পিরোজপুর সংবাদদাতা
প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:৩৫ এএম
পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার চাঁদকাঠি এলাকার তালতলা শাখা নদীর সঙ্গে যুক্ত খালের ওপর সেতু নির্মিত হলেও করা হয়নি সংযোগ সড়ক। স্থানীয়রা কাঠের সিঁড়ি তৈরি করে সেতুতে ওঠানামা করে। সম্প্রতি তোলা। প্রবা ফটো
পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার চাঁদকাঠি এলাকার তালতলা শাখা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা হলেও হয়নি সংযোগ সড়ক। হাটবাজার, অফিস-আদালত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের জন্য সেতুর দুই পাশে থাকা কাঠের সিঁড়ি বেয়ে ঝুঁকি নিয়ে সেতু পারাপার হতে হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে ১৩ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নাজিরপুর উপজেলার চাঁদকাঠি এলাকার তালতলা শাখা নদীর ওপর ২০২০ সালের ২৩ মার্চ ৬৬ মিটার দৈর্ঘ্য নাওটানা-পাকুরিয়া পাকা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রকল্পের সময়সীমা ছিল ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিমরান মায়ান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ধীরগতিতে মূল সেতুর কাজ প্রায় শেষ করলেও সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করেই পুরো টাকা তুলে নেয়। ফলে পাঁচ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা সেতুটি এখন উপকারের পরিবর্তে এলাকার মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তালতলা শাখা নদীর পশ্চিম প্রান্তে পাকুরিয়া, শিংখালী, গোলারহাট, কদমবাড়ি, আছরা, জুগিয়া, সাচিয়া ও লড়া গ্রাম। পূর্ব প্রান্তে নাওটানা, জিলবুনিয়া, রামনগর, চাঁদকাঠি ও কলারদোনিয়া গ্রাম। এ ছাড়া সংযোগ সড়কহীন সেতুর পূর্ব প্রান্তে দীর্ঘা মহিলা কলেজ, দীর্ঘা টেকনিক্যাল কলেজ, গাঁওখালী স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও বৈঠাকাটা কলেজ, চাঁদকাঠী আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়, নাওটানা বিএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলারদোনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলারদোনিয়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, লেবুজিলবুনিয়া দাখিল মাদ্রাসা এবং গাঁওখালী বাজার ও চাঁদকাঠি বাজার, বৈঠাকাটা বাজার, কলারদোনিয়া বাজার ও দীর্ঘা বাজার রয়েছে। পশ্চিম প্রান্তের আটটি গ্রামের মানুষ ও শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজ, হাটবাজার, উপজেলা সদর, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলা হাসপাতালে যাতায়াতের জন্য সিঁড়ি দিয়ে সংযোগ সড়কহীন সেতু পারাপার হয়। আবার সেতুর পূর্ব প্রান্তের গ্রামগুলোর মানুষের পশ্চিম প্রান্তের গ্রামগুলোতে যেতেও সিঁড়ি দিয়ে সেতুটি পারাপার হতে হয়।
সম্প্রতি সরেজমিন সেতু এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নাওটানা-পাকুরিয়া মূল সেতুর মাঝ বরাবর রেলিংয়ের কিছু কাজ বাকি থাকলেও সেতুটির মূল অংশের কাজ প্রায় শেষ। তবে নির্মাণ হয়নি সেতুর সংযোগ সড়ক। ফলে সেতুর দুই পাশে কাঠের সিঁড়ি বানিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন স্থানীয়রা। আগে এখানকার মানুষ নদীতে খেয়া পারাপার হলেও সেতু হওয়ায় পর খেয়া পারাপার বন্ধ। তাই কাঠের সিঁড়ি বেয়ে সেতু পারাপারই একমাত্র মাধ্যম।
রাইসুল ইসলাম ইউনুস নামের অপর এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, সেতুর কাজ পুরোপুরি শেষ না করেই ঠিকাদার পালিয়ে গেছেন। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে সেতুর এপার-ওপার বাঁশের সিঁড়ি ও বালুর বস্তা দিয়ে চলার ব্যবস্থা করি। আমি নিজে কয়েকবার এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে গেলে তারা বলেন, ঠিকাদার পালিয়ে গেছেন। অচিরেই আমরা ব্যবস্থা নেব।
অতনী বিশ্বাসসহ কয়েক স্কুলছাত্র বলে, আমাদের সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় বৃষ্টির সময়। অনেকেই এখান থেকে পড়ে যায় ওঠানামার সময়। খেয়া পার হয়ে অনেক দূর ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছাতে হতো। এখন সেতু পার হতেও সমস্যা হচ্ছে।
এ বিষয়ে পিরোজপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী রনজিত দে বলেন, নাওটানা সেতুটির মূল অংশের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু সংযোগ সড়কের কাজ বাকি আছে। গত ৫ আগস্টের পর ঠিকাদারের খোঁজ মিলছে না। আমরা ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। এখনও তাকে পাইনি। খুব দ্রুতই সংযোগ সড়কের কাজ করার ব্যবস্থা করব। তিনি আরও বলেন, সেতুর সংযোগ সড়কের অভাবে এলাকার লোকজনের যাতায়াতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। আমার কাছে খবর আছে, বিভিন্ন সময় সেখানে অনেক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে স্থানীয়রা। দুই-একদিনের মধ্যে সেতুটি পরিদর্শন করব। সর্বোচ্চ এক মাসের ভেতর সেতুটির সংযোগ সড়ক শেষ করব, জনগণের কষ্ট দূর করব।