চট্টগ্রামে অমর একুশে বইমেলা শুরু
চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:০৭ পিএম
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:০৯ পিএম
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকালে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা আদিলুর রহমানসহ অন্যান্য অথিতিবৃন্দ। প্রবা ফটো
ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়ে বাংলাদেশ বদলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গৃহায়ণ, গণপূর্ত ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকালে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতির বক্তব্যে এ কথা বলেন উপদেষ্টা আদিলুর রহমান।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) উদ্যোগে ২৬ দিনব্যাপী অমর একুশে বই মেলা শুরু হয়েছে। শনিবার নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম মাঠে শুরু হওয়া এই বই মেলা চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং ছুটির দিনগুলোতে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আদিলুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘ সাড়ে পনের বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন ঘটিয়ে জুলাইয়ের ৩৬ দিনে ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়ে বাংলাদেশ বদলে দিয়েছে। সেই বদলে যাওয়া ন্যারেটিভের ওপর দাঁড়িয়ে আজকের এই বইমেলা। বাংলাদেশে তো বইমেলা ৫২ সাল থেকেই হচ্ছে। ২১ উদযাপন করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি খুবই ছোট আঙ্গিকে প্রচারণার জন্য স্মারক স্মরণিকা বের করে নিজেদের পাড়ায় পাড়ায় কিছু অনুষ্ঠান ছিল। ব্যাপকভাবে হয়তো বাংলা একাডেমি অনেক পরে করেছে। চট্টগ্রামেও অনেকদিন আগে থেকে শুরু হলেও সেই সময় ছোট ছোট অঙ্গনে কিন্তু কাজ ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকের যেই বাস্তবতা সেটা হচ্ছে, এই সমস্ত উদ্যোগকে ছাপিয়ে বাংলাদেশকে বদলে দেয়ার উপরে দাঁড়িয়ে মানুষের অধিকার আদায়ের যে সংগ্রাম, অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম, একটা ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে যে সফল সংগ্রাম সেটার উপরে দাঁড়িয়ে আজকের বইমেলা। আপনারা আপনাদের কথাগুলো লিখবেন। যেটা আমরা আশা করি এই সংগ্রামে অংশ নেওয়া সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের কথাগুলো লিখবেন। আমরা আশা করি শহীদদের কথা লেখা হবে। আজকে শহীদ ওমরের কবর জিয়ারত করতে গিয়েছিলাম।’
আদিলুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রতিনিয়ত যেন এ কথা মনে থাকে, যে রক্তের উপরে দাঁড়িয়ে কিন্তু আমরা আজকের বাংলাদেশে আছি। আমাদের যেন প্রতিনিয়ত মনে থাকে যে, যেই ঐক্য রচিত হয়েছিল পাঁচই আগস্ট সেই ঐক্য যেন কোন অবস্থাতেই কোন শক্তি ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা না করতে পারে। আমাদের যেন এই কথা মনে থাকে যে, যে কোন দুর্বলতার সুযোগে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার চেষ্টা করতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গণমানুষের ঐক্য বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং বাংলাদেশ যেটা আশা করে, সেটা হচ্ছে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো। ২১ মানে মাথা নত না করা। এ একটা কথা বলি না আমরা। আজকে তো পহেলা ফেব্রুয়ারি। আমাদের ২১শে ফেব্রুয়ারি এবার যেন সেটা মনে রেখেই করা হয়।’
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ছাত্র-জনতা-শ্রমিকের যে বিপ্লব ২০০৭ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত মানুষের মৌলিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার সংগ্রাম সবকিছুই জ্ঞান ভান্ডার সমৃদ্ধ থাকার কারণেই কিন্তু আমরা রাজপথে আন্দোলন করতে পেরেছি। দেখুন, প্রতিটি জায়গায় কিন্তু ছাত্রদের ভূমিকা আছে। সেটা ৫২ বলুন, ৭১ বলুন, ৯০ বলুন, ২৪ বলুন। ছাত্ররাই কিন্তু আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে। এর সাথে শ্রমিক জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। কাজে আজকে আমরা মনে করি পড়ার কোন বিকল্প নেই। তাইতো আমাদের পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআনের প্রথম আয়াতটা কিন্তু ‘পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন’। আমাদেরকে পড়তে হবে, এটার কোন বিকল্প নেই। আজকে বইমেলাতে প্রকাশনী সংস্থাগুলো সাজিয়েছে তাদের স্টলগুলো আপনারা সবাই কিন্তু সেখানে যাবেন। আমি আজকে আপনাদেরকে অনুরোধ জানাচ্ছি, সবাই কিন্তু বই কিনবেন। সবাইকে বই কিনতে হবে। কারণ আপনারা না কিনলে তারা উৎসাহিত হবে না। পরবর্তীতে তারা আরো বেশি উৎসাহিত হবে যদি আপনারা বই কিনেন।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আহসান হাবীব পলাশ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অমর একুশে বইমেলা চট্টগ্রাম-২০২৫ এর আহ্বায়ক চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা ড. কিসিঞ্জার চাকমা, শিক্ষা কর্মকর্তা মোছাম্মৎ রাশেদা আক্তার, সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের শাহাবুদ্দিন বাবু, আলী প্রয়াস, সিডিএ বোর্ড মেম্বার জাহিদুল করিম কচি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ইবনে হোসাইন জিয়াদ, চসিকের সমাজকল্যাণ ও সংস্কৃতি কর্মকর্তা মামুনুর রশীদসহ সংস্কৃতি জগতের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানে শ্রেয়সী নামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।