০৫ পিএম
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে লালমনিরহাটে ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ শীর্ষক এক পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিস্তাপাড়ের প্রায় ১০ হাজার মানুষ এ পদযাত্রায় অংশ নেয়।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে লালমনিরহাট শহরে অনুষ্ঠিত এ পদযাত্রার নেতৃত্ব দেন ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলু। এ সময় পদযাত্রায় লালমনিরহাট জেলা বিএনপির নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের প্রায় ১০ হাজার সাধারণ মানুষ অংশ নেয়।
পদযাত্রাটি লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশন রোডের রেলওয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে শুরু হয়ে শহরের বিডিআর রোড, বিডিআর রেলগেট, মোগলহাট রেলগেট, পুরান বাজার, সাপটানা বাজার রোড, বাহাদুর মোড়, থানা রোড, স্বর্ণকার পট্টি, গোশালা বাজার রোড, রেলওয়ে স্টেশন রোড হয়ে শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশন মোড় গোলচত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
পদযাত্রা শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ‘রংপুর অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী তিস্তা নদী। এ অঞ্চলের মানুষের একসময় গোলাভরা ধান ছিল, গোয়ালভরা গরু ছিল, মুখে ছিল ভাওয়াইয়া গান। তিস্তাপাড়ের মানুষ একসময় আনন্দে দিন কাটাত। তিস্তা নদী ছিল আমাদের মায়ের মতো, সেই তিস্তা নদী এখন শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। তিস্তা নদী এখন ধু-ধু বালুর চর।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদীর উজানে বাঁধ নির্মাণ করে পানি আটকে রাখে, আর বর্ষা মৌসুমে বিনা কারণে পানি ছেড়ে দেয়। এর ফলে বন্যার সৃষ্টি হয়। লাখ লাখ পরিবারের বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যায়, নদীভাঙনের কবলে পড়ে লাখ লাখ মানুষ নিঃস্ব হয়ে বাড়িছাড়া হচ্ছে। যে তিস্তা মানুষের জীবন-জীবিকার একমাত্র ভরসা ছিল, সেই তিস্তা এখন দুঃখের কারণ। তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে বিগত সরকার এখানকার মানুষের সঙ্গে শুধু প্রতারণাই করেনি, পরিহাসও করেছে। আমরা মাঝে মাঝেই শুনিÑ তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে, কিন্তু বাস্তবে সেটা কিছুই হয়নি। আমরা এটাও জানিÑ আমাদের বন্ধু পার্শ্ববর্তী দেশ চীন এখানে অর্থায়ন করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছিল, একটি স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়েছিল, কী কারণে সেটি আলোর মুখ দেখতে পায়নি জানি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘তিস্তার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য আর জীবন-জীবিকা ফিরে পাবে এই অঞ্চলের মানুষ। তারা ফিরে পাবে তাদের কর্মচাঞ্চল্য। কিন্তু এসবের কিছুই হয়নি। বর্তমানে তিস্তার দিকে তাকালে আমাদের সকলের বুক হাহাকার করে। এখন পর্যন্ত কোনো সরকারই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেনি, তাই আমরা এই তিস্তা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে নদীর ন্যায্য পানি বণ্টন, স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের লক্ষ্যে এই আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। আর এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে তিস্তার তীরবর্তী পাঁচ জেলার মানুষ।’
তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও তিস্তা মেগা প্রকল্প অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবিতে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের উদ্যোগে ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানকে সামনে রেখে একটি সামাজিক আন্দোলন চলমান আছে।
পদযাত্রা ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়সহ তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি আদায়ে আগামী ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি ৪৮ ঘণ্টাব্যাপী লাগাতার কর্মসূচি হিসেবে নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা জেলাসহ ১১টি স্থানে একই সময়ে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।