মিলাদ হোসেন অপু, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)
প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:৫৩ এএম
ভৈরবে মেঘনা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে উপজেলার তিন সেতুসহ বহু স্থাপনা। সম্প্রতি ভৈরব-আশুগঞ্জ খেয়াঘাট এলাকায়। প্রবা ফটো
কিশোরগঞ্জের ভৈরবের মেঘনা নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে উপজেলার তিন সেতু। ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফেলা হলেও স্থায়ী সমাধানের দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় পাঁচ মাস পর গত ২৭ জানুয়ারি রাতে ভৈরব-আশুগঞ্জ খেয়াঘাট এলাকায় নতুন করে ভাঙন দেখা দেয়। দুই দিনে ধীরে ধীরে ভাঙন অব্যাহত থাকে। ভাঙন চলাকালে ঘাটে নৌকা তৈরির কাজ চলছিল। এ সময় নৌকা তৈরির বেশ কয়েকটি প্লেট নদীতে তলিয়ে যায়। এ ছাড়া পাশের চালকলের দুটি ঘর বিলীন হয়ে গেছে নদীগর্ভে।
সূত্র জানায়, ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালে ভৈরব রেলওয়ের ৫০ একর জায়গা ও শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে হারিয়ে যায়। ২০০৪ সালে শহরের কাঠপট্টি এলাকায় ভাঙন দেখা দিলে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যায়। ২০২২ সালের ভাঙনের দুটি চালকল নদীগর্ভে বিলীন হয়। এ সময় দুজন শ্রমিক মারা যান। এরপর গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর মেঘনা সেতুসংলগ্ন ডিপোঘাট এলাকায় নদীভাঙন দেখা দেয়। এতে ১০০ মিটার ভূমিসহ প্রায় ২০টি কাঁচাঘর ও যমুনা অয়েল কোম্পানির একাংশ এবং বেশ কিছু স্থাপনা নদীর ভেতর চলে যায়। এর পাঁচ মাস পর গত ২৭ জানুয়ারি রাত থেকে আবারও ভাঙনের কবলে পড়েছে ভৈরব-আশুগঞ্জ খেয়াঘাট এলাকা।
এদিকে ভাঙনরোধে সংশ্লিষ্ট এলাকায় আবারও জিও ব্যাগ ফেলছে প্রশাসন। তবে এতে সন্তুষ্ট নয় স্থানীয়রা। নদীভাঙন রোধে তারা দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়ে আসছে। তারা জানায়, নদীভাঙনের স্থায়ী সমাধান না করতে পারলে হুমকিতে থাকবে ভৈরব শহর। সেই সঙ্গে হুমকিতে রয়েছে তিনটি রেল ও সড়ক সেতু, দুটি তেলের ডিপো ও বিএডিসির দুটি সারের গুদাম।
সম্প্রতি নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শনে আসেন পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নদীভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে স্টাডি প্রকল্প চলমান রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ভৈরবের যেসব নদীভাঙন জায়গা রয়েছে সেগুলো স্থায়ী সমাধান করার জন্য স্টাডি প্রকল্প শেষ পর্যায়ে আছে। শেষ হলে স্টাডির সুপারিশের আলোকে একটি উন্নয়ন প্রকল্প দাখিল করা হবে। মেঘনা নদীর ডান তীরে বাগানবাড়ি এলাকায় সম্প্রতি যে ভাঙন দেখা দিয়েছে, ইতোমধ্যে সেখানে ১ হাজার ৩০০ জিও ব্যাগ ডাম্পিং হয়েছে। আমাদের ধারণাÑ পাঁচ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণে আসবে। নদীভাঙনের কবল থেকে জনগণের জানমালের রক্ষায় বর্তমান সরকার ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় বদ্ধপরিকর। গত অক্টোবরে ভাঙন দেখা দেওয়ার পর এ পর্যন্ত পর্যাপ্ত প্রটেকশন দেওয়া হয়েছে। আগামী জুলাই মাসে স্টাডি শেষ হলে আমরা ভৈরবের জন্য একটি উন্নয়ন প্রকল্প উপস্থাপনা দাখিল করব।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড ভৈরবের উপসহকারী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২৭ জানুয়ারি রাত ৮টা থেকে বাগানবাড়ি এলাকার ভৈরব-আশুগঞ্জ খেয়াঘাটে ভাঙন দেখা দিলে সেখানে পাঁচ হাজার জিও ব্যাগ ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাঁচ মাস আগে গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর রাত দেড়টার দিকে মেঘনা সেতুসংলগ্ন ডিপো ঘাট এলাকা থেকে ১৮০ মিটার অংশে ভাঙন দেখা দেয়। সেখানে ২৪ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়। এ ছাড়া এক হাজার টিউব ফেলা হয়েছিল সেখানে।
ভৈরব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি জাহিদুল হক জাবেদ বলেন, ‘ভৈরব চেম্বার অব কমার্সের নেতারা সব সময় শহররক্ষা বাঁধ দেওয়ার পক্ষে ছিল। বর্তমানে আমরা ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে রয়েছি। সাময়িকভাবে জিও ব্যাগ ফেলা হলেও এটি স্থায়ী সমাধান নয়। আমরা এর একটি স্থায়ী সমাধান চাই। বিগত দিনে আমরা ব্যবসায়ী সংগঠন থেকে শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দিয়েছিলাম। ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালে ভৈরব রেলওয়ে এলাকা, ২০০৪ সালে শহরের কাঠপট্টি এলাকায়, ২০২২ সালের দুটি চালকল, ২০২৪ সালে ডিপোঘাট ও ২৭ জানুয়ারি রাতে বাগানবাড়ি এলাকার নদীতে ভাঙন দেখা দেয়। ভৈরব মেঘনার পাড়ঘেঁষা দুটি তেলের ডিপো, বিএডিসির দুটি সারের গুদাম রয়েছে, সঙ্গে রয়েছে দুটি রেলসেতু ও একটি সড়ক সেতু। বিগত দিনে শহররক্ষা বাঁধের নামে অর্থ লুটপাট করেছে ক্ষমতাসীনরা। আমরা চাই দ্রুতসময়ের মধ্যে ভৈরব থেকে ছায়তনতলা পর্যন্ত শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হোক। তাহলে ভৈরবের মানুষ বেঁচে যাবে।’
এ ব্যাপারে উপসহকারী প্রকৌশলী শাহদাত হোসেন বলেন, ‘জিও ব্যাগ স্থায়ী সমাধান না হলেও বছর দুয়েক ঝুঁকিমুক্ত থাকবে ভাঙন এলাকা। সরকারের সহযোগিতা পেলে দ্রুতসময়ের মধ্যে স্থায়ী সমাধানে যাওয়া সম্ভব।’