জবানবন্দিতে ছাত্রলীগকর্মী
ফেনী প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৩:৪৩ পিএম
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৩:৫৬ পিএম
৪ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে নিহত ফেনী জেনারেল হাসপাতালের সামনে আহাজারিতে এক পরিবার। প্রবা ফটো
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফেনীতে নিজে হামলায় অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ছাত্রলীগকর্মী তারেক হোসেন (১৯)। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বিকালে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত মুস্তারির আদালতে জবানবন্দি দেন তিনি।
ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগেরকর্মী তারেক হোসেনকে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) রাতে শহরের রাজাঝি দীঘির পাড় এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি ফাজিলপুর ইউনিয়নের উত্তর চাড়িপুর গ্রামের আলিমুদ্দিন এলাকার মো. নুর হোসেনের ছেলে। স্থানীয় রাজনীতিতে ফাজিলপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুল হক রিপনের অনুসারী।
গ্রেপ্তারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। পুলিশকে জানান, গত ৪ আগস্ট ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল ‘সভা’ করে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলার সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী তিন-চারশ নেতাকর্মী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলায় অংশ নেন। আসামি তারেক যে দলে ছিলেন, সে দলে অর্ণব, রাকিবসহ ৯ জন গুলি চালিয়েছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হন। আদালতে জবানবন্দিতে তিনি একই কথা বলেন। পরে আদালতের নির্দেশে আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে ফেনী মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মর্ম সিংহ ত্রিপুরা বলেন, ‘আসামি নিজে হামলায় অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন জবানবন্দিতে। এছাড়া অস্ত্র হাতে কারা ছিলেন, কারা গুলি চালিয়েছেন, কার নির্দেশে তারা এসব করেছেন, জবানবন্দিতে সব উঠে এসেছে। জড়িত বাকি ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’
পুলিশ জানায়, গত বছরের ৪ আগস্ট দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী সদর উপজেলার মহিপাল এলাকায় আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নির্বিচার গুলি ছুড়লে কলেজ শিক্ষার্থী মাহবুবুল হাসান গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাকে উদ্ধার করে ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
রাজনৈতিক আতঙ্কে মাহবুবুলকে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি না করে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে রোগীর অবস্থার অবনতি হলে ৭ আগস্ট তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে সেদিন সন্ধ্যায় মাহবুবুল মারা যান। নিহত মাহবুবুল হাসান সোনাগাজী উপজেলার চর চান্দিয়া ইউনিয়নের নোমান হাসানের ছেলে। মাহবুবুল ছাগলনাইয়ার আবদুল হক চৌধুরী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।
এ ঘটনায় নিহত মাহবুবুলের ভাই মো. মাহমুদুল হাসান বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ১৬২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয়ের ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে ফেনী মডেল থানায় মামলা করেন।
গত ৪ আগস্ট ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচার গুলি চালালে ঘটনাস্থলে এবং পরবর্তী সময়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোট ৯ জন নিহত হন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ফেনী মডেল থানায় এ পর্যন্ত ৮টি হত্যা ও ১৩টি হত্যাচেষ্টার মামলা হয়েছে।