জহুরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:২৪ পিএম
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:২৮ পিএম
কাঁধে একটি ব্যাগ। তার মধ্যে খাবার স্যালাইন ও বাংলা বর্ণমালা বই। কুষ্টিয়া শহরের অসচ্ছল মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেই স্যালাইন ও বই দেন তিনি। দুই দশকের বেশি সময় ধরে তিনি এ কাজ করে আসছেন। এই কাজে যুক্ত মানুষটির নাম কাজী সোহান শরীফ। তিনি জেলা শহরের থানাপাড়ার গোলাম রহমান রোডের বাসিন্দা। মানুষের দোরগোড়ায় গিয়ে তিনি খাবার স্যালাইন ও বাংলা বর্ণমালা বই দিয়ে আসেন, শুধু তাই নয়। তিনি মানবকল্যাণে আরও নানা কাজ করেন।
কাজী সোহান শরীফের অবস্থা খুব ভালো, অনেক বিত্তশালী, প্রচুর সম্পদের মালিক, তেমনটা কিন্তু নয়। নানা টানাপড়নে থাকলেও সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কিছু একটা করার তাড়না, তাকে জনহিতকর কাজে নামিয়েছে। তিনি এ কাজে প্রশংসাও পেয়েছেন।
শীত-গ্রীষ্ম কোনো ঋতুতেই বাদ যায় না তার স্যালাইন বিতরণ কাজ। আর বছরের শুরুতেই পথশিশুদের হাতে তুলে দেন বাংলা বর্ণমালা বই। পাশাপাশি শহরের কোর্ট স্টেশনে পানির ব্যবস্থা করাসহ নানা কাজে জড়িয়ে থাকেন। পঙ্গু মানুষকে নিয়ে কাজ করেন তিনি।
সম্প্রতি কাজী সোহান শরীফ অন্ধদের জন্য তৈরি করেছেন আল্ট্রা সেন্সর চশমা। এই চশমা পরে পথে হাঁটলে সামনে যেকোনো ধরনের বাধা থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংকেত বেজে উঠবে। মাঝেমধ্যে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজনও করেন তিনি।
আলাপকালে জনহিতকর কাজে নিবিষ্ট থাকা মানুষটি বলেন, গ্রামের বাড়ি খোকসা উপজেলার জানিপুরে। অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন পার করেছেন। সাংসারিক চাপে পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটেছে। তিনি বলেন, খুব কাছ থেকে চিকিৎসাবঞ্চিত নারী-পুরুষের মৃত্যু দেখেছি। নিজেও ডায়রিয়াসহ নানান রোগে ভুগেছি। কিন্তু চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। সোহান বলেন, আজও সমাজের ছিন্নমূল ও অসচ্ছল মানুষ নানা সংকটের মধ্য দিয়ে জীবন পার করছে। সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক হলেও এসব পরিবারের অনেক শিশু তা থেকে আজও বঞ্চিত। আবার এসব মানুষ কিছুটা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকে বলে তারা ডায়রিয়াসহ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হন। নিজের জীবনের শিক্ষা থেকেই তাই এসব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা ভেবেছিলাম। আজ থেকে ২২ বছর আগে শুরু করেছিলাম, তা আজও করে চলেছি। আমি হয়তো এর মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তন করতে পারব না। তবে কিছু মানুষের পাশে থাকতে পারি, এটুকুই আমার মানসিক শান্তি।
ঘোড়াঘাট এলাকার বাসিন্দা সোলায়মান হোসেন বলেন, সোহান ভাই তার এলাকায় পিছিয়ে পড়া অসহায় মানুষদের প্রতিবছর বই স্যালাইন কম্বল দিয়ে থাকেন। কুষ্টিয়া শহরের ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শাহ আলম জানান, কাজী সোহানের ডাকে সাড়া দিয়ে আমি অনেক সময় ফ্রি ক্যাম্পে শিশুসহ বয়স্কদের মধ্যে চিকিৎসা দিয়েছি। তিনি মানুষের কল্যাণে কাজ করে থাকেন বলে আমি জানি। তার উদার মন আমাকে মুগ্ধ করে। সময় পেলে আমিও তার সহযোগিতা করতে চাই। তার মতো জনহিতকর একজন মানুষকে আমি সব সময় সালাম জানাই।
যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল বলেন, কাজী সোহান আমাদের বাড়িতে অনেক সময় ভিটামিন ওষুধ স্যালাইনসহ নানা কিছু শিশুদের দিয়েছেন। সেই সঙ্গে নারীদের মধ্যেও ভিটামিন ওষুধ ক্যালসিয়াম ওষুধ বিতরণ করা হতো। আমরা চাই, তার সহযোগিতা চলতে থাকুক। ফার্মাসিস্ট নাজিম উদ্দিন রাজু বলেন, সোহান পথশিশু, প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করেন। তার পাশে থাকতে চাই।