চট্টগ্রাম বন্দর
সুবল বড়ুয়া, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:৫৫ এএম
জলাবদ্ধতা নিরসনে খালের মুখে চলছে ড্রেজিং। প্রবা ফটো
বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা চট্টগ্রাম নগরীর প্রতিবছরের চিত্র। সেই জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও পানি উন্নয়ন বোর্ড এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছে। কিন্তু সেসব পদক্ষেপ কোনোই কাজে আসছে না। বর্ষা এলেই জলাবদ্ধতার দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। আর একে অপরের ওপর দোষ চাপিয়ে দায় সারার চেষ্টা চলে। দুই সেবা সংস্থা সিডিএ ও চসিকের এই দায় এড়ানোর ‘বাদানুবাদ’ পাশ কাটিয়ে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালে ‘ক্যাপিটাল ড্রেজিং’ নামে ২৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানা জটিলতায় থমকে থাকার পর মূলত ২০২২ সাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের তত্ত্বাবধানে কর্ণফুলী নদীতে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা ফেরানো ও নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে আটটি খালের মুখ খনন করা হচ্ছে।
প্রকল্পটির বর্তমান অগ্রগতি প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, “নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ‘ক্যাপিটাল ড্রেজিং’ প্রকল্পের অধীনে কর্ণফুলী নদীতে ড্রেজিং করা হচ্ছে। আটটি খাল খনন করা হচ্ছে। বর্তমানে চাক্তাই ও রাজখালী খালের মুখে ড্রেজিং চলছে।”
বন্দরের এই মুখপাত্র বলেন, ‘ইতোমধ্যে ফিশারী ঘাট, জোবায়ের খাল, লইট্টা খাল, বিএফটি খাল, অভয় মিত্র খাল, পিকে সেন খালের মুখে খনন করা হয়েছে। তিনটি ড্রেজার দিয়ে কর্ণফুলী থেকে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার ঘনমিটার মাটি তোলা হচ্ছে। সবমিলিয়ে এই ড্রেজিংয়ের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রকল্পটি নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বড় ভূমিকা রাখবে।’
জানা যায়, নগরীর ৩৭টি খাল ও নালা দিয়ে প্রতিদিন দুই হাজার টনের বেশি বর্জ্য কর্ণফুলী নদীতে পড়ে। তবে কর্ণফুলী নদী অভিমুখে নগরীর ৫২টি খাল ও নালার মুখ রয়েছে। দখল, দূষণ ও ভরাট হয়ে এসবের মধ্যে ১৫টি ইতোমধ্যে অস্তিত্ব হারিয়েছে। বর্তমানে বাকি ৩৭টি খাল দিয়ে প্রতিনিয়ত কর্ণফুলীতে বর্জ্য পড়ছে। নগরীর ৭০ লাখ মানুষের বর্জ্য, পলিথিন জমে কর্ণফুলীর তলদেশে বিশাল পলিথিন পাহাড় তৈরি করছে। আর তা নদী ও নদীর জীববৈচিত্র্যকে চরম হুমকির মুখে ফেলছে।
নগরীর শাহ আমানত সেতু এলাকা ও চাক্তাই খালের মুখে ২০১৪ সালে কর্ণফুলীর প্রস্থ ছিল প্রায় ৯০০ মিটার। দশ বছরের ব্যবধানে বর্তমান সময়ে এসে নদীর প্রস্থ দাঁড়িয়েছে ৪৩০ থেকে ৫১০ মিটার। নদীর দুপাড়েই যুগ যুগ ধরে চলে আসছে অবৈধ দখলদারত্ব।
প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে কর্ণফুলী নদীর দুপাড়ে অন্তত দুই হাজার অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। নদী দখল করে তৈরি করা হয়েছে এসব স্থাপনা-অবকাঠামো। এর ফলে নদীর স্বাভাবিক গতিশীলতা ও প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। কর্ণফুলী ভরাট হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। এই কর্ণফুলীকে বাঁচাতে অবশেষে ড্রেজিংয়ে নামে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা ধরে রাখতে ড্রেজিং চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার মোহাম্মদ শামসিত তাবরীজ। তিনি বলেন, ‘২৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ চলছে। কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা ধরে রাখার জন্য ড্রেজিং ও খাল খনন চলমান। নদীর চার কিলোমিটার অংশজুড়ে খননকাজ চলবে। ইতোমধ্যে নদীর তলদেশে জমে থাকা সাত মিটার গভীর পলিথিনের স্তর অপসারণ করা হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে এই ড্রেজিং প্রকল্প শেষ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে তা কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’