নোয়াখালী প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:৩৯ পিএম
তিন বছর আগে ভাগ্য পরিবর্তনে ঋণ করে লিবিয়ায় পাড়ি জমান নোয়াখালীর আব্দুর রব (২৫)। দীর্ঘ ১২ দিন নিখোঁজ থাকার পর অপরিচিত নম্বর থেকে নির্যাতনের অডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে ২৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে মাফিয়া চক্র। সন্তানের এমন নির্মম নির্যাতনের পরিস্থিতি জানতে পেরে অসুস্থ হয়ে পড়েছে পরিবারের সদস্যরা।
ভুক্তভোগী আব্দুর রব নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার সুন্দলপুর ইউনিয়নের পাটওয়ারী বাড়ির আব্দুর রহিমের ছেলে।
পরিবারের সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে আব্দুর রব লিবিয়ায় পাড়ি জমান। তারপর ছোটভাই আব্দুর রহমানকেও (২৩) লিবিয়ায় নিয়ে যান তিনি। সেখানে আল খামাছ পৌরসভায় একটা কোম্পানিতে দুই ভাই চাকরি করতেন। গত ১৪ জানুয়ারি কাজের উদ্দেশ্যে মিসালতা যাওয়ার সময় ভুয়ারা চেকপোস্ট পুলিশ আব্দুর রব, আব্দুর রহমানসহ মোট চারজনকে আটক করে। তারপর কাগজপত্র চেক করে তিনজনকে ছেড়ে দিলেও আব্দুর রবকে পুলিশ নিয়ে যায়। পরে যোগাযোগ করা হলে ত্রিপলি থানা পুলিশের কাছে আছে বললেও খোঁজখবর নিয়েও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। দীর্ঘ ১২ দিন পর ২৬ জানুয়ারি একটি বাংলাদেশি ইমো নম্বর থেকে মাফিয়া চক্র জানায়, আব্দুর রবকে তারা ২০ লাখ টাকায় পুলিশ থেকে কিনে নিয়েছে। তাদের ২৬ লাখ টাকা দিলে তারা তাকে ছেড়ে দেবে। এরপর থেকে বাড়তে থাকে নির্যাতনের চিত্র। সেই নির্যাতনের অডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দ্রুত টাকা দেওয়ার জন্য দেওয়া হয় বাংলাদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের কয়েকটি নম্বর। ভিটেমাটি ছাড়া আব্দুর রবের বাবার কিছু নাই বলে আর্তনাদ করেই দিন পার করছেন।
আব্দুর রবের মা তাজনাহার বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীর দুই শতাংশের বসতভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই। আমার ছেলেকে মেরে আমাকে ভিডিও-অডিও কল দেয়। আমার বুকটা ফেটে যায়, কিন্তু আমি অসহায় মা। আমার কিছুই করার নাই। আমি সরকারপ্রধানের সহযোগিতা চাই। আমার সন্তানকে আমি ফেরত চাই।’
আব্দুর রবের বড় বোন জান্নাতুল নাইম সোনিয়া বলেন, ‘আমরা দুই ভাই দুই বোন। সুদের ওপর টাকা নিয়ে দুই ভাইকে বিদেশ পাঠানো হয়েছে। মাফিয়া চক্র একটি ঘরে বন্দি করে আমার ভাইকে নির্যাতন করে আমাদের কাছে ২৬ লাখ টাকা দাবি করছে। টাকা না দিলে নির্যাতন করে মেরে ফেলারও হুমকি দিচ্ছে। নিয়মিত ফোন দিয়ে তারা ভাইয়ের ওপর নির্যাতনের দৃশ্য দেখায়।’
আব্দুর রবের বাবা আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমি অসুস্থ মানুষ কোনো কাজ করতে পারি না। ওরা আমার ছেলেকে বন্দি করে ২৬ লাখ টাকা দাবি করছে অথচ ২৬ হাজার টাকা দেওয়ার মতো আমার সামর্থ্য নাই। সন্তানদের বিদেশে পাঠাতে ঋণ করেছি তার টাকা আজও পরিশোধ করতে পারি নাই। সন্তানের এমন নির্যাতনের অডিও-ভিডিও দেখলে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।’
নোয়াখালী ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সহকারী পরিচালক খুরশীদ আলম বলেন, ‘বিষয়টা জেনে মর্মাহত হয়েছি। ভুক্তভোগী পরিবার আমাদের কাছে অভিযোগ করেছে। সেটি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে লিবিয়া দূতাবাসে পাঠানো হবে। আশা করি সরকার এই রেমিট্যান্সযোদ্ধার পাশে দাঁড়াবে। তাতে সন্তান তার বাবা-মায়ের কাছে ফিরতে পারবে।’