× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পরিবারে চলছে আহাজারি

রিক্রুট এজেন্সির ফাঁদে পড়ে মৃত্যুর মুখে আরমান

শাখাওয়াত হোসেন সোহান, রাজবাড়ী

প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:১৭ পিএম

রিক্রুট এজেন্সির ফাঁদে পড়ে মৃত্যুর মুখে আরমান

আদম ব্যবসায়ীর ফাঁদে পড়ে ৮ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশ যান আরমান। অন্য দেশ ঘুরিয়ে থিতু হওয়ার আশ্বাস দিয়ে আদম ব্যবসায়ীরা তাকে রাশিয়ায় পাঠায়। সেখানে এখন তার জীবন নিয়ে টানাটানি অবস্থা। আরমানের বাড়ি কালুখালীর মাঝবাড়ী ইউনিয়নের কুষ্টিয়াডাঙ্গী গ্রামে।

তিনি এই গ্রামের আকরাম মন্ডলের একমাত্র সন্তান। পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যই মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে বিদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। কিন্তু যে রিক্রুট এজেন্সির মাধ্যমে তিনি বিদেশ যান, তারা আরমানের সঙ্গে রীতিমতো প্রতারণা করেছে। তাকে ঠেলে দিয়েছে মৃত্যুর মুখে।

জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার বনানীর এফ ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের ৪ নম্বর বাড়িতে থাকা রিক্রুট এজেন্সি ড্রিম হোম ট্রাভেলসের সঙ্গে বিদেশে যাওয়ার লক্ষ্যে আরমান চুক্তি করেন। শুধু তিনি একা নন, তার মতো অন্যরাও চুক্তি করে বিদেশে গেছেন।

গত বছরের ১২ অক্টোবর আরমানের সঙ্গে ড্রিম হোম ট্রাভেলসের চুক্তি হয়। আরমানসহ ১০ তরুণকে প্রথমে ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরবে পাঠায় এই রিক্রুট এজেন্সি। সেখান থেকে তাদের বিক্রি করে দেওয়া হয় রাশিয়ান একটি চক্রের কাছে। রাশিয়ায় পৌঁছানোর পর ১০ জনকে এক মাসের কমান্ডো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সুকৌশলে দুজন দেশে ফিরে আসতে পারলেও ফেঁসে যান আরমানসহ বাকি ৮ জন। তাদের জোরপূর্বক এবং মারধর করে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়।

দেশে স্বজনদেরকে আরমান মোবাইল ফোনে বলেছেন, চকলেট ফ্যাক্টরিতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে রিক্রুট এজেন্সি রাশিয়ায় পাঠিয়েছিল। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর প্রচণ্ড ভয়-ভীতি দেখিয়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়। গত ২৩ জানুয়ারি ওই যুদ্ধে স্থলমাইন বিস্ফোরণে মারাত্মক আহত হন আরমান। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন তিনি। 

আরমান দেশে স্বজনদের আরও জানান, আমরা রাশিয়ায় যাওয়ার পর সেখানকার সংশ্লিষ্টদের বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে, কর্মী ভিসায় রাশিয়ায় আমাদের পাঠানো হয়েছে। আমরা কোনো যুদ্ধে অংশ নিতে আসিনি। আমাদের সে রকম কোনো ইচ্ছেও নেই। তারপরও জোর করে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে বাধ্য করা হয়েছে। রাশিয়ান কমান্ডোরা মারধর করে যুদ্ধে নিয়ে গেছে। আমাদেরকে সামরিক পোশাক পরিয়ে হাতে অস্ত্র ও গোলাবারুদ তুলে দেওয়া হয়। রাশিয়ার কিয়েভে ড্রোন হামলা ও স্থলমাইন বিস্ফোরণ হলে আমার সামনে থাকা জিপে আটজনই প্রাণ হারান। আমি পেছনে মোটরসাইকেলে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাই। আমার একটাই চাওয়াÑ আমি এখন দেশে ফিরতে চাই।’ 

পাসপোর্টে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আরমানের জন্ম ২০০২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। রাশিয়ায় প্রশিক্ষণ শেষে তাকে যে সৈনিক নম্বর দেওয়া হয়েছে, তার একটি ছবিও পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত ছবিতে দেখা যায় তার আইডি নম্বর এ৫-১৯৭০৫৯। তিনি বর্তমানে রাশিয়ার রোস্তভ অন ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

গত বুধবার দুপুরে রাজবাড়ীর কালুখালীর মাঝবাড়ী ইউনিয়নের কুষ্টিয়াডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা আরমানের বাড়িতে গেলে এক করুণ দৃশ্য দেখা যায়। পরিবারে চলছে আহাজারি ও কান্নার রোল। তার মা সন্তান আরমানের জন্য কান্নায় বারবার ভেঙে পড়ছেন। হাতে তাসবিহ ও বুকে ছেলের ছবি জড়িয়ে ধরে আহাজারিরত মা ফাহিমা বেগম বলেন, তাদের প্রতিবেশী মৃত ফটিক মন্ডলের জামাতা বালিয়াকান্দি উপজেলার হোগলাড়াঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা আদম ব্যবসায়ী মঞ্জুরুল খান দুই বছর আগে রোমানিয়া পাঠানোর কথা বলে ৬০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। তবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে টালবাহানা করার পাশাপাশি আরমানকে রাশিয়ার চকলেট ফ্যাক্টরিতে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে। প্রায় ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে তারা তিন মাস আগে আরমানকে রাশিয়া পাঠানোর কথা বলে প্রথমে সৌদি আরব পাঠায়। সেখানে আদম ব্যবসায়ীরা আরমানকে ওমরা পালন করায়। এরপর তাকে নিয়ে যায় কাতারে। সেখান থেকে দেড় মাস আগে তাকে রাশিয়ায় নিয়ে যায়। আর রাশিয়া পৌঁছানোর পর বিভিন্ন কারখানা ও ক্যান্টনমেন্টে মালি বা বাবুর্চির কাজ দেওয়ার কথা বলে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেনা সদস্যরা তাদের প্রায় এক মাস প্রশিক্ষণ দেয়। এখন তার একমাত্র ছেলে মারাত্মক আহত হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে।

আরমান ছাড়াও নরসিংদীর তুহিন, সোহান, মোবারক, ঢাকার আমিনুল, গাইবান্ধার হুমায়ন কবির, রহমত আলী, আকরাম রয়েছে সেখানে।

স্থানীয় ইউপি মেম্বার জাহিদুল ইসলাম, আরমানের চাচা আতিয়ার রহমান, চাচি রাফেজা বেগম, দাদি রাবেয়া বেগম বলেন, আমার আরমানকে ফেরত চাই, আর অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হোক।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা