গৌরনদী (বরিশাল) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:২৫ পিএম
আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:২৫ পিএম
প্রভাবশালীদের দখলের দাপটে অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার টরকী-সাউদের খাল। খালটির বৃহত্তর ব্যবসায়ী বন্দর টরকীর বন্দর এলাকার প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ খাল দখলে নিয়ে ভরাট করে সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করেন প্রভাবশালীরা। গৌরনদী উপজেলা প্রশাসন মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) অভিযান চালিয়ে খালের মধ্যে থাকা স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়। একই সঙ্গে খাল কেটে নদীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে খালে পানিপ্রবাহ সচল করা হয়েছে।
অভিযানের নেতৃত্ব দেন গৌরনদী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাজিব হোসেন খান। টরকী-সাউদের খাল দখল নিয়ে গত ১৩ ডিসেম্বর প্রতিদিনের বাংলাদেশে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
গৌরনদী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাজিব হোসেন খান জানান, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার টরকী-সাউদের খাল প্রভাবশালীরা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করে খালটি ভরাট করেছে। ফলে খালে পানিপ্রবাহ বন্ধ হওয়ায় বোরো চাষে সেচ সংকট দেখা দেয়। খালটি দখলমুক্ত করার জন্য এক মাস ধরে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য নোটিস প্রদান, মাইকিংসহ প্রচারণা চালানো হয়। কিন্তু কোনো দখলদার স্থাপনা অপসারণ করেননি। এ কারণে গতকাল মঙ্গলবার সকালে দুটি বুলডোজার ও এক্সকাভেটর নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে প্রশাসন। এ সময় সরকারি খালের মধ্যে থাকা পাকা-আধাপাকা অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে খাল কেটে নদীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে দেওয়ায় খালে পানিপ্রবাহ শুরু হয়। তবে এক দিনে এসব অবৈধ স্থাপনা সম্পূর্ণ অপসারণ করা সম্ভব না হওয়ায় এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয়রা জানায়, আড়িয়াল খাঁর শাখা নদী পালরদী নদীর টরকী মোহনা থেকে উত্তরে প্রবাহমান প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের টরকী-সাউদের খাল। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বন্দর টরকী বন্দরের কয়েক হাজার ব্যবসায়ী মালামাল পরিবহনসহ এলাকার সুন্দরদী, টরকীরচর, বাউরগাতি, বাঘমারা গ্রামের কয়েক হাজার কৃষকের ফসল উৎপাদন ও পরিবহনে খালটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের দখলের ফলে খালটির প্রায় এক কিলোমিটার অংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। সেখানে দখলদাররা পাকা ও আধাপাকা ভবনসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ করে প্রায় দুই দশক ধরে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করে আসছেন। এতে খালটিতে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। দখলদারদের মধ্যে রয়েছেনÑ টরকী বন্দরের ব্যবসায়ী মালেক দেওয়ান, আজিজ মাল, রহুল সিকদার, রব সিকদার, মো. ফরহাদ মুন্সী, কমল রায়, শাহ আলম খান, শামীম খান, প্রয়াত মাইনুল ইসলাম, মোশারফ হোসেন, কায়েস শরীফ, জাকির শরীফসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। দখলদাররা সবাই প্রভাবশালী রাজতৈনিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মী বলে জানায় স্থানীয়রা।
মঙ্গলবার সরেজমিনে সংশ্লিষ্ট এলাকায় দেখা যায়, খালটির দুই পাশে একাধিক বুলডোজার ও এক্সকাভেটর দিয়ে অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজ চলছে। একই সঙ্গে খালের মধ্যে দেওয়া বাঁধ অপসারণ করে নদীর সঙ্গে সংযোগমুখ কেটে দিয়ে খালে পানিপ্রবাহ সচল করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে গৌরনদী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাজিব হোসেন বলেন, টরকী-সাউদের খাল ছাড়াও গৌরনদীর সরকারি সব খাল পুনরুদ্ধারে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত থাকবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু আবদুল্লাহ খান বলেন, ‘যতই ক্ষমতাধর ব্যক্তি হোক না কেন, কাউকে জনস্বার্থবিরোধী কাজ করতে দেওয়া হবে না। খালটি দখলমুক্ত ও দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’