পটিয়া পৌরসভা
শফিউল আজম, পটিয়া (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:৫৮ এএম
মহাসড়কের পাশে পটিয়া পৌরসভার ময়লার ভাগাড়ে সারাক্ষণই জ্বলতে থাকে আগুন। বিষাক্ত ধোঁয়ায় হুমকিতে পড়েছে আশপাশের পরিববেশ। প্রবা ফটো
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বাসস্টেশনের শ্রীমাই এলাকায় মহাসড়কের পাশ ঘেঁষেই পটিয়া পৌরসভার বিশাল ময়লার ভাগাড়। অঘোষিত এ ময়লার ভাগাড়ের দুর্গন্ধে স্থানীয়রা বিপাকে পড়েছে। ভাগাড়ের ময়লার আগুন সারাক্ষণই জ্বলতে থাকে। এ থেকে সৃষ্ট ধোঁয়া চারপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।
স্থানীয়রা জানায়, পৌরসভার এ ময়লার ভাগাড়ে আগুন সব সময় জ্বলতে থকে। এতে বিশাল কুণ্ডলী পাকিয়ে ধোঁয়া ওড়ে। ধোঁয়ায় চতুর্দিক অন্ধকার হয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে বহু গাছপালা মরে গেছে। বিবর্ণ হয়ে পড়েছে গাছপালা। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ যানবাহনের যাত্রীরা নাক-মুখ চেপে মহাসড়কে চলাচল করে।
জানা গেছে, পটিয়া পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড থেকে প্রতিদিন কয়েকশ টন ময়লা আহরণ করা হয়। এসব ময়লার বেশিরভাগ ফেলা হয় মহাসড়কের পাশে শ্রীমাই এলাকায়। এখানে ময়লা ফেলার প্রতিবাদে স্থানীয়রা অনেকবারই আন্দোলন, প্রতিবাদ করেছে। পালন করেছে মানববন্ধন কর্মসূচি। তাতে কোনো লাভ হয়নি।
তারপরও পৌর কর্তৃপক্ষ ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান জোগাড় করতে পারেনি। স্থানীয়রা মনে করে, এ ব্যাপারে পৌর কর্তৃপক্ষের অবহেলাই দায়ী। মহাসড়কের পাশে ময়লা ফেলায় পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি স্থানীয়রা নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে, এটা দায়িত্বশীলরা উপলব্ধি করেননি। ফলে পৌরবাসীর দাবিÑ মহাসড়কের পাশে ময়লা না ফেলে নির্দিষ্ট জায়গায় এটি ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। জনবসতিপূর্ণ এলাকার বাইরে ময়লা ফেলার জায়গা নির্ধারণের দাবি পৌরবাসীর সচেতন অংশের।
নির্দিষ্ট ময়লা ফেলার স্থান না থাকায় পৌরসভার সব ময়লা ফেলা হচ্ছে মহাসড়কের পাশে। এ কারণে স্থানীয়রা পৌর প্রশাসনের ওপর ভীষণ ক্ষুব্ধ। ময়লার ভাগাড়ের দুর্গন্ধ বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয়দের বসবাস করাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, পৌরসভার সাবেক মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশিদ ও আইয়ুব বাবুল ময়লা ফেলার ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। সাবেক মেয়র আইয়ুব বাবুল উপজেলার হাইদগাঁও, ভাটিখাইন ও সুচক্রদণ্ডী এলাকায় পৌরসভার ময়লা ফেলতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন। পরে পৌর কর্তৃপক্ষ ময়লা নিয়ে মারাত্মক ঝামেলায় পড়ে। এ ঘটনার পর থেকেই মহাসড়কের পাশ ঘেঁষে শ্রীমাই এলাকায় পৌর কর্তৃপক্ষ ময়লা ফেলে আসছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মহিউদ্দীন বলেন, ‘ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ের আগুন ও ধোঁয়ার কারণে এলাকার অনেক মানুষ শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছে। খোলা আকাশের নিচে চব্বিশ ঘণ্টা ময়লার ভাগাড়ে আগুন ও ধোঁয়া ওঠায় পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। এলাকার মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। অথচ পৌর প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর নীরব রয়েছে। প্রথম শ্রেণির একটি পৌরসভার ময়লা ও বর্জ্য মহাসড়কের পাশে কোন বুদ্ধিতে ফেলা হচ্ছে? দায়িত্বশীলদের উচিত এটা বন্ধ করা। পৌর প্রশাসন কেন ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা নির্ধারণ করছে না, তা ভেবে আমরা হতবাক।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক ফারহানুর রহমান বলেন, ‘পৌরসভার ময়লা ফেলার সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। এটি সমাধানে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে আসছি। নানা জটিলতার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। আশা করি অচিরেই সমাধান হবে।’