রাজশাহী সংবাদদাতা
প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫:০২ পিএম
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫:১৮ পিএম
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ছবি : প্রবা
মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীকে উসকে দিয়ে বিএনপি ফের রাজশাহীতে জঙ্গিবাদ কায়েম করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
তিনি বলেন, ‘গত ২৯ নভেম্বর রাজশাহীতে এক কর্মী সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। সেখানে তিনি কাল্পনিক হত্যাকাণ্ডের তথ্য উপস্থাপন করেছেন। এর মাধ্যমে মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীকে উসকে দিয়ে তারা ফের রাজশাহীতে জঙ্গিবাদ কায়েম করতে চায়। মিনুর বক্তব্যে তা সুস্পষ্ট ফুটে উঠেছে।’
বিএনপির দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (০১ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিনু গত বছর এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। মিনুর বিরুদ্ধে তখন রাষ্ট্রদোহী মামলা করেছিল আওয়ামী লীগ।
সেই সময়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে রাজশাহী সিটির মেয়র লিটন বলেন, ‘২০২১ সালের ২ মার্চ রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে তারা বিভাগীয় সমাবেশ করেছিল। সেই সমাবেশ থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। তার প্রতিবাদে আমরা রাজশাহী মহানগর থেকে রাজনৈতিক প্রতিবাদ কর্মসূচি গ্রহন করি। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা করি, যা বর্তমানে চলমান।’
আওয়ামী লীগের এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, “রাজশাহীতে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে দেশে কোনো সরকার নেই। তারা বলছে ‘রাজশাহীতে সেমিফাইনাল খেলা এবং ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় ফাইনাল খেলা হবে’। তাদের এমন দুরভিসন্ধিমূলক বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে, রাজপথের আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও নাশকতার রাজনীতি বেছে নিয়েছে বিএনপি। তারা দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা রাজশাহীর বিভিন্ন ছাত্রাবাসে বিএনপি-জামায়াতের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের সমাবেশ ঘটাচ্ছে।”
আগামী ৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশ। সেখানে দলটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করলে বাধা দেয়া হবে না জানিয়েছেন রাজশাহী সিটি মেয়র লিটন। তিনি বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বিশ্বাসী। সব রাজনৈতিক দল তাদের মিছিল, সমাবেশ করবে- এটাই রাজনীতির চর্চা। রাজশাহীতে বিএনপি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করলে আমাদের বাধা থাকবে না। তবে সমাবেশের নামে সরকারবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড, শেখ হাসিনাকে নিয়ে অশোভন মন্তব্য করলে বরদাশত করা হবে না। বিএনপি অশুভ তৎপরতা চালালে তার সমুচিত জবাব দেয়া হবে।’
সাম্প্রতিক সময়ের বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য দেশকে অস্থিতিশীল করার ইঙ্গিত বহন করে। বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়। তারা অগণতান্ত্রিক পন্থায় ও প্রভু শক্তির সহায়তায় দেশের ক্ষমতা দখল করে ফের দেশকে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্রে কায়েম করতে চায়।’
এদিন বিএনপি-জামায়াত জোটের ২০০১-২০০৬ শাসনামলে ফিরে যান রাজশাহীর মেয়র। সে সময়ের দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোটের ২০০১-২০০৬ সালের দুঃশাসনের জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। তারা দেশে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস কায়েম করেছিল। তৎকালীন বিএনপি সরকারের পৃষ্ঠপোশকতায় সারাদেশে আওয়ামী লীগের প্রায় ২৪ হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়। লক্ষাধিক আওয়ামী লীগ নেতা পঙ্গু হয়েছে, তারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। হত্যা, সন্ত্রাস ও দুর্নীতি করে তারা ক্ষান্ত হয়নি। তাদের প্রত্যক্ষ মদদে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ও আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। তখন ২২ জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীকে হত্যা করে তারা, যার হোতা ছিল তারেক রহমান।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারসহ মহানগর আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতারা।