কুমিল্লা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৭:৫২ পিএম
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:২৪ পিএম
কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সামনে শনিবার দুপুরে লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী। প্রবা ফটো
কুমিল্লায় নির্যাতনে মারা যাওয়া যুবদল নেতা মো. তৌহিদুল ইসলামের লাশ নিয়ে বিচার দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে সকালে নিহত তৌহিদুলের এলাকায় বিক্ষোভ করে স্থানীয়রা।
নিহত তৌহিদুল আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের পাঁচথুবী গ্রামের মোখলেছুর রহমানের ছেলে ও ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক।
মানববন্ধনে উপস্থিত এলাকাবাসী জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে সেনাবাহিনীর ৩টি ও একটি লাল রঙের গাড়ি এসে তৌহিদুলের কাছে অস্ত্র আছে- এমন অভিযোগে তাকে ধরে নিয়ে যায়। পরদিন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের মাধ্যমে জানতে পেরে স্বজনরা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে তার মরদেহ খুঁজে পায়। এ সময় নিহত তৌহিদুলের পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়।
মানববন্ধনে উপস্থিত এলাকাবাসী তার হত্যার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এ ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছে পুলিশ।
এ মৃত্যুর ঘটনা দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। হেফাজতে যেকোনো ধরনের নির্যাতন ও হত্যার কঠোর নিন্দাও জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এক বিবৃতিতে সরকারের এ নির্দেশনার কথা জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে যেকোনো ধরনের নির্যাতন ও হত্যার কঠোর নিন্দা জানায়। জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানবাধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করাই এই সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য, যেখানে দেশের শীর্ষ মানবাধিকার কর্মীরা সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন।
প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কুমিল্লায় গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আহত অবস্থায় তরুণ তৌহিদুল ইসলামকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, ওই দিন ভোররাতে তাঁর বাড়ি থেকে আটক করার পর তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হন। তৌহিদুলের মৃত্যুর বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
দেশে এ ধরনের অপরাধের বিচারিক প্রক্রিয়া সংস্কারের লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে একাধিক কমিশন গঠন করেছে। এসব কমিশনের বেশির ভাগই তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ, অপরাধ ব্যবস্থাপনা এবং বিচারিক প্রক্রিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের সব সুযোগ নির্মূল করতে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপ করবে বলে প্রেস উইং জানায়।
অন্তর্বর্তী সরকার এই সংস্কার কর্মসূচি কার্যকর করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরও (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।
আইএসপিআর জানায়, গত ৩১ জানুয়ারি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে যৌথবাহিনীর অভিযানে তৌহিদুর রহমানকে আটক করা হয়। পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এই দুঃখজনক ঘটনার পরপরই সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। পাশাপাশি মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আইএসপিআর আরও জানায়, তদন্তে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সেনা আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।