সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মধ্যাঞ্চল
প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:০২ পিএম
গত বছর বন্যায় করিমগঞ্জ উপজেলার সুতারপাড়া ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ ও স্লুইসগেট ভেঙে যায়। এরপর আর তা সংস্কার করা হয়নি। সোমবার তোলা। প্রবা ফটো
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় গত বছরে আকস্মিক বন্যায় সুতারপাড়া বেড়িবাঁধ ও স্লুইসগেট ভেঙে যায়। এ কারণে প্রায় ২৫ হাজার একর জমি রয়েছে অনাবাদি। বাঁধ ও স্লুইসগেট মেরামত না করায় কয়েক হাজার একরের বোরো ধান নিয়ে কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন।
তারা বলেছেন, বাঁধ ও স্লুইসগেট এখন তাদের গলার কাঁটা। তাদের আশঙ্কা বোরো ধান পাকার আগেই তলিয়ে যেতে পারে। এই আশঙ্কার কথা তারা কর্তৃপক্ষকে বলেছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে বাঁধ সংস্কার ও স্লুইসগেট পুনর্নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেই।
উপজেলার সুতারপাড়া ইউনিয়নের প্রয়াগ হাওর রক্ষাবাঁধ ও স্লুইসগেট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর কৃষকরা ভেবেছিলেন দ্রুত মেরামত করা হবে। কিন্তু তা করা হয়নি। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পথে। কৃষকদের আশঙ্কাÑ পুনঃসংস্কার করা না হলে আসছে মৌসুমে হাজারো একর জমির ধান বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
ওই এলাকার রজব আলী, মোমেন মিয়া, আবুল কাসেমসহ অর্ধশতাধিক কৃষক জানান, তারা প্রতিবছর নিজেদের জমিসহ পত্তন নেওয়া জমি বন্যার আগাম পানি আসার ভয়ে চাষাবাদ না করে বসে আছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে করিমগঞ্জে ৯ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বোরো চাষে বাম্পার ফলন হবে।
ধনু নদের তীরে প্রয়াগ হাওরে কয়েক হাজার একর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। অন্যদিকে অনাবাদি পড়ে আছে প্রায় ২৫ হাজার জমি। বাঁধ ও গেট সংস্কার না হওয়ায় কৃষকরা এ জমিতে চাষাবাদের ঝুঁকি নেননি। বর্ষার আগে বাঁধ মেরামত করা না হলে বোরো ধান তলিয়ে গিয়ে কৃষকের স্বপ্নের সমাধি ঘটাবে।
কৃষক আয়াতুল ইসলাম বলেন, ‘দশ মাস আগে বন্যায় আমাদের বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। পরে আমরা কৃষকরা মিলে বস্তায় মাটি দিয়ে মেরামত করার চেষ্টা করেছি। পুনরায় জোয়ারের পানিতে আবার ভেঙে গেছে। বর্তমানে আমাদের কৃষিজমি হুমকির মুখে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড যদি বাঁধটি মেরামত করে দেয়, তাহলে এই মৌসুমে আমরা গোলায় ধান তুলতে পারব। ভয় ও আতঙ্কের কারণে আমি একই হাওরে ৮ একর জমিতে চাষ না করে অনাবাদি রেখেছি।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কৃষক ইদ্রিস বেপারি বলেন, ‘এই বাঁধের ওপর আমরা নির্ভরশীল। বাঁধ ঠিক থাকলে ফসল পাব। পরিবার নিয়ে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারব। বর্ষা মৌসুমের আগে বাঁধ ঠিক না করলে না খেয়ে মরতে হবে। ফসলি সব জমি পানিতে তলিয়ে যাবে। সরকার যদি আমাদের রক্ষা করে, তাহলে দুমুঠো খেয়ে বাঁচতে পারব। এরপরও ভয়ে কিছু জমিতে বোরো আবাদ করিনি।’
কৃষক হোসেন আলী বলেন, ‘আমরা শত শত কৃষক আশা ছাড়া ধান লাগাচ্ছি। ফসল ঠিকঠাক উৎপাদন করতে পারব কি না জানি না। কয়েকবার নিজেরা বাঁধ সংস্কার করলেও পানিতে ভেসে যায়। ব্লক দিয়ে বাঁধটি মেরামত করে দিলে এই মৌসুমে ফসল উৎপাদন করে খেয়ে-পরে বাঁচতে পারব।’
এ ব্যাপারে করিমগঞ্জের নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘বাঁধের কাজ করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। এলজিইডি কিশোরগঞ্জ বাঁধের সংস্কার না করলে পাউবো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’
কিশোরগঞ্জের এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘বাঁধ ও স্লুইসগেট পুনঃসংস্কারের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। তা অনুমোদন হলেই কাজ শুরু হবে।’