× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সেচ ব্যবস্থাপনা

ফুরিয়ে যাচ্ছে পানির আধার, পদ্মার পানিতে সম্ভাবনা

রাজু আহমেদ, রাজশাহী

প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:৩৯ এএম

আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১২:১৫ পিএম

রাজশাহীর তানোর উপজেলায় আলুর ক্ষেতে সেচের জন্য খাল করে এভাবেই পানি নিয়ে যাওয়া হয়। প্রবা ফটো

রাজশাহীর তানোর উপজেলায় আলুর ক্ষেতে সেচের জন্য খাল করে এভাবেই পানি নিয়ে যাওয়া হয়। প্রবা ফটো

খাদ্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত রাজশাহী বিভাগের বিস্তীর্ণ ফসলের জমিতে আগামী দিনগুলোতে সেচের পানি জোগান দেওয়া প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। বর্তমানে এই অঞ্চলের সেচব্যবস্থা ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল। তবে মাত্রাতিরিক্ত গভীর নলকূপ স্থাপন ও অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের কারণে ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার কমতে থাকায় এ পানিও ফুরিয়ে আসছে। এরই মধ্যে ৩ জেলার ৮ উপজেলার অধিকাংশ গভীর নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। ফলে অর্ধেকে নেমে এসেছে পানি উত্তোলন। এ অবস্থায় পদ্মা নদীর পানি সম্ভাবনা হয়ে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) পদ্মার পানি কাজে লাগাতে উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সেচ নিয়ে দুশ্চিন্তা দূর হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি উদ্যোক্তা হাসান খন্দকার হাসান কবির বলেন, ‘রাজশাহী অঞ্চলে সেচব্যবস্থা কঠিন হয়ে পড়ছে। অথচ আমাদের পাশ দিয়েই পদ্মা নদী বয়ে গেছে। সেই নদীর পানি এখন পর্যন্ত পুরোদমে কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি। উত্তরের সেচব্যবস্থা ব্যাহত হলে দেশে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেবে। কাজেই ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার ঠিক করতে এবং সেচব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে পদ্মার পানি ব্যবহার করে উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি।’

বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, বিএমডিএর বাস্তবায়নাধীন সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে বরেন্দ্র এলাকার বিস্তীর্ণ এক ফসলি জমিকে তিন ফসলি জমিতে রূপান্তিত হয়েছে। সেচ সুবিধার আওতায় আসায় আশপাশের এলাকাতেও ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বর্তমানে বিএমডিএর পরিচালিত প্রায় ১৬ হাজারের গভীর নলকূপের মাধ্যমে বছরে প্রায় ৪৫ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদিত হচ্ছে।

তবে বিপুল পরিমাণে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে বরেন্দ্র অঞ্চলে মাটির তলে পানির আধার ফুরিয়ে আসছে। এরই মধ্যে রাজশাহী জেলার তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর, নাচোল ও গোমস্তাপুর, নওগাঁ জেলার সাপাহার, নিয়ামতপুর ও পোরশা উপজেলায় অপরিকল্পিতভাবে পানি উত্তোলনের ফলে এখন পানির স্তর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে গভীর নলকূপগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। তাই বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ ভূগর্ভস্থ পানির স্তর রিচার্জের মাধ্যমে স্বাভাবিক করতে চলতি সেচ মৌসুমে ২ হাজার ঘণ্টার পরিবর্তে ৯৮০ ঘণ্টা পানি উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএমডিএর তথ্যমতে, তারা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েই কাজটি করছে। 

সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহের প্রকল্পের মাধ্যমে দেখা গেছে, বরেন্দ্রভূমিতে ২১৫টি ইউনিয়ন রয়েছে, যার ৮৭টি ইউনিয়ন উচ্চমাত্রার স্ট্রেস অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত। এর ৪১ শতাংশ এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি খুবই জটিল আকার ধারণ করবে। এ এলাকায় ৮ হাজার ২০০টি পুকুর রয়েছে। কিন্তু এসব পুকুরের অধিকাংশই সরকারের বেদখলে রয়েছে। ৮টি উপজেলার ৪১ শতাংশ মানুষ এখন খাওয়ার পানি পাচ্ছে না। 

সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস এর নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা এ খান বলেন, ‘এখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ মিলিমিটার। সুতরাং এটি খরাপ্রবণ এলাকা। যখন এখানে ভূগর্ভস্থ পানিকে সেচের জন্য উত্তোলন করা হয়, তখন কৃষি উৎপাদনে বিপ্লব হলো। এ পদ্ধতিতে মানুষকে চাষাবাদ করতে উৎসাহিত করেছি। প্রতিবছর এখানে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৮৬ সেন্টিমিটার করে নিচে নেমে যাচ্ছে। এখন আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করণীয় হচ্ছেÑ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে এ জায়গাগুলোকে দেখতে হবে।

বিএমডিএর সেচ শাখার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জিন্নুরাইন খাঁন বলেন, ‘বিএমডিএর অধীনে ১৫ হাজার ৮০০ ডিপ মেশিনের মাধ্যমে ৫ লাখ ৯৪ হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে সেচ দেওয়া হয়। যার মধ্যে বরেন্দ্র এলাকার তিনটি জেলার ৮টি উপজেলায় ১ হাজার ৯০০ ডিপ মেশিনে সেচ দেওয়া হয় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। এই উপজেলাসমূহে পানির স্তর একদম নেমে গেছে। বোরো মৌসুম বা রবি মৌসুমে ২ হাজার ঘণ্টা পানি দেওয়া হতো। নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ মে পর্যন্ত তিন মাস ৯৮০ ঘণ্টা সেচ দেওয়া হবে।’

রাজশাহী বিভাগের পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মুখলেসুর রহমান বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করতে বলা হয়েছে। ১৯৮৮ সালে জাইকা উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্পে সম্ভাব্যতা যাচাই করে। আবারও রিভিউ করা হবে এই সম্ভাব্যতা। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বর্ষার সময় পদ্মার পানি ক্যানেলের মাধ্যমে বরেন্দ্র অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হবে। ধরে রাখা হবে সারা বছর। সেই পানি সেচের কাজে ব্যবহার হবে। সেই সঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানি রিচার্জেও সহায়ক হবে। ভারত-বাংলাদেশ ফারাক্কা চুক্তি অনুসারে আমরা যে পরিমাণ পানি পাই, তাতে উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্পের জন্য কাঙ্ক্ষিত পানি পেতে সমস্যা হবে না। পানি লাগবে ৬৫ কিউসেক।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা