প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৭:১১ পিএম
ঠাকুরগাঁও সুগার মিলের ছাইয়ের কারণে বাইরে কাপড় শুকাতে দেওয়া যায় না। ছাই রুমের ভেতরও চলে আসে। ঘর নোংরা হয়, খাবার-দাবার ছাইয়ে নষ্ট হয়ে যায়। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এমন পোস্ট করেন শাকিলা আক্তার।
সরেজমিনেও মেলে এর সত্যতা। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার প্রধান সড়কের পাশে অবস্থিত এ সুগার মিলের ছাইয়ে ঠাকুরগাঁও রোড বাজারসহ আশপাশের সর্বত্র কালো হয়ে আছে। গাছপালা, পুকুর, নদী, খাল-বিল ছাই দিয়ে ভরাট।
ঠাকুরগাঁও সুগার মিল ঠাকুরগাঁও জেলার অন্যতম প্রধান ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান। ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠানটির নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ১৯৫৮ সালে সমাপ্তি ঘটে। ১৯৭২ সালে সরকার প্রতিষ্ঠানটিকে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে সারা দেশে লুটপাট শুরু হলে ঠাকুরগাঁও সুগার মিলের চিমনির ঢাকনাসহ বেশ কিছু মালামাল লুটপাট হয়। তারপর থেকে চিমনি দিয়ে ছাই বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মিলের আশপাশের এলাকা নোংরা হয়ে যায় এবং ভোগান্তির শিকার হয় জনসাধারণ।
প্রতিবছর সাধারণত ডিসেম্বর মাসে মিলটি চালু হয় এবং ৬০-৭০ দিন চালু থাকে। এ মৌসুমে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সুগার মিল চালু হয়। পরে প্রতিদিন ব্যাপক হারে ছাই সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। বাসাবাড়ির ছাদ, বারান্দা, আনাচে-কানাচে সর্বত্র দেখা মিলে সুগার মিলের ছাই। একদিকে ছাইয়ের দুর্ভোগ অপরদিকে এর সমাধানের পথও জানা নেই কারও। ছাই থেকে রেহাই পাওয়া যায় বর্ষাকালে।
স্থানীয়রা জানান, বিষাক্ত ছাই বাতাসের সঙ্গে প্রায় ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে মাটিসহ পানি দূষণ হচ্ছে। দূষিত পানি ব্যবহারের কারণে গ্রামের অনেক লোক বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
সুগার মিলের প্রশাসন বিভাগের ব্যবস্থাপক সুভাস চন্দ্র সিংহ জানান, চিমনি থেকে ছাই ছড়িয়ে পড়ে এটি সত্য। ছাই ঠেকানোর জন্য ইএসপি ব্যবহার করার কথা। বর্তমানে যেটি আছে, তা সেভাবে কাজ করছে না। দুটি ইএসপির জন্য আমরা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সুগার মিল থেকে বা কাঠ পোড়ানো যেখান থেকেই হোক, ধোঁয়া পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এটি মূলত বায়ুদূষণ। কয়লা, কাঠ পোড়ানোর বায়ুতে পিএম ২.৫ থাকে। এ ছাড়া অ্যামোনিয়া, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড, ব্ল্যাক কার্বনসহ বিষাক্ত উপাদান থাকে। যা অ্যাজমা, স্ট্রোক, ইমম্যাচিউর বার্থ, বাচ্চাদের শ্বাস-প্রশ্বাস সমস্যার জন্য দায়ী।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম বলেন, সুগার মিলের ছাইয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।