গাজীপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০১:০০ এএম
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:৫৩ এএম
গাজীপুর মহানগরীর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের ধীরাশ্রম ও দাক্ষিণখান গ্রামে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। প্রবা ফটো
বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও মারধরের ঘটনার পর গাজীপুর মহানগরীর ৩১নং ওয়ার্ডের ধীরাশ্রম ও দাক্ষিণখান গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। নারীরা দিনভর থাকলেও গাজীপুরসহ সারা দেশে অপারেশন ডেভিল হান্ট ঘোষণার পর ওই এলাকায় বয়স্ক নারীরা ছাড়া অন্য নারীরাও বাড়িঘর ছেড়েছেন। ঘটনার পর থেকে ওই গ্রামের মসজিদে আজান হয়নি। এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২৩৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গাজীপুর শাখা। এ ছাড়া গতকাল রবিবারও হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে গাজীপুরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
গতকাল রবিবার সরেজমিন দেখা যায়, আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়ির সামনের সোনালি রঙের প্রধান ফটকটি বন্ধ। ফটকের সামনে ভাঙা কাচের টুকরা ও কয়েকটি সম্মাননা স্মারক ছড়িয়ে ছিটিয়ে। রাস্তার দুই পাশে অসংখ্য লাঠিসোটা, জুতা ও জামাকাপড় পড়ে আছে। রাস্তাটি দিয়ে লোকজনের চলাফেরা নেই বললেই চলে। আশপাশের এলাকার অনেকেই ভিন্ন পথ দিয়ে চলাচল করছে।
আশপাশের বাড়িঘরগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাড়িতে কোনো পুরুষ লোক নেই। গত শুক্রবার রাতে ঘটনার পরপরই সবাই পালিয়ে গেছে। কয়েকটি বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কেবল বয়স্ক নারীরা বাড়িতে। পুরুষরা স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে অন্যত্র চলে গেছে। সবার মাঝে ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়ির সামনের মসজিদটিও তালাবদ্ধ। আশপাশের পরিবেশ নীরব ও নিস্তব্ধ। ধীরাশ্রম-টঙ্গী সড়কের দুই পাশে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি প্রায় সব দোকানপাট বন্ধ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানি বলেন, রাতের বেলা ছাত্রদের নির্দয়ভাবে পিটিয়েছে আওয়ামী লীগের লোকজন। কেউ এগিয়ে ছাত্রদের রক্ষা করতে গেলে তাদেরও নাজেহাল হতে হয়েছে। ছাত্ররা সেখানে লুটপাট ও ভাঙচুর করতে যায়নি। তারা ভাঙচুর ও লুটপাট ঠেকাতে গিয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের লোকজন একজোট হয়ে ছাত্রদের পিটিয়েছে। আহত ছাত্রদের হাসপাতালে নিতে গেলেও বাধা দেয়। এখন অভিযানের কথা শুনে বাড়ি ছেড়ে সবাই পালিয়েছে।
শুধু ধীরশ্রম নয়, শুক্রবারের আগেও গাজীপুরের অন্যান্য অঞ্চলেও ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের দেখা গেলেও বর্তমানে সবাই আত্মগোপনে চলে গেছে।
মাহমুদ নামে স্থানীয় একজন বলেন, শান্ত গাজীপুরকে অশান্ত করে তুলছে বিদেশের মাটিতে বসে। যারা সাধারণ আওয়ামী লীগ করতেন, এসব হামলা ও ঘোষণার পর তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন বাধাগ্রস্ত করছে।
স্থানীয় এক নারী বলেন, এলাকায় কোনো মানুষ নেই। পুরুষ মানুষ তো আরও নেই। মসজিদে ওইদিনের পর থেকে আজানও হয়নি।
উল্লেখ্য, গাজীপুরে অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগের সহযোগী ও হামলার ঘটনায় ৭৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ৩৫ জন ও জেলা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ৪০ জনকে।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ২৩৯ জনের নামে মামলা
গাজীপুরের ধীরাশ্রমে আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাসায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২৩৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করেছে বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গাজীপুর শাখা। গতকাল রবিবার বিকাল বেলা ৩টার দিকে জিএমপি সদর থানায় মামলা করা হয়।
মামলার বাদী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ মোহিত। গাজীপুর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সিদ্দিক হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানায়, গাজীপুর মহানগরীর দাক্ষিণখান এলাকায় আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। হামলার ঘটনা শুনে গাজীপুরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সেটি প্রতিহত করতে যায়। এ সময় স্থানীয় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোকজনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। এরপর একদল লোক এসে বাড়িটি ঘিরে ফেলে এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর শুরু করে। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
হামলার ঘটনায় রবিবার সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক মো. আব্দুল্লাহ মোহিত একটি মামলার আবেদন করেন। মামলাটি বেলা সাড়ে ৩টার দিকে রুজু করা হয়। ওই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে আমজাদ হোসেন মোল্লাকে। এখন পর্যন্ত ওই মামলায় ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচি
গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও এক শিক্ষার্থীকে গুলি করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। গতকাল রবিবার দুপুরে কালিয়াকৈর উপজেলার ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় সড়ক অবরোধ করে এ কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানায়, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে সন্ত্রাসী দলটির নেতাকর্মী ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং গুলি বর্ষণকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে।