যশোর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৪৮ পিএম
খাদ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়া ৬২ রাইস মিল মালিকরা সরকারি খাদ্য গুদামে চাল দেননি। এর মধ্যে ১৬টি অটোরাইস মিল এবং ৪৬টি রাইস মিল। ফলে এ বছর সরকারি খাদ্য গুদাম গোলা প্রায় শূন্য রয়েছে। শর্ত ভঙ্গ করায় খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা এসব মিল মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে যশোরে সিদ্ধ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ২৪৭ মেট্রিক টন। এর মধ্যে চুক্তি হয়েছে মাত্র সাত হাজার ৭৭৯ দশমিক ৯৪৫ মেট্রিক টন। এ ছাড়া আতপ চালের লক্ষ্যমাত্রা ৮০১ মেট্রিক টন নির্ধারিত রয়েছে। এবার ৪৭ টাকা কেজি দরে চাল কিনছে সরকার।
মিল মালিকদের বক্তব্য, বাজারে চালের দাম অনেক বেশি। এ কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শাস্তি হিসেবে স্থগিত করা হচ্ছে ৬২ রাইস মিলের লাইসেন্স। বন্ধ করা হচ্ছে বিদ্যুৎ সংযোগও। এ লক্ষ্যে বিদ্যুৎ বিভাগকে দেওয়া হচ্ছে চিঠি। জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে মিল মালিক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় করে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেফাউর রহমান।
সূত্র জানিয়েছে, লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা থাকার পরও চুক্তি না করা সংশ্লিষ্ট মিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এই ঊর্ধ্বমূল্যের সময়ে এসব মিল মালিক কেন চাল দিচ্ছেন না তা জানতে প্রথমে ব্যাখ্যা তলব করেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক। ব্যাখ্যায় ৬২ মিল মালিকের কেউই সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। তাই শাস্তি হিসেবে তাদের মিলের লাইসেন্স স্থগিত এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া চুক্তিবদ্ধ মিলারদের যারা এখনও পুরো চাল সরবরাহ করেননি তারা দ্রুত সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সরকারি খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহের জন্য আমন মৌসুমে যশোরে চুক্তিযোগ্য মিল রয়েছে ১৬৩টি। এর মধ্যে ১০১টি রাইস মিল চাল দেবে বলে চুক্তি করে। বাকি ৬২টি রাইস মিল মালিক চাল দেবেন না বলে আগে থেকেই জানিয়ে দেন।
মিলার শর্ত না মানায় বারবার তাদেরকে নোটিস করা হয়। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোনো প্রতি উত্তর পাওয়া যায়নি। তাদের অসহযোগিতার কারণে যশোরে চাল সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে অটো মিল মালিকদের কারণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। আর যারা চুক্তি করেছেন তারা বাজারে দাম বেশি থাকার অজুহাতে পুরো চাল সরবরাহ করেননি।
খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্র জানায়, লাইসেন্স পাওয়া মিল মালিকরা সরকারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর এবং তদনুযায়ী চাল বা আটা সরবরাহ করতে বাধ্য থাকবে। ওইপত্রে আইন উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘আদেশপ্রাপ্ত হইয়া চুক্তি স্বাক্ষর না করিলে বা চুক্তি স্বাক্ষর করিয়া চাল বা আটা সরবরাহ না করিলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল এবং তিনি বা তারা আইনের ধারা ৬-এর অধীন দণ্ডিত হবেন। সরকারি নির্দেশ বা সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করায় মিলের লাইসেন্স বাতিল এবং মিলকে কালো তালিকাভুক্ত করার বিধান রয়েছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেফাউর রহমান বলেন, খাদ্য নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তরের সঙ্গে মিল মালিকরা যে চুক্তি করেছিল তা ভঙ্গ করেছে। বিষয়টি নিয়ে বারবার মিলারদেরকে নোটিস করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোনো ধরনের প্রতি-উত্তর পাওয়া যায়নি। এর ফলে জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে শর্ত ভঙ্গকারী ৬২ রাইস মিল মালিকদের লাইসেন্স স্থগিতের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। নতুন করে চুক্তিবদ্ধ হওয়া মিলাররা চাল সরবরাহে তালবাহানা করলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।