এমএ হান্নান, বাউফল (পটুয়াখালী)
প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৫:৪৯ পিএম
পটুয়াখালীর বাউফলের আলগী নদীতে একদিকে অবাধে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য, অন্যদিকে দুই পাড় দখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে স্থাপনা। এতে দিন দিন ভরাট হওয়ার পথে এগোচ্ছে নদীটি। শনিবার সকালে কালাইয়া বন্দর এলাকায়। প্রবা ফটো
দূষণ আর দখলের কারণে এখন মৃতপ্রায় পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার একসময়ের প্রবল খরস্রোতা নদী আলগী। উপজেলার প্রাণ আলগী নদী বাঁচিয়ে রাখতে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সচেতন মহল।
স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রমত্তা তেঁতুলিয়া নদী থেকে উৎপত্তি আলগী নদীর। উৎপত্তিস্থল কালাইয়া থেকে প্রবাহিত হয়ে বাউফল পৌর শহর ও বাউফল উপজেলার সূর্যমণি, কেশবপুর ও ধুলিয়া ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে পুনরায় তেঁতুলিয়ায় মিশেছে। এ ছাড়া কালাইয়া থেকে দাশপাড়া-নওমালা ইউনিয়ন হয়ে জেলার দশমিনা উপজেলা ও পৌর শহরের গোলাবাড়ি থেকে বগা ইউনিয়ন হয়ে লোহালিয়া নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে নদীটি। আলগী নদীকে বলা হয় উপজেলার প্রাণ। এ নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক বন্দর কালাইয়া। এ ছাড়া নদীর তীরে রয়েছে অর্ধশত হাট-বাজার।
সূত্র জানায়, ৭০, ৮০ ও ৯০ দশকে আলগী নদী হয়ে কালাইয়া-বগা, কালাইয়া-নওমালা, ধুলিয়া-কালিশুরী-কেশবপুর-কালাইয়া নৌরুট ছিল একমাত্র সহজ যাতায়াত ব্যবস্থা। উপজেলার অভ্যন্তরে কম খরচে মালামাল পরিবহন করতেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া আলগী নদী ধরে চলত বরিশাল ও ঢাকাগামী নৌযান। কিন্তু সেই দিন আর নেই। নদীটির যৌবনে ভাটা পড়েছে। নদী ভরাট, নাব্যতা সংকট ও দখলের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে নৌচলাচল। ময়লা-আবর্জনা ও বাসাবাড়ির শৌচাগারের মলমূত্র নদীতে ফেলায় ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। দূষিত হচ্ছে চারপাশের পরিবেশ। এতে হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য।
সরেজমিনে নদীকেন্দ্রিক বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কালাইয়া লঞ্চঘাট থেকে শুরু করে ধানহাট পর্যন্ত, ধানহাট থেকে দাশপাড়া খেজুরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পৌর শহরের ইটভাটা থেকে শুরু করে বিলবিলাস, নুরাইপুর লঞ্চঘাট, কেশবপুর সেতু, কালিশুরী লঞ্চঘাট, কালিশুরী বাজার এলাকায় নদীর দুই পাড়ে গড়ে উঠেছে পাঁচ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা। স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদী দখল করে গড়ে তুলেছে এসব স্থাপনা।
স্থানীয়রা জানায়, নদী অববাহিকায় গড়ে ওঠা বাণিজ্যিক বন্দরগুলোর ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীটি। দুর্গন্ধে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। নদীর দুই পাড় দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করায় সরু হয়ে গেছে আলগী। মরে গেছে আলগীর শাখা-প্রশাখা প্রায় শতাধিক খাল। এতে বন্ধ হয়ে গেছে উপজেলার অভ্যন্তরীণ নৌপথ। শুকনো মৌসুমে সেচ সংকটে বিপাকে পড়েন কৃষকরা।
অপরদিকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম বন্দর কালাইয়া বন্দরের কাঁচাবাজার, মাছবাজার, লঞ্চঘাট, পৌর শহর, নুরাইপুর, কালিশুরী বন্দরসহ বিভিন্ন হাট-বাজারের ময়লা-আবর্জনা ও বর্জ্য ফেলা হয় নদীতে। এতে নদীর পাড়ে ময়লার ভাগাড় তৈরি হয়েছে। চারদিকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। ফেলা হচ্ছে হাট-বাজারের ময়লা-আবর্জনা।
কালাইয়া বন্দরের মুদি ব্যবসায়ী মো. রিয়াজ বলেন, ‘কালাইয়া বন্দর থেকে সরকার প্রতিবছর দেড়কোটি টাকা রাজস্ব পায়। বাজারের রাজস্ব দিয়ে বাজারে উন্নয়নের কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। নদীতে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। এ কারণে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে।’
বন্দরের ধান-চাল ব্যবসায়ী খোকন কুণ্ডু বলেন, ‘একসময় নৌপথে কালাইয়া বন্দরে ধান, পাটসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য আসত। এতে কৃষকের পরিবহন ব্যয় কম হতো। নদী ও খালগুলো দখলে ভরাট হয়ে যাওয়ায় সড়কপথই একমাত্র ভরসা। এতে ব্যয় ও দুর্ঘটনা দুটোই বাড়ছে।’
নওমালা গ্রামের কৃষক রহিম, সালাম, সোবাহানসহ অনেকে জানান, মৌসুমে খালে পানি থাকে না। এ কারণে ইরিসহ রবিশষ্য চাষাবাদ করতে তাদের পানিসংকট দেখা দেয়।
এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রতীক কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘ম্যাপ দেখে খালের সীমানা নির্ধারণ করে দখল হওয়া খালের জমি উদ্ধারে অতিদ্রুত অভিযান চালানো হবে।’