বগুড়া অফিস
প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:৩৭ পিএম
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:৪৮ পিএম
উদ্ধারকৃত বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী গন্ধগোকুল। প্রবা ফটো
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার সুজাইতপুর গ্রামে স্থানীয় জনতার কাছ থেকে একটি গন্ধগোকুল উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে পরিবেশবাদী সংগঠন ‘টিম ফর অ্যানার্জি অ্যান্ড অ্যানভায়রনমেন্টাল রিসার্চের (তীর) সদস্যরা স্থানীয় বনকর্মীদের সহায়তায় এ প্রাণীটি উদ্ধার করে। পরে বিকালে তারা বগুড়া সামাজিক বন বিভাগে গন্ধগোকুলটি হস্তান্তর করেন।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (বগুড়া) মতলুবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তীরের বগুড়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমিত সাহা বলেন, ‘গন্ধগোকুলটি খাবারের সন্ধানে সোনাতলা উপজেলার সুজাইতপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামে ঢুকে পড়ে। এ সময় স্থানীয়দের আচরণে বিরক্ত হয়ে প্রাণীটি কয়েকজনকে আঁচড় দেয়। এতে স্থানীয় জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে গন্ধগোকুলটিকে আটকিয়ে মারপিট করে। পরে এটিকে খাঁচায় বন্দি করে রাখা হয়। বিষয়টি জানার পর তীরের সদস্যরা মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে গন্ধগোকুলটি না মারার জন্য গ্রামবাসীকে অনুরোধ করে। দুপুরে তীরের সভাপতি মো. হোসেন রহমান, সোনাতলা উপজেলা বন বিভাগের কর্মী জুলফিকার আলী ও আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্রামবাসীকে বুঝিয়ে গন্ধগোকুলটিকে উদ্ধার করে বগুড়ায় আনি।’
তিনি বলেন, ‘গন্ধগোকুল মানুষের বেশি কাছাকাছি থাকে। দিনের বেলা বড় কোনো গাছের ভূমি সমান্তরাল ডালে লম্বা হয়ে শুয়ে থাকে, এর লেজ ঝুলে থাকে নিচের দিকে। ফলখেকো হলেও এরা কীট-পতঙ্গ, শামুক, ডিম, পাখির ছানা, ছোট প্রাণি, তাল-খেজুরের রসও খায়। অন্য খাদ্যের অভাবে মুরগি, কবুতর ও ফল চুরি করে। এরা ইঁদুর ও ফল-ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে কৃষকের উপকার করে।’
বণ্য প্রাণী সংরক্ষণে তীরের কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, ‘তীর জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে ২০১১ সাল থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য সংগঠনটি ‘বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে নিবেদিত প্রতিষ্ঠান’ ক্যাটাগরিতে জাতীয় পদকে ভূষিত হয়েছে।’
তীরের সভাপতি হোসেন রহমান বলেন, ‘নিশাচর এ প্রাণীটি একসময় প্রচুর পাওয়া গেলেও বর্তমানে প্রাণীটি তেমন চোখে পড়ে না। জাতিসংঘের পরিবেশ ও বন্য প্রাণীবিষয়ক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন নেচারের (আইইউসিএন) মতে, গন্ধগোকুল বিপন্ন প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। পাশাপাশি বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী প্রজাতিটি সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।’
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (বগুড়া) মতলুবুর রহমান বলেন, ‘গন্ধগোকুলটি আপাতত আমাদের হেফাজতে আছে। তবে খুব শিগগিরই একে কোনো বনাঞ্চলে, যেখানে এটি সহজেইি এর খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে- এমন জায়গায় ছেড়ে দেওয়া হবে।’