মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
এম পলাশ শরীফ, মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট)
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:৩৩ পিএম
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:৩৬ পিএম
একদিকে চিকিৎসক সংকট, অন্যদিকে নানা অনিয়মে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মানসম্মত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। প্রবা ফটো
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চলছে জোড়াতালি দিয়ে। রোগী ভর্তি হওয়ার ২৪ ঘণ্টায়ও দেখা মিলছে না চিকিৎসকের। এতে প্রায়ই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের। হাসপাতাল থেকে বরাদ্দ সরকারি বিভিন্ন সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে তারা।
রোগীদের অভিযোগ, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইনডোরে ভর্তি হওয়া রোগীদের চিকিৎসায় সরকারিভাবে ২৪ প্রকারের ওষুধের তালিকা থাকলেও বেশিরভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। এ ছাড়া আউটডোরে তিন টাকার টিকিটের পরিবর্তে নেওয়া হচ্ছে পাঁচ টাকা। রোগীদের ভর্তির ক্ষেত্রে জরুরি বিভাগেও অনেক রোগীকে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ নিয়ে নেই কোনো নজরদারি। এলাকার সচেতন মহলের দাবি, চিকিৎসা নিতে এসে সাধারণ রোগীদের যেন এ ধরনের ভোগান্তি পোহাতে না হয়। সেজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করে তারা।
গত সোমবার সরেজমিনে মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জানা যায়, আশির দশকের ৩৫ শয্যার হাসপাতালটি পরে ৫০ শয্যায় রূপান্তরিত হলেও উন্নতি হয়নি চিকিৎসা ব্যবস্থার। উপকূলীয় এ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রায় চার লাখ মানুষের গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত হাসপাতালটি এখন চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসা রোগী শাহ আলম হাওলাদার জানান, তিনি গত রবিবার দুপুর ২টায় হাসপাতালে ভর্তি হন। পরদিন সোমবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা পার হলেও কোনো চিকিৎসক তাকে দেখতে আসেননি। এ সময় কেবল দায়িত্বরত নার্স রোগী দেখেন। তিনি বলেন, ‘জরুরি বিভাগ থেকে ওষুধ লিখে দিয়েছেন। বাইরে থেকে আমাকে কিনতে হয়েছে মেট্রো আইভি ও নেক্সজাম ৪০ এমজি ইনজেকশন।’ মিজান হাওলাদার নামের আরেকজন রোগী জানান, তাকেও বাইরে থেকে বমির ইনজেকশন কিনে আনতে হয়েছে। জাকির হাওলাদার নামের একজন রোগী জানান, তিনি গত রবিবার বিকালে ভর্তি হলেও গত সোমবার দুপুর পর্যন্ত রাউন্ডে কোনো চিকিৎসকের দেখা পাননি। এ ছাড়া ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ১১ মাস বয়সি শিশু আব্দুল্লাহ গত রবিবার রাত সাড়ে ১১টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে পরের দিন দুপুর পর্যন্ত শয্যায় শুয়ে চিৎকার করছিল। শিশুটির অভিভাবকরা জানান, কোনো চিকিৎসক তাকে দেখতে আসেননি। রমিচা বেগম ও তার স্বামী হানিফ শেখ দুজনেরই চিকিৎসার জন্য ভর্তি হতে জরুরি বিভাগে গুনতে হয়েছে বাড়তি টাকা। এ রকম নানা অভিযোগ করে রোগীরা।
এদিকে রোগীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতালের ইনডোরে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ভর্তি হওয়া রোগীদের জন্য বরাদ্দ থাকা ওষুধের তালিকায় একটি নির্দিষ্ট ইনজেকশন থাকলেও গ্রুপ পরিবর্তন করে অন্য কোম্পানির ইনজেকশন লেখা হয়েছে জরুরি বিভাগ থেকে। রোগীদের অভিযোগ, ওই কোম্পানিকে খুশি রাখতে ইনজেকশনটি লেখা হয়েছে যা তাদের বাধ্য হয়ে হাসপাতালের বাইরের দোকান থেকে কিনতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে হাসপাতালে গত রবিবার দায়িত্বে থাকা আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শাহারিয়ার ফাতাহ্ বলেন, ‘আমি একাই ওই দিন আউটডোর, ইনডোর ও জরুরি বিভাগের তিনটি দায়িত্ব পালন করেছি। এ কারণে ভর্তি হওয়া রোগীদের দেখতে রাউন্ডে যেতে পারিনি।’ তিনি বলেন, ‘কাগজে-কলমে সাতজন চিকিৎসক থাকলেও দায়িত্ব পালন করছেন চারজন। একজন ডেপুটেশনে রয়েছেন। ডা. লাবণী আক্তার শরণখোলায়। আর ডা. মেহজাবিন বর্ণা ও ডা. দোলা পালাক্রমে একে অন্যের প্রক্সি দিচ্ছেন।’
মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুজাহিদুল ইসলাম জানান, তিনি পৌরসভার একটি মিটিংয়ে রয়েছেন। রোস্টার অনুযায়ী চিকিৎসকরা দায়িত্ব পালন করবেন। আর সরবরাহের বাইরে ওষুধের গ্রুপ পরিবর্তনের বিষয়টি তার জানা নেই। এক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হলে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।