বড়াইগ্রাম
নাটোর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:০০ পিএম
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:৩৪ পিএম
নাটোরের বড়াইগ্রামে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সেচ কমিটির অনুমতি ছাড়াই গভীর নলকূপ স্থাপনের অভিযোগ পাওয়া গেছে রাসেদুল ইসলাম নামে একজনের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, সেচপাম্প স্থাপনের বৈধতা পেতে আদালতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) নাটোর রিজিয়নের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন এবং বড়াইগ্রাম জোনের সহকারী প্রকৌশলী জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। রাসেদুল ইসলাম উপজেলার শ্রীরামপুর এলাকার রওশন আলীর ছেলে।
রাসেদুল ইসলামের দাবি, প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা লেনদেনের পরেও পাম্প স্থাপনের ছাড়পত্র না পেয়েই মামলা করেছেন। তবে মামলার বিবাদী ও সংশ্লিষ্টদের দাবি, ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি সঠিক নয়, বরং অবৈধভাবে বসানো সেচপাম্পের ছাড়পত্র পেতেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা করেছেন। এ বিষয়ে পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী। এদিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৪ সালে উপজেলার শ্রীরামপুর পেট্রোল পাম্প এলাকায় ১ কিউসেক সেচপাম্প স্থাপনের জন্য আবেদন করেন রওশন আলী। বিএডিসির প্রতিনিধিরা সরেজমিন পরিদর্শন করে পাম্প স্থাপনের নীতিমালার সঙ্গে আবেদনের বিষয়টি সাংঘর্ষিক ও ছাড়পত্র প্রদানসাপেক্ষ না হওয়ায় ছাড়পত্র দেয়নি। পরে একপ্রকার জোর করেই রাসেদুল ইসলাম ও তার দুলাভাই মাহবুর গভীর নলকূপ স্থাপন করে। তিনি নির্বাহী প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলীকে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা দিয়েও ছাড়পত্র না পাওয়ার অভিযোগে গত ২৮ জানুয়ারি আদালতে মামলা করেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-বনপাড়া মহাসড়কের পাশে শ্রীরামপুর পেট্রোল পাম্প এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপন করে সেচ দিচ্ছেন রাসেদুল ও তার দুলাভাই মাহবুব। এ ছাড়া কবে, কখন, কোন কর্মকর্তাকে কত টাকা দিয়েছেন এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি মামলার বাদী রাসেদুল ও তার দুলাভাই মাহবুব। এমনকি নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেনকে চেনেন না বলেও স্বীকার করেন তারা। রাসেদুল ইসলাম জানান, সেচপাম্প বসানোর ছাড়পত্র পেতেই মামলা করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) অধীনে শ্রীরামপুর এলাকার সেচ পরিচালক শহিদুল ইসলাম জানান, সেচের ছাড়পত্র পেতে নির্বাহী প্রকৌশলীকে ঘুষ দেওয়ার বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য নয়।
বিএডিসি বড়াইগ্রাম জোনের সহকারী প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান জানান, ঘুষ নিয়ে এককভাবে কাউকে ছাড়পত্র দেওয়ার সুযোগ নেই। কয়েকটি সরকারি অফিসের প্রতিনিধি কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত ৯ সদস্যবিশিষ্ট সেচ কমিটির সভাপতি ইউএনও। এককভাবে কাউকে ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।
বিএডিসি নাটোর রিজিয়নের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন জানান, উপজেলা সেচ কমিটির সঙ্গে জেলা পর্যায়ের দপ্তরের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। রাসেদুল সেচপাম্পের জন্য কমিটির কাছে আবেদন করে। কিন্তু নির্দিষ্ট দূরত্ব না মেনে পাম্প বসানোর কারণে কমিটি ছাড়পত্র দেয়নি। সেই পাম্পের বৈধতা নেওয়ার জন্যই তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা, মানহানিকর মামলা করেছেন। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।
উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও ইউএনও লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, রাসেদুল ইসলাম নামে ওই ব্যক্তি সেচ কমিটির ছাড়পত্র ছাড়াই গভীর নলকূপ স্থাপন করেছে। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।