নোয়াখালী প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১২:৪৭ পিএম
শনিবার বিকালে জানাজা শেষে নিজ বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে সোহেল রানাকে শায়িত করা হয়। প্রবা ফটো
ভাগ্য ফেরাতে সাত বছর আগে সৌদি আরব পাড়ি জমান বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে সন্তান মো. সোহেল রানা (২৯)। দাঁতে ব্যথা নিয়ে সৌদির দাম্মাম শহরের হাসপাতালে ভর্তি হয়ে টানা ২৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে জীবনযুদ্ধে হেরে বাড়ি ফিরেছেন। তবে স্বাভাবিক আর উৎসবমুখরতা নিয়ে বাড়ি না ফিরে কফিনবন্দি হয়ে বিষাদের ছায়া হয়ে বাড়িতে আসলেন সোহেল রানা। হাজারো মানুষের অশ্রুসিক্ত নয়নে শেষ বিদায় দিলেন সবাই।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সুবর্ণচর উপজেলার নিজ বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়।
সোহেল রানা নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চর পানা উল্লাহ গ্রামের হোসেন হাজী বাড়ির মো. ইউসুফের ছেলে।
জানা যায়, ২০১৭ সালে সৌদি পাড়ি জমান সোহেল। চার বোন আর এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় সন্তান এবং পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। গত ২৫ জানুয়ারি (শনিবার) বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এর আগে ১ জানুয়ারি তাকে হাসপাতালে ভর্তি করান সহকর্মীরা।
শনিবার দুপুরে সোহেলের মরদেহ নিজ বাড়িতে আসলে স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বিকেলে বাড়ির সামনের ফসলের মাঠে জানাজা শেষে নিজ বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে শায়িত করা হয়।
সোহেল রানার প্রতিবেশী আব্দুল করিম বলেন, সোহেল রানার ব্যবহার অনেক ভালো ছিল। দেখা হলেই হাসিমুখে কথা বলত। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার জানাজায় অংশগ্রহণ করার জন্য লক্ষ্মীপুর ও আশপাশের জেলা থেকেও লোক এসেছে। তার এমন মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না। চার বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।তার ইচ্ছা ছিল সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনবে, অভাবগুলো দূর করবে। কিন্তু আজ সে পরপারে পাড়ি জমিয়েছে।
সোহেল রানার বাবা মো. ইউসুফ বলেন, সোহেল পড়াশোনা রেখে পরিবারের স্বপ্ন পূরণ করতে প্রবাসে পাড়ি দিয়েছিলো। কিন্তু ৭ বছরের মাথায় আজ সে কফিনবন্দী হয়ে ফিরেছে। আমাদের পারিবারিক কবরস্থানে আমার বাবাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করেছি। আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ যেনো তাকে জান্নাতবাসী করেন।
জানাজায় অংশ নেওয়া ইউপি সদস্য মো. আবুল কাশেম বলেন, গাড়ি চালানো শেষে হঠাৎ সোহেল রানার দাঁতে ব্যথা ওঠে। সে প্রায়ই দাঁত নিয়ে কষ্ট পেত। হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে ডাক্তার জানান তার শারীরিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। সবশেষে তার ফুসফুস খারাপ হয়ে যায় এবং শনিবার (২৫ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সময় দুপুর একটায় চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অল্প বয়সে পরিবারের মায়া ত্যাগ করে সে প্রবাসে এসেছে। এখন দুনিয়া থেকে বিদায় নিলো। এটি মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।
চরজব্বর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবু কাউছার বলেন, সোহেল ফিরবে এটা সবার স্বপ্ন ছিল আকাঙ্খা ছিল। কিন্তু এই ফেরা জীবনের শেষ ফেরা হবে তা কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি। এমন আকস্মিক মৃত্যুতে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এক নজর মরদেহ দেখার জন্য আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও এলাকার শত শত নারী-পুরুষ ভিড় করেন। জানাজা শেষে তাকে অশ্রুসিক্ত নয়নে শেষ বিদায় দিয়েছে সবাই।